মাহজাবীন হক প্রথম বাংলাদেশি নারী, যিনি এই মহাকাশ সংস্থাটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কাজের সুযোগ পেয়েছেন।

মাহজাবীন হক নাম তার। নাসায় নিয়োগ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নারী তিনি। এদেশের নারীরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভীনদেশেও নিজেদের মেলে ধরছেন, মেধার প্রমাণ দিচ্ছেন। জানান দিচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরাও নিজগুণে অদম্য মনোবল নিয়ে বাঁধার বৃত্ত ভেঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে- পৃথিবীর যেখানেই হোক।

তবে বাংলাদেশি নারীদের এতকাল সে অর্থে পদচিহ্ন পড়েনি নাসায়। মাহজাবীন হক সেই বৃত্ত ভাঙ্গলেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নারী, যিনি এই মহাকাশ সংস্থাটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এই অর্জনের বিশেষত্ব অনেক। বাংলাদেশে এইসব দৃশ্যও খুব বেশিদিন আগের নয়, যখন বাবা মায়েরা কন্যা সন্তানকে পড়ালেখা করাতেই অনীহা প্রকাশ করতেন। করালেও উচ্চশিক্ষিত করার চিন্তা করতেন না। 'কী হবে এত পড়িয়ে, একদিন তো চুলা ঠেলা লাগবে'- এরকম মানসিকতার খোঁজ পেতে খুব প্রাচীন সময়ে যেতে হবে না। অনেকেই হয়ত এ ধরণের মানসিকতা দেখেছেনও নিজের কিংবা আশেপাশের পরিচিত পরিমন্ডলে।

যাহোক, এই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে কিছু বছর ধরেই। এখন মেয়েরা নিজের দায়িত্ব নিজেই বলে কয়ে নিচ্ছে। কেউ তাকে বোঝা ভাবলে সে পাল্টা জবাব দিচ্ছে- আই আম এনাফ টু লুক আফটার মাইসেল্ফ। কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। শহরের রাস্তায় নারীরা স্কুটি চালাচ্ছে অহরহ। তার মানে হচ্ছে, নারী এখন নিজের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি স্বাধীন হয়ে উঠছেন। ক্রমশই এই চিত্র আরো বিস্তৃত হবে বলেই মনে হয়।

মাহজাবীন হক

এমনই সময়ে নারীদের উচ্চাকাঙ্খা এবং স্বপ্নের সীমা আর বর্ধিত হয়, যখন শোনা যায় বাংলাদেশি নারী নাসায় চাকরি করছেন। মাহজাবীন হকের সাফল্যের তাই আলাদারকম গুরুত্ব একারণে যে, এখন যেকোনো বাংলাদেশি মেয়ে; যার মহাকাশ নিয়ে আগ্রহ, নাসা নামক সংস্থাটিকে আগ্রহ, সে স্বপ্ন দেখার সময় কখনো এটা ভাববে না, নাসায় চাকরি পাওয়া অসম্ভব। তার সামনে একজন মাহজাবীন উদাহরণ তৈরি করে দিয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন অসম্ভব নয় কিছুই।

যেভাবে তিনি নাসায় এই জার্নিটা সম্পর্কে একটু বলা দরকার। ২০০৯ সালে মাহজাবীন হক যুক্তরাষ্ট্রে যান। ২০১১ সাল থেকেই মোটামুটি তিনি স্থায়ীভাবেই বসবাস করছেন মিশিগানে। মাহজাবীন হক পড়াশুনা করতেন ওয়েইন স্টেইট ইউনির্ভাসিটিতে। তখনই দফায় টেক্সাসের হিউস্টনে অবস্থিত নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ইন্টার্ণশীপ করেন। প্রথমবার ডাটা এনালিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। দ্বিতীয়বার সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে নাসার মিশন কন্ট্রোলে কাজ করেন। মাহজাবীন হক এই বছরই ওয়েইন স্টেইট ইউনির্ভাসিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। তার অভিজ্ঞতা এবং স্কিল এবং আগ্রহ নিষ্ঠার জন্যে তিনি ডাক পেয়েছেন নাসা থেকে। নাসায় নিয়োগ পেয়েছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।

তিনি নাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে

মাহজাবীন হক লিখেছেন, "নাসার মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে কাজ করা আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি এমন এক জায়গায় কাজ করতে পেরে, যেখানে ইতিহাস রচিত হয়।" তিনি আরো লিখেন, "সবার জীবনে একজন হিরো থাকে। আমার জন্যে সবসময় আমার হিরো আমার মা ফেরদৌসী চৌধুরী। তিনি আমাকে সবসময়ই অনুপ্রেরণা দিয়ে বলতেন, আমি নিজের লক্ষ্য ঠিক করে যেকোনো কিছুই অর্জন করতে পারি। আমার মনে পড়ে, বড় হওয়ার সময় আমার মা সবসময় বলতেন যে উচ্চশিক্ষিত হওয়া কতটা জরুরি একজন নারীর জন্য। একজন নারীর জন্যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করাও কতটা জরুরি পুরুষশাষিত সমাজে তাও বলতেন আমার মা।" মাহজাবীন হক বলেন, নারী শিক্ষার গুরুত্ব অবর্ণনীয় এবং নারীদের সবসময়ই সাহস যোগানো উচিত যেন তারা বড় স্বপ্ন দেখতে শেখে এবং নিজের স্বপ্নকে আগলে রাখতে পারে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে মেলে ধরতে পারে ভয়হীনভাবে।

মাহজাবীন হকের নাসায় চাকরি পাওয়া যেন এক বিশেষ বার্তা- নারী বলে আলাদা যদি কেউ ভাবতে চায় তোমাকে, নারী বলে কেউ যদি তোমাকে আন্ডারএস্টিমেট করে, তো করতে দাও তাদের অমন অবহেলা। তুমি শুধু দেখিয়ে দাও, তুমি কারো চাইতে কম নও। তোমার স্বপ্ন ছোঁয়া দেখে যারা অবহেলা করত, তারা চোখ নামিয়ে নিবে গ্লানিবোধ থেকে। সেদিনটা দেখার জন্যে হলেও হাল ছেড়ো না তুমি।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা