যেখানে এত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অতিক্রম করে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যেতে হয় ক্রিকেটারদের, সেখানে এমন ক্রিকেটারও আছেন, যারা শুধু একটি নয়; দুটি দেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন তাদের ক্যারিয়ারে!

বর্তমানে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ভেবে দেখলে ক্রিকেটকে সবার উপরের দিকেই রাখতে হবে। তিনটি ভিন্ন সংস্করণের এই খেলায় অর্থ উপার্জনের যতটা সুযোগ বাড়ছে, বাড়ছে উৎকর্ষতার প্রমাণ দিয়ে পুরো বিশ্বে নিজেকে চেনানোর সুযোগও। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের এই সময়টায় একজন ক্রিকেটার শুধু নিজের দেশের সম্পদ নন, ভাল একজন ক্রিকেটার হয়ে উঠেন বিশ্বক্রিকেটের সম্পদ, প্রত্যেকটা টি-টুয়েন্টি লিগে তৈরি হয় তার ব্যাপক চাহিদা। তবে তার আগে যারা ক্রিকেট খেলেন তাদের সবারই লক্ষ থাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া।

একজন ক্রিকেটার যখন জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান, তখন তার খেলোয়াড়ি জীবন পায় পূর্ণতা। ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা একই সাথে সম্মানের এবং আবেগেরও বিষয় বটে! তবে এর জন্য পুড়তে হয় প্রচুর কাঠখড়। অনেক অনেক ম্যাচ খেলা,কঠোর অনুশীলন, একাগ্রতা এবং পারফর্মেন্স সবকিছুর সমন্বিত ফলাফলই একজন ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে খেলার ছাড়পত্র দিতে পারে।

যেখানে এত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অতিক্রম করে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যেতে হয় ক্রিকেটারদের, সেখানে এমন ক্রিকেটারও আছেন, যারা শুধু একটি নয় দুটি দেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন তাদের ক্যারিয়ারে। শুনতে অবাক করার মতো বিষয় হলেও এমনটিই ঘটেছে কয়েকজন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে।  

বিলি মিডউইন্টার (Billy Midwinter)- ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় যিনি দুইটি ভিন্ন দলের হয়ে খেলেছিলেন। ১৮৭৭ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অফিসিয়াল প্রথম টেস্ট ম্যাচে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন অস্ট্রেলিয়াকে। খেলেছিলেন মাত্র দুই ম্যাচ।

চারবছর পর তিনি খেলা শুরু করেন ইংল্যান্ডে। এখানেও তার ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি। মাত্র চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে। অতঃপর এক বছর বাদে আবার ফিরে আসেন অস্ট্রেলিয়ায়৷ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে মারা যান এই ক্রিকেটার। 

বিলি মিডউইন্টার

ইফতিখার আলী খান (Iftikhar Ali Khan Pataudi)- ইনি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ভারত ও ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। ১৯৩২-৩৩ ক্রিকেট মৌসুমে ইনি ইংল্যান্ডের হয়ে এশেজ খেলেন। সিডনিতে অভিষেক টেস্ট ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরিও করে বসেন! খেলেন ১০২ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। মজার ব্যাপার কি জানেন, এই একই ভদ্রলোক আবার ভারতের হয়ে ১৯৪৬-৪৭ সালে তিনটি টেস্টে নেতৃত্ব দেন, আর প্রতিপক্ষ কে? ইংল্যান্ড! আর তার নাতি এখন খেলছেন বলিউডে, যার নাম সাইফ আলী খান!  

কেপলার ওয়েসেলস (Keplar Wessels)- তিনি সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান খেলোয়াড়। খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া দুটি জাতীয় দলের হয়ে। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে নামেন তিনি। এরপর আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন অনেকদিন। হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট এবং ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ও! তিনি একমাত্র ক্রিকেটার যার দুটি দেশের হয়ে সেঞ্চুরি আর এক হাজার রান আছে!  

আবদুল হাফিজ কারদার (Abdul Hafeez Kardar)- ভারত পাকিস্থান চিরশত্রু ক্রিকেটে। কিন্তু, এই আবদুল হাফিজ কারদার সেই লোক যিনি ভারত, পাকিস্থান দুই দলের হয়েই ক্রিকেট খেলেছেন! ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটারের অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তিনি খেলেন তখন ভারতের পক্ষে। কিন্তু, দেশভাগের পর পর তিনি ইউটার্ণ নিয়ে পাকিস্থানের পক্ষে খেলা শুরু করেন, ১৯৫২-৫৩ সালে পাকিস্থানের প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে ভারতের বিপক্ষে খেলে আবদুল হাফিজ কারদার। এছাড়া গুল মোহাম্মদ, আমির এলাহী এরাও ভারত পাকিস্থান দুই দলের হয়ে খেলেছিলেন। 

স্যামি উডস (Sammy woods)- তাকে কেউ কেউ বলতো স্যামি অফ অল ট্রেডস। মানে জ্যাক অফ অল ট্রেডসের মতো তিনি সব কিছুই একটু একটু পারেন। তিনি একই সাথে ক্রিকেটার, আবার খেলেছেন রাগবি, শুধু তাই নয় হকি খেলাতেও ছিল তার পারদর্শিতা। তার উপর তিনি ক্রিকেট খেলেছেন দুই দেশের হয়ে। অভিষেকটা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার দলের হয়ে, তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতেও তার সময় লাগেনি। ইংল্যান্ডের জার্সিতে ১৯৯৬ সালে টেস্ট খেলেন, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া! 

বয়েড রেনকিন (Boyd Rankin)- উইলিয়াম বয়ড রেনকিন নর্দান আয়ারল্যান্ড এর ক্রিকেটার। অভিষেক হয় ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ড এর জার্সিতে। তিনি ২০০৭ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের স্কোয়াডেও ছিলেন। তবে তিনি ইংল্যান্ড এর হয়ে প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন ২০১৩ তে। নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি দিয়ে শুরুটা ছিলো,এরপর তিনি ইংল্যান্ড জাতীয় দলের ২০১৩-১৪ এশেজ সিরিজের স্কোয়াডেও ছিলেন। 

লুক রনকি(Luke Ronchi)- লুক রনকি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। বর্তমানে খেলেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে। তবে আন্তজার্তিক ম্যাচে প্রথম প্রতিনিধিত্ব করেন অস্ট্রেলিয়ান জার্সিতে। ২০০৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একটি টি-টুয়েন্টি ও চারটি একদিনের ম্যাচ খেলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। নিউজিল্যান্ড এর হয়ে তার অভিষেক হয় ২০০৯ সালে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে।

লুক রনকি

ডার্ক নেনেস (Dark Nanes)- ডার্ক পিটার নেনেস বাঁহাতি ফাস্ট বোলার যিনি আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলেছেন নেদারল্যান্ডস এবং অস্ট্রেলিয়া দুটি দলের হয়ে। ২০০৯ সালে আইসিসি টুয়েন্টি২০ বিশ্বকাপে তিনি দুটি ম্যাচ খেলেন নেদারল্যান্ডস এর হয়ে। একই বছর তার ওয়ানডে অভিষেক হয়,তবে সেটা অস্ট্রেলিয়ান জার্সিতে! 

ইয়ন মরগ্যান (Eoin Morgan)- পুরো নাম ইয়ন জোসেফ জেরার্ড মরগ্যান। জন্মসূত্রে তিনি আইরিশ। খেলেছেন আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে। ২০০৬ সালে স্কটল্যান্ড এর বিপক্ষে আন্তজার্তিক ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক হয় তার। আয়ারল্যান্ড এর হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সে ম্যাচে তবে ২০০৯ সালে তিনি জার্সি বদলে হয়ে যান ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়। এখনো ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন তিনি। এমনকি ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন এই আইরিশ ক্রিকেটার! 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা