প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এক বৃটিশ সৈনিক নাকি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক জার্মান সৈন্যের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। সেই জার্মান সৈনিকটির নাম এডলফ হিটলার! খাল কেটে কুমির আনা একেই বলে বোধহয়!
চার বছরের ছেলেটা পানিতে পড়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করেন এক ক্যাথলিক ধর্মযাজক। সাদা পোশাক পরা মানুষটার দারুণ ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিল ছোট্ট ছেলেটা, আর কৃতজ্ঞতাবশত ঠিক করেছিল বড় হলে সেও এমন ধর্মযাজক হবে। সেই ছেলেটাই বড় হয়ে ১৯৩৯ সালে মনোনীত হয়েছিল নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্যে!
সমাজ-সংসারে পরোপকার আর মহানুভবতার দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা কোন সাধুপুরুষের ছবি চোখে ভাসছে নিশ্চয়ই! ভাবনার গতিকে লাগাম দিন, সুন্দর সকাল সবসময় দারুণ একটা দিনের নিশ্চয়তা দেয় না। এই মানুষটার নাম অ্যাডলফ হিটলার, নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে লাখো মানুষের রক্ত লেগে আছে যার নিষ্ঠুর হাতে। হিটলার সম্পর্কে অন্তর্জালের কল্যানে অনেকেই অনেক কিছু জানেন, অনেকে জানেন না। যারা জানেন, তাদের ধন্যবাদ। আর যারা জানতে চান, তাদের জন্যেই এই আয়োজন।
১. জন্মের পর হিটলারের নাম প্রথমে রাখা হয় অ্যাডলফ শিক্লগ্রাবার, ১৮৯৭ সালে তার পিতা নামের শেষ অংশ পরিবর্তন করে রাখেন অ্যাডলফ হিটলার। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে, হিটলার নামটা উচ্চারণ করে দুটো মন্দ কথা বলা যতটা সহজ, শিক্লগ্রাবার উচ্চারণ করা ততটাই কঠিন, দাঁত ভেঙে যাবার দশা!
২. হিটলারের কঠিন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছিল। তিনি নানারকমের প্রায় আটাশটি ঔষধ প্রতিদিন সেবন করতেন বলে কথিত আছে। ঘন ঘন বায়ুদূষন নিয়ে হিটলারের আড়ালে তার মন্ত্রীসভার সদস্যরা মজা করতেন নিজেদের মধ্যে।
৩. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এক বৃটিশ সৈনিক নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক জার্মান সৈন্যের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, এই জার্মান সৈনিকটি ছিলেন হিটলার। খাল কেটে কুমির আনা একেই বলে বোধহয়!
৪. এই বিষয়টা একটু বিব্রতকর, তাও লিখছি। দুনিয়াতে আর কোন ব্যক্তির টেস্টিস নিয়ে এতো গবেষনা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই; তো, গবেষকেরা প্রমাণ পেয়েছেন, এই লোকের টেস্টিস নাকি একটা ছিল। আমি ভাবি, একটা নিয়েই দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন মানুষটা, দুটো থাকলে তো পুরো ধ্বংস করে ফেলতেন বোধহয়!
৫. হিটলার যখন ছোট ছিলেন, তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তখন মোটেই ভালো ছিল না। এক অস্ট্রিয়ান ইহুদী ডাক্তার বিনা পয়সায় তাদের চিকিৎসা সেবা দিতেন। হিটলার ইহুদী নিধনে নামলেও সেই ডাক্তার ও তার পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন বলে জানা যায়। ডাক্তার সাহেবকে নাকি তিনি "ভালো ইহুদী" বলে ডাকতেন!
৬. ১৯৩৯ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্যে মনোনীত হবার কথা তো শুরুতেই বলে হয়েছে। যদিও পরে সেটা বাতিল করা হয়। নোবেল কমিটির রসবোধ সেই আদিকাল থেকেই ভালো, হিটলার জায়গা পেয়েছিলেন, ওবামা পেয়েছেন, কোন একদিন ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়ে গেলেও অবাক হবো না।
৭. আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিস সিআইএ হিটলারের খাবারে ফিমেল হরমোন মিশিয়ে হিটলারের স্বভাবে মেয়েলিপনা আনার চেষ্টা করেছিলো বলে গুজব আছে। তবে কাগজে কলমে এর কোন ভিত্তি নেই।
৮. ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাদের "ম্যান অব দ্যা ইয়ার" খেতাবে ভূষিত করেছিলো অ্যাডলফ হিটলারকে, তিনি তখনও নিজের রক্তপিপাসু স্বত্তাটির জানান দেননি।
৯. আমেরিকা-বৃটেন-রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে যুদ্ধের ময়দানে কুপোকাত করলেও, হিটলার ভীষন ভয় করতেন বিড়াল নামে ছোট্ট প্রাণীটাকে। এমনকি আলেকজান্ডার দি গ্রেট, নেপোলিয়ন, মুসোলিনি এদেরও নাকী বিড়ালে ভয় ছিল। কেমন অদ্ভুত শোনায় না? ভয়ঙ্কর এক খুনী, যার আঙুলের ইশারায় ঝরে যাচ্ছে হাজার-লক্ষ নিরপরাধ প্রান, সেই লোকটা সামান্য বিড়ালের ভয়ে কাঁচামাচু!
১০. হিটলারের ইচ্ছা ছিল ইহুদী জাতিটাকে বিলুপ্ত করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী নিয়ে একটা জাদুঘর বানাবেন। ইহুদীদের তিনি শুধু জাদুঘরেই ঠাঁই দিতে চেয়েছিলেন, আর কোথাও নয়!
১১. অ্যাডলফ হিটলার আর ওসামা বিন লাদেনের মধ্যে একটা মিল আছে। দুজনেই অফিশিয়ালি মৃত ঘোষিত হয়েছিলেন মে মাসের এক তারিখে।
১২. ১৯১৩ সালে হিটলার, জোসেফ মার্শাল টিটো, জোসেফ স্ট্যালিন, লিওন ট্রটস্কি এবং সিগমুন্ড ফ্রয়েড- এরা সবাই ভিয়েনায় কয়েক বর্গমাইল এলাকার মধ্যেই বসবাস করতেন। কয়েকজনের তো একই পানশালায় যাতায়াতের সুবাদে নিজেদের মধ্যে দেখাও হতো নিয়মিত।
১৩. হিটলার কখনও গাড়ি চালানো শেখেননি, তিনি ব্যাপারটাকে যথেষ্ট কঠিন মনে করতেন। কিন্ত ভক্সওয়াগন গাড়ির আধুনিকায়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
১৪. হিটলার ক্ষমতায় থাকাকালে প্রত্যেক নবদম্পতির বিয়ের অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকে তার আত্মজীবনী "মেইন ক্যাম্ফ" বইটি উপহার দেয়া হতো। হয়তো এভাবেই হিটলার তার উগ্র জাতীয়তাবাদ জার্মানী জুড়ে ছড়াতে চেয়েছিলেন।
১৫. হিটলার নিজেকে যথেষ্ট সুদর্শন মনে করতেন, ভুগতেন আত্মতুষ্টিতে। তাই সর্বদা নিজেকে সিঙ্গেল দাবী করতেন জনসম্মুখে। এমনকি হিটলারের পতনের অনেকটা সময় পরেও তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউন সম্পর্কে জানতেন না অনেকেই।
১৬. হলোকাস্ট (ইহুদীনিধন) শুরুর আগে হিটলার মিত্রবাহিনীকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার নিয়ন্ত্রনে থাকা এলাকায় আটকে পড়া ইহুদীদের শরনার্থী হিসেবে অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে দেবার। হিটলারের ইচ্ছে ছিলো ইহুদীবিহীন একটি ভূখণ্ডের, তার চোখে ইহুদী সবাই ছিলো ক্রিমিনাল! কিন্ত ফ্রান্সের এভিয়ান-লেইস-বেইনসে ১৯৩৮ সালের ১৫ই জুলাই অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট সহ বিশ্বনেতারা কোন সমাধানে আসতে পারেননি এই বিষয়ে। সেদিন কেউ সাহস করে এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়ার কথা ভাবলেও হয়তো হিটলার নামের মস্তিস্কবিকৃত খুনীটার হাত থেকে বেঁচে যেত অজস্র প্রাণ!
১৭. মিত্রবাহিনীর সেনারা যখন জার্মানীতে অবতরণ করে, হিটলার তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। তার জেনারেলদের কেউ সাহস করেননি ঘুম ভাঙিয়ে এই খবরটা হিটলারকে দিতে! আর তার অনুমতি ছাড়া মিত্রবাহিনীকে প্রতিরোধ করার মতো সৈন্য পাঠানোর এখতিয়ারও কারো ছিলো না।
১৮. হিটলার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেননি। প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে তিনি হেরে গিয়েছিলেন, তবে নাজী বাহিনী কোয়ালিশন সরকার গঠন করে ক্ষমতায় আসে, আর জার্মানির চ্যান্সেলর হন হিটলার।
১৯. ১৯৩৯ সালে হিটলারের লণ্ডনপ্রবাসী ভাগ্নে এক পত্রিকায় একটি কলাম লিখেন, 'কেন আমি আমার মামাকে ঘৃণা করি' শিরোনামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে হিটলারের নির্দেশে জার্মান বোমারু বিমান লণ্ডনে সেই ভাগ্নের বাড়ী লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেছিলো।
২০. লক্ষাধিক নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে যার নির্দেশে, সেই হিটলার কখনও ইহুদী নির্যাতনের বধ্যভূমি বলে পরিচিত কোন নাৎসী কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প পরিদর্শন করেননি, একটিও না।
২১. আত্মহত্যার আগে হিটলার তার পোষা কুকুরকে সায়ানাইড পিল খাইয়ে মেরে ফেলেছিলেন, কুকুরটির পাঁচটি বাচ্চাকে খুন করেছিলেন গুলি করে। মৃত্যুর মাত্র ঘন্টা চল্লিশেক আগে প্রেমিকা ইভা ব্রাউনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
১৮৮৯ সালের ২০শে এপ্রিল জন্ম, ১৯৪৫ সালের ৩০শে এপ্রিল মৃত্যু, আর শেষ ছয়টি বছরে হিটলার মৃত্যুর কারন হয়েছেন লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষের। পৃথিবীজুড়ে ঘৃণা আর হিংসার বীজ ছড়িয়ে দেয়া এই মানুষটার মৃত্যু নিয়েও আছে কত জল্পনা কল্পনা! কেউ কেউ বিশ্বাস করে হিটলার মরেননি, আত্মগোপন করেছেন শুধু! আসলে হিটলাররা শারীরিকভাবে মরে গেলেও, তাদের হিংস্র চেতনা বোধহয় কখনোই মরে না, অন্য কারো মধ্যে স্থানান্তরিত হয় মাত্র। হিটলার তো আগেও ছিলেন, এ যুগেও আছেন; যাদের নৃশংসতার বলি হয়েছি একাত্তরে আমরা। এখন হচ্ছে ইরাক-আফগানিস্তান-ফিলিস্তিন-লিবিয়া আর সিরিয়ার নিরীহ মানুষগুলো।
ফ্যাক্টস্লাইডসডটকম অবলম্বনে
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন