এইচএসসি পাশ করার আগেই অক্সফোর্ডের অন্দরমহলে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
অক্সফোর্ড অথবা ক্যামব্রিজে উচ্চশিক্ষার জন্যে যাওয়ার স্বপ্ন আমাদের অনেকেরই। কিন্তু আপনি কি জানেন, এইচএসসি পাশ না করেও ভর্তি হওয়া যায় দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে? যদি না জেনে থাকেন, তাহলে রেসিডেন্সিয়াল মডেলের ছাত্র ইত্তিহাদের এই গল্পটা আপনার জন্যে...
কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের বেশ আলাদা রকমের আকর্ষণ আছে। যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেশ একটু আগ্রহী, তাদের কাছে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ স্বপ্নেরই ঠিকানা। মনে মনে সবাই-ই চায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ছত্রছায়ায় আশ্রয় পেতে। নামের সাথে এসব প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার আকাঙখা অনেকেরই৷ সেজন্যে আদাজল খেয়েও পড়াশোনা করতে দেখেছি অনেককে৷ এটাও অনেকে বিশ্বাস করেন, অক্সফোর্ডে ক্যামব্রিজে ভর্তির আবেদন করার আগে বিস্তর পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু যদি আমি এখন বলি- এইচএসসি পাস না করেই চাইলে অক্সফোর্ডে ভর্তি হওয়া সম্ভব, তাহলে বেশ কয়েকজন তেড়েফুঁড়ে আমার দিকে চলে আসতেই পারেন। কিন্তু তেড়ে আসার আগে জানিয়ে দিই, এইচএসসি পরীক্ষা না দিয়েই সম্ভব অক্সফোর্ডে ভর্তি হওয়া। যেই কাজটিই সম্প্রতি করেছে বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থী৷
আহমেদ ইত্তিহাদ ছিলেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র। সেখান থেকে সরাসরি চলে এসেছে সে অক্সফোর্ডে৷ যদিও শুনতে যতটা সহজ মনে হয়, বিষয়টি ততটা সহজ ছিলো না। ইত্তিহাদ টানা এক বছর ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো অক্সফোর্ডের জন্যে। অক্সফোর্ডে ভর্তি পরীক্ষার আগেই উচ্চমাধ্যমিকের সমমান হিসেবে স্যাট (স্কলাস্টিক অ্যাপটিটিউড টেস্ট) শেষ করে সে। এরপর ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে ঢাকার একটি স্কুল থেকে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পরে ডিসেম্বরে হয় মৌখিক পরীক্ষা। সেখানেও উতরে যায় ইত্তিহাদ। জানুয়ারিতে সে জানতে পারে, কাগজে-কলমে অক্সফোর্ডের ছাত্র হয়ে গিয়েছে সে৷ এরপর টোয়েফল সম্পন্ন করে নেয়৷ এতকিছু করার পরে দেখা যায়, একাডেমিক ক্যালেন্ডারের এইচএসসি'টাই দেয়া হয়নি তার!
তবে এইচএসসি না দেয়া ইত্তিহাদ যে প্রখর মেধাবী, এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই৷ চতুর্থ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় গণিত উৎসবে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে ফার্স্ট রানারআপ হয়েছিলো সে। পরের বছর প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়নস হয় ইত্তিহাদ। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় চারবার। ২০১৯ ও ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। এ বছর পেয়েছে রৌপ্যপদকও। সুতরাং ইত্তিহাদের ঈশ্বর-প্রদত্ত প্রখর প্রতিভা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। থাকা উচিতও নয়৷
এখন সে অক্সফোর্ডের ক্যাম্পাসেই আছে। এখানের পড়াশোনা একটু ব্যয়বহুল। তাই সে আবেদন করেছিলো রিচ অক্সফোর্ড স্কলারশিপের জন্যে। পেয়েছে সেটিও। অক্সফোর্ডে সে এখন আছে বিনা পয়সাতেই। পড়াশোনাও করবে বিনা পয়সাতে। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেছিলো সে। কিন্তু সফল হয়নি। এরপরেও সে হাল না ছেড়ে দিয়ে চেষ্টা চালিয়েছে, নিজের মত করে। যেটারই প্রতিফলন সে দেখতে পাচ্ছে এখন।
এখানে একটা শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, ইত্তিহাদের পরিবার তাকে কখনোই জোর-জবরদস্তি করতো না পড়াশোনার ব্যাপারে। ইত্তিহাদ তাই তার ইচ্ছেমতো পড়াশোনার সুযোগটিই পেয়েছে সবসময়ে। তারই ফলশ্রুতিতে সে এখন বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সুতরাং পড়াশোনার চাপ না দিলেও যে ছেলেমেয়ে অসাধ্যসাধন করতে পারে, এইচএসসি পাশ না করেও অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থী হতে পারে... এই বিষয়টুকু থেকে বোঝার আছে অনেক কিছু। আশা করি বর্তমানের অভিভাবকেরা বুঝবেনও বিষয়টি। এই লেখা পড়ে যদি একজন অভিভাবকেরও মনোভাব পালটায়, তাহলেই লেখা সার্থক
ইত্তিহাদের জন্যে শুভকামনা...
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন