সবাই দেখে সাফল্য, সবাই হাততালি দেয় সাফল্যতে। আমি খুঁজে ফিরি সাফল্যের পেছনের কষ্টের সময়টা। সেই অদ্ভুত সময়টা, যার অবদান হয়ত সবচেয়ে বেশি আজকের সাফল্যের মুহূর্ত তৈরিতে...

গত পরশু বিশ্বকাপ জেতার কয়েকদিন আগেই ক্যাপ্টেন আকবর আলী হারিয়েছিলেন তার বোনকে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান তিনি। আকবরের পরিবার তার কাছ থেকে খবরটি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও কোনভাবে জেনে যান তিনি। এর মাঝেই একের পর এক শট খেলে গেছেন, ইন্ডিয়ান প্লেয়ারদের স্লেজিং এই মানুষটাকে এক মুহূর্তের জন্য অমনোযোগী করতে পারেনি। তিনি জাস্ট সততার সাথে নিজের কাজটা করে গেছেন। ফলাফল এখন সবার চোখের সামনে।

কোরিয়ান ডিরেক্টর বং জুন হো যখন প্রথম 'দ্যা হোস্ট' সিনেমাটা নির্মাণের কথা ভাবেন, বেশিরভাগ মানুষই বলেছিল এটা কোরিয়ার মত ইন্ডাস্ট্রিতে করা প্রায় অসম্ভব। সাগর থেকে এক দানব উঠে এসে মানুষের জীবন তছনছ করে দিচ্ছে, এই জিনিসের গ্রাফিক্স ঠিকঠাক পর্দায় তুলে না আনলে একদম হাস্যকর হবে।

বং জুন হো যে কাঁচা কাজ করার মানুষ না, সেটা মানুষজন টের পেয়েছিল তখন যখন তিনি এই সিনেমার গ্রাফিক্সের জন্য নিউজিল্যান্ডের সেই কোম্পানির কাছেই গিয়েছিলেন, যারা লর্ড অফ দ্যা রিংস এর সিনেমার গ্রাফিক্স করেছিল! কিন্তু বিধি বাম! শিডিউল জটিলতার কারণে শেষ মুহূর্তে সেই কোম্পানির সাথে তার আর কাজ করা হয়ে উঠেনি।

কোরিয়ান পরিচালক বং জুন হো

আমাদের বং জুন হো দমে যাননি তাতে। সানফ্রান্সিসকোর আরেক কোম্পানিকে দিয়ে এই সিনেমার কাজ করান। কোম্পানির নামটা বেশ অদ্ভুত- দ্যা অরফানেজ। যেই কোম্পানির নামের অর্থে এতিমখানা আছে, সেই কোম্পানির কাজের কারণে নির্মিত দ্যা হোস্ট সিনেমার টিকেট সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিল। তারান্তিনোর পছন্দের তালিকায় আছে এই সিনেমা। আর গতকালএই সিনেমার ডিরেক্টর কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মত জিতে নিলেন অস্কার। দর্শক আসনে ছিলেন তারান্তিনো।

বড় ভাই রিভার ফিনিক্স খুব চাইতেন যেন ছোট ভাইটা অভিনয় করে। নিজেও অভিনয় করতেন। তবে ড্রাগের ওভারডোজের কারণে মাত্র ২৩ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানান তিনি। মারা গিয়েছিলেন আরেক বিখ্যাত অভিনেতা জনি ডেপের নাইটক্লাব 'দ্যা ভাইপার রুম' এর সামনেই। ছোট ভাই সেদিন অনেক চেষ্টা করেও ভাইকে বাঁচাতে পারেননি। তবে ভাইয়ের ইচ্ছেটা পূরণ করেছিলেন একের পর এক দুর্দান্ত রোলে অভিনয় করে।

জন্মের পর থেকে পিঠের একটি হাড় আরেকটি হাড়ের চেয়ে একটু বেশিই বাঁকা ছিল। এর জন্য কম কথা শুনতে হয়নি তাকে। অথচ ৫২ পাউন্ড ওজন কমিয়ে খালি গায়ে ব্যাকশটে যখন তিনি নিজের শরীর দেখাচ্ছিলেন, এই বাঁকা হাড়ের কারণেই সেই দৃশ্য হয়ে উঠেছিল আরও বেশি রিয়েলিস্টিক। এই অভিনেতার নাম হোয়াকিন ফিনিক্স, জোকার সিনেমার জন্য যিনি আজ সেরা অভিনেতার অস্কার পেলেন।

সবাই দেখে সাফল্য, সবাই হাততালি দেয় সাফল্যতে। আমি খুঁজে ফিরি সাফল্যের পেছনের কষ্টের সময়টা। সেই অদ্ভুত সময়টা, যার অবদান হয়ত সবচেয়ে বেশি আজকের সাফল্যের মুহূর্ত তৈরিতে...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা