সম্পর্কে তারা পিতা-পুত্র, ধমনিতে বইছে একই রক্ত। বাবা ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা, ছেলেও হেঁটেছেন পিতার পথেই। দুজনের জন্মদিনটাও এক! ১৯৪৪ সালের এই দিনে জন্ম হয়েছিল আলী যাকেরের, ১৯৭৮ সালের একই দিনে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন ইরেশ!
আজ রবিবারের বড় চাচা কিংবা বহুব্রীহির মামা হিসেবে দর্শকদের কাছে অধিক পরিচিত তিনি। তবে এই দুই ধারাবাহিকেই নয়, অভিনয়ে তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সব মাধ্যমেই। মঞ্চে উনার নাম থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। বিখ্যাত নুরুলদীনের সারাজীবন থেকে দেওয়ান গাজীর কিসসা, গ্যালিলিও সবখানেই আছেন স্বমহিমায়। সিনেমাতেও রেখেছিলেন সুঅভিনয়ের ছাপ, তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কিংবদন্তি আলী যাকের।
১৯৭২ সাল, মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর। মঞ্চ নাটকের জন্য ছিল শুভ সূচনার বছর। মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় আরন্যক নাট্যদলের হয়ে মুনির চৌধুরীর 'কবর' এর মঞ্চায়নে প্রথম অভিনয় করেন। এর কিছুদিন পরেই যোগ দেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে, আতাউর রহমানের নির্দেশনায় অভিনয় করেন 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো' তে, পরের বছরেই নিজে নির্দেশনা দেন 'বাকি ইতিহাস' নাটকে, যেটা ছিল অর্থের বিনিময়ে প্রথম প্রদর্শিত নাটক। একে একে যুক্ত হয় দেওয়ান গাজীর কিসসা, গ্যালিলিও, ম্যাকবেথের মত নাটক। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনা দেন নুরুলদীনের সারাজীবন, অচলায়তন সহ বেশ কিছু নাটক।
মঞ্চে অভিনয়ের পাশাপাশি নিয়মিত হন টিভি নাটকে। হুমায়ূন আহমেদের 'বহুব্রীহি' তে মামার চরিত্রে অভিনয় করে পুরো বাংলাদেশে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন, পুরো ধারাবাহিকে তার কান্ড কারখানায় দর্শকরা দারুণ মজা পেতেন। বহুব্রীহির আগেই হুমায়ূন আহমেদের 'একদিন হঠাৎ' নাটকে অভিনয় করেছিলেন, আজ রবিবারের 'বড় চাচা' হচ্ছে টিভি নাটকে উনার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র। যতদিন যায় এই চরিত্র আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আরো অভিনয় করেন অচিন বৃক্ষ, ঘোড়সরয়ারের স্বপ্ন, পিছুটান, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, বাবা ও ঈদ, পাথর সময়, গনি মিয়ার পাথর, স্পেশাল গেস্ট, আইসক্রিম, ভালোবাসি তাই সহ নানা নাটকে।
সিনেমায় অবশ্য অল্প সংখ্যক অভিনয় করেছেন। মোরশেদুল ইসলামের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'আগামী' তে রাজাকারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তানভীর মোকাম্মেলের নদীর নাম মধুমতির রাজাকার মোতালেব মোল্লার চরিত্রে দারুন অভিনয়ে সবার প্রশংসা পেয়েছিলেন, আফসোস তখন খল চরিত্রে আলাদা করে জাতীয় পুরস্কার দেয়া হত না, তাই পাওয়া হয়নি। লালসালু, রাবেয়া ছবিতেও অভিনয় করেছেন।
ব্যক্তিজীবনে মঞ্চে অভিনয় করতে গিয়েই বিয়ে করেন অভিনেত্রী সারা যাকেরকে। অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক এর কর্ণধার তিনি, কলামিস্ট ও। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদক অর্জন করেন।
আলী যাকের এর ছেলে হিসেবে অভিনয়ে আসেন এই সময়ের অন্যতম আলোচিত অভিনেতা ইরেশ যাকের। তবে বাবা-মায়ের পরিচিতি ছাপিয়ে দর্শকদের কাছে নিজ গুণে পরিচিত হয়েছেন। বাবা ও ঈদ, এক্স ফ্যাক্টর, ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই, ইট কাঠের খাঁচা, আমাদের গল্প, ভালোবাসার পঙ্কতিমালা, পাঞ্চ ক্লিপ, ফিরে এলো রুপবান, আবার তোরা সাহেব হ, ছেলে দেখা সহ অনেক নাটকেই অভিনয় করেছেন, দেশ টিভিতে রম্য শো উপস্থাপনা করতেন। সিনেমায় অভিনয় করেন প্রথম 'চোরাবালি' সিনেমায়, তবে একেবারেই স্বল্প সময়ের জন্য। নিজেদের প্রযোজিত 'ছুঁয়ে দিলে মন' এর জন্য খল অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান। দেবী, স্বপ্নজালেও ছিলেন খল অভিনেতা হিসেবে।
১৯৪৪ সালের আজকের এইদিনে জন্মগ্রহণ করেন পিতা আলী যাকের, ১৯৭৮ সালের একইদিনে জন্মগ্রহণ করেন পুত্র ইরেশ যাকের। দুইজনেরই আজ জন্মদিন, রইলো শুভকামনা।
শুভ জন্মদিন, আলী যাকের ও ইরেশ যাকের।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ডেইলি স্টার
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন