অন্যান্য টিনএজারের মতো তার জীবন নয়। অন্য সবাই নিজ নিজ সোশ্যাল লাইফ নিয়ে ব্যস্ত এলিজা তখন নিজের ভবিষ্যৎ মিশন নিয়ে চিন্তায় মগ্ন...

তার নাম এলিজা কার্সন। বয়স খুব একটা বেশি নয়, সবে মাত্র আঠারো। কবি সুকান্ত চেয়েছিলেন পৃথিবীর বুকে আঠারো আসুক নেমে। কিন্তু, এলিজা কার্সন পৃথিবীর বুক থেকেই যে হারিয়ে যেতে চায় আঠারো বছর বয়সেই। পৃথিবীতে নেমে আসা নয়, মঙ্গলের বুকেই হারাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঠারো বয়সী তরুণী এলিজা। যদিও, মঙ্গলের পথে একমুখী যাত্রা এখনি শুরু হবে না, এই না ফেরার যাত্রা কিংবা নতুন গ্রহে পদার্পণের যাত্রার শুরু হবে ২০৩৩ সালে। তবে এই জন্যে তাকে নিতে হয়েছে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত।

এলিজা নাসার কনিষ্ঠ সদস্য। নাসার মঙ্গলের অভিযানে যাওয়ার পর পৃথিবীতে আর ফেরা হবে এই কঠিন সত্য সে মেনে নিয়েছে। ফলে তাকে কিছু শর্তে রাজি হতে চেয়েছে। নাসার সাথে সে একটি নিষেধাজ্ঞাপত্রে সিগনেচার দিয়েছে যেখানে তাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয়েছে, সে বিয়ে করতে পারবে না। কোনো প্রকার যৌন সম্পর্ক কিংবা সন্তান ধারণের মতো কোনো কাজ করবে না সে। এই বয়সী একটি মেয়ের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিনই বটে। পুরো জীবন যার সামনে পড়ে আছে, সে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে?

এলিজা কার্সন, কৈশরের ছবি

এলিজার ব্যাকগ্রাউন্ড যদি বলি, তিনি জানেন না কে তার মা। বাবার কাছেই বেড়ে ওঠা তার। বাবাই তাকে আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ১২ বছর বয়সে এলিজা সবচেয়ে কম বয়েসী হিসেবে আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসার তিনটি ভিন্ন স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেন। এই ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা তার মনোজগতে প্রভাব রাখে। মহাকাশ সম্পর্কে তার অগাদ কৌতুহলের জন্ম হয়। মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগনাসের সহযোগিতা তাকে নিজের জীবনের লক্ষ্য নতুন করে চিনতে শিখিয়েছে। একারণেই হয়ত, এই গ্রহের ওপারে যে রহস্য, মঙ্গলজয়ের যে বাসনা, বিজ্ঞানীদের অনবরত যে চেষ্টা তাতে সে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে।

ক্যাম্পগুলোতে থাকার সময় এলিজা শিখেছে মহাকাশ সম্পর্কিত জ্ঞান। জেনেছে মহাকর্ষ বিহীন স্থানে কিভাবে চলতে হয়। রোবোটিকস বিষয়েও সে শিক্ষা নিয়েছে। এমনিতে নাসা সাধারণত ১৮ বছর হবার আগে কাউকে নভোচারী হবার সুযোগ দেয় না। এলিজা সেই সুযোগ পেল। নাসাও চেয়েছে মঙ্গল অভিযান এবং মঙ্গলের বুকে প্রাণের বসতি গড়বার সে নিরন্তর চেষ্টা সেই মিশনে এলিজা প্রস্তুতি গ্রহণ করুক সময় নিয়েই।

মঙ্গল থেকে জীবিত ফেরা না-ও হতে পারে এলিজার

২০৩৩ সালে যখন নাসার অভিযান শুরু হবে, তখন এলিজার বয়স হবে ৩২, সেই মুহুর্তে এলিজা মোটামুটি এমন অভিযানে যাওয়ার জন্য বেশ উপযুক্তই হবেন। এলিজা প্রথম মানবসন্তান হয়ে মঙ্গলের বুকে পা রাখবেন। সেখানে তিনি দুই তিন বছর ধরে বিভিন্ন এক্সপিরিমেন্ট চালাবেন। খাদ্য উৎপাদন করার চেষ্টা চালাবেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানোর কাজ করবেন। মঙ্গলের বুকে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজবেন, সম্ভাবনা খুঁজবেন। তিন বছর বয়সে 'দ্যা ব্যাকইয়ার্ডিগানস' কার্টুন দেখে মহাকাশ সম্পর্কে যে আগ্রহের জন্ম হয়েছিল, বেঁচে থাকলে আর এক যুগের কিছু সময় পর এলিজা সেই স্বপ্নের ভ্রমণে যাবেন। সে লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন। ট্রেইনিং নিচ্ছেন, বিভিন্ন স্কিল শিখছেন।

এই মিশনটা অত্যন্ত আনপ্রেডিক্টেবল হবে হয়ত। এলিজা তাই নিজের জীবনের সাথে জড়াননি কাউকে। কোনো সম্পর্কে তিনি দায়বদ্ধ নন। অন্যান্য টিনএজারের মতো তার জীবন নয়। অন্য সবাই নিজ নিজ সোশ্যাল লাইফ নিয়ে ব্যস্ত এলিজা তখন নিজের ভবিষ্যৎ মিশন নিয়ে চিন্তায় মগ্ন। তার কথা হলো, "যেখানে আমি যাব সেখানে আগে কেউ যায়নি। এটা ডেঞ্জারাস মিশন। তাই পৃথিবীতে কাউকে ভালবাসার পিছুটান রাখা এই মিশনের জন্য ডিস্ট্রাকশন।" এলিজার মনযোগ কতটা এই মিশনের ভেতরে তা নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা