হে আনন্দবাজার, কারও খয়রাতির টাকায় বাংলাদেশ চলে না!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
লাদাখ নিয়ে ভারত-চীন সম্পর্ক বেসামাল। এমন সময় ভারতীয় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলেছে, চীন নাকি বাংলাদেশে খয়রাতির টাকা ঢালছে!
ইন্ডিয়াতে আমপান যে রাতে আঘাত হানলো, আমরা সে রাতে সারারাত জেগে কোলকাতার খবর নিয়েছি। আনন্দবাজারের লাইভে কোলকাতার তাণ্ডব দেখেছি, ধ্বংস দেখেছি। অগণিত ছবি শেয়ার হয়েছে আমাদের বাংলাদেশের ফেসবুকে। আমাদের মেজোরিটি ইনভলভ ছিল সেই শোক পালনে।
ওপারে যত পরিচিত মানুষ ছিল, তাদের খবর নিয়েছি। তারা কেমন আছে জেনেছি। আমার একই ভাষায় কথা বলা মানুষগুলাকে আমরা তো কখনও আলাদাভাবে দেখিনি।
গতকাল আনন্দবাজার খুব জঘন্য একটা নিউজ করলো। চীনের খয়রাতের টাকা পেয়ে আমরা চীনের কাছে ঘেঁষছি এমন ইংগিত করে। ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। সেই নিউজ আনন্দবাজার একাধিকবার শেয়ার করেছে। জি নিউজ সহ অন্য সব পোর্টাল সেটা নিয়ে রীতিমত ফাইজলামি করেছে। আমাদের মেইনস্ট্রিম সেটাকে আনএক্সপেক্টেড বলেছে।
মমতা নামের আপনাদের যে নেত্রী আছে, তিনি আমাদের তিস্তার পানি দেননি। তবুও তাকে আমরা এই করোনা এবং আমপানের সময়ে প্রচুর পজেটিভ বলেছি। তার একটিভিটি দেখে খুশি হয়েছি।
দুইটা দেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা আলাদা ভাবিনি। শিল্প সাহিত্যকে আলাদা ভাবিনি। যতটা স্পেস আমরা পাইনি তারচেয়ে হাজারগুন বেশি দিয়েছি। ইভেন আমি অনেকের কাছে আক্ষেপ করেও বলেছি কোলকাতার মতো আমরা ক্রিয়েটিভ না। আমরা বিনোদনের জন্য যা যা দেখেছি, স্বীকার করেছি।
মুম্বাই দিল্লি তো অনেক দূর। আমার কাছে বিদেশের মতো। অথচ কলকাতা তো এখনও ঘরের মতোই, তাই না? ইভেন আমাদের রক্ত মাংসও আলাদা না। একভাবে খাই, এক ভাষায় কথা বলি, একই অভিব্যক্তিতে মন খারাপ করি।
রবীন্দ্রনাথকে কখনও আলাদা ভাবিনি। সমরেশকে না, সত্যজিৎকে না, অঞ্জন দত্তকে না। কাউকেই না। আপনারা এদেশে কাজ করতে এসে কারও দাদার বাড়ি বরিশালে, কারও নানা বাড়ি ময়মনসিংহে এসব বলেছেন। আমরা শুনে আহ্লাদে গদগদ হয়েছি।
দুটো দেশের সরকার পজেটিভ ছিলো নিজেদের প্রতি। বন্ধু রাষ্ট্রের ট্যাগ ছিলো। অথচ আমরা দেখেছি আমরাই শুধু ঠকেছি। সীমান্তের হত্যার হিসেব মেলাতে পারিনি কখনও। বন্ধু-বন্ধুতে বসার সুযোগ ছিল অনেক। আমরা বসিনি, গুলি থামেনি।
ফিনানশিয়াল কন্ডিশন, লাইফস্টাইল, উন্নত অনুন্নত এসব হিসাব করতে চাই না। ইভেন চীন আমাদের যে খয়রাত দিয়েছে তারচেয়ে বেশি দিয়েছে ইন্ডিয়াতে। সেসব নিয়ে আমাদের মিডিয়া কোনোদিন দুইটা শব্দও লিখেনি।
আমি আমার ক্যারিয়ার সংক্রান্ত ব্যাপারে একদিন চূড়ান্ত অবাক হলাম যেদিন আমি জানলাম কলকাতার মতো পোর্টে শুধুমাত্র বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানিদের জন্য আলাদা ইমিগ্রেশন করা হয়। আমি ব্যাপারটা মেনেই নিতে পারি নাই।
বাংলাদেশ কারও খয়রাতে চলে না। আমার দেশের কৃষক শ্রমিক, গার্মেন্টস ওয়ার্কার আর বিদেশ গিয়ে রক্ত পানি করা টাকায় এই দেশ চলে। এই নিউজের ভাষা আমার ভালো লাগে নাই। আমার দেশকে নিয়ে বলা উল্টাপাল্টা কোন কথা আমার ভালো লাগে না।
প্রতিবাদ করলাম না, শুধু আক্ষেপ করলাম!