স্রোতের বিপরীতে হাঁটার রিস্কটা কি আমাদের সেলিব্রিটিরা নেবে? নাকি জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে গুটিয়ে থাকবে বরাবরের মতো? এটা এখন তাদের জন্য একটা এসিড টেস্ট...

বাংলাদেশের সেলিব্রিটিরা, মানে অভিনেতা-সঙ্গীতশিল্পী-ক্রিকেটাররা, খুবই কিউট। ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের৷ এদের বেশিরভাগকেই কোনো জাতীয় ইস্যুর শুরুর দিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরা আড়ালে থাকবে। কারণ শুরুতেই কোনো একটা মত দেয়ার পর সেটা ব্যাকফায়ার করলে তো সমস্যা। ফলোয়ার কমে যাবে, লাইক-কমেন্ট আর পাওয়া যাবে না। 

একটা সময় পর্যন্ত এমন চলবে। তারপর যখন দেখা যাবে যে জনমত একটা দিকে বেশি হেলে পড়েছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নির্দিষ্ট কোনো দাবিতে বা দৃষ্টিভঙ্গিতে একতাবদ্ধ, তখন আমাদের সেলিব্রিটিরা বেরিয়ে আসবে। যাতে 'অমুক এখন কই' জাতীয় শ্লেষের শিকার তাদের হতে না হয়। 

এরপর তারা খুব সারফেস লেভেলের কথাবার্তা বলবে। মূল সমস্যার ধারেকাছেও তারা যাবে না। শুধু জনপ্রিয় অভিমতটাকেই নানাভাবে রিপিট করে যাবে, যাতে সবার মনরক্ষা করা যায়। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদের টিআরপি/সার্কুলেশন/হিট বাড়ানোর জন্য সেগুলোকেই খুব গ্লোরিফাই করবে। তাতে দেশের একশ্রেণীর মানুষ মনে করবে, তাদের প্রিয় সেলিব্রিটি তো খুবই দেশ-কাল-সমাজ সচেতন। তারা খুশি হয়ে যাবে। 

প্রিয় সেলিব্রিটিরাও সেফ থাকবে। পরে সগর্বে বলতেও পারবে, 'আমি কিন্তু চুপ করে থাকিনি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি।' 

এটা আমাদের দেশে খুবই বিরল যে জাতীয় ইস্যুতে কোনো সেলিব্রিটি সেফ জোনে থাকার বদলে একটু বাড়িয়ে কিছু বলেছে, মানে নিজেদের মনে যা আছে সেটাই প্রকাশ করেছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তাদের সমালোচনার শিকার হতে হয়। 

এদিক থেকে অসম্ভবকে সম্ভব করা অনন্ত জলিলকে দুঃসাহসী বীর বলতে হবে। সে সমালোচনা হবে জেনেও মুখ খুলেছে। যেটুকু বলা সেলিব্রিটিদের ট্র‍্যাডিশন, তারচেয়ে অনেক বেশি সে বলেছে। এবং যথারীতি জাতি দুই ভাগ হয়ে গেছে। অনেকে তার প্রশংসা করছে, আবার অনেকে নিন্দা করছে। মোদ্দা কথা, লাইমলাইটে চলে এসেছে সে। অনেক রিস্ক ফ্যাক্টর সত্ত্বেও সে এটা করেছে। এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। 

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ধর্ষণের পেছনে নারীর পোশাককে দায়ী করে, ভিকটিম ব্লেমিং করে অনন্ত ঠিক করেছে না ভুল? অবশ্যই ভুল করেছে৷ দেশের সচেতন জনগণ যখন ধর্ষণের ক্ষেত্রে ভিকটিম ব্লেমিং এর অসুস্থ চর্চাকে উৎখাতের চেষ্টা করে যাচ্ছে, ঠিক তখনই সব পরিশ্রমে জল ঢেলে দিল সে। 

কিন্তু আমার আগ্রহের বিষয়, বাকি সেলিব্রিটিরা এখন কী করবে? তারা যদি মনে করে থাকে ধর্ষণের ক্ষেত্রে পোশাককে দায়ী করা বা ভিকটিম ব্লেমিং করা অযৌক্তিক, তাহলে তাদের অবশ্যই উচিত অনন্তের মতো মুখ খোলা৷ এটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। চুপ করে থেকে, সেফ গেম খেলার বদলে, নিজেদের মতামত নিয়ে সরব হওয়া উচিত তাদের৷ 

কিন্তু সেই রিস্ক কি তারা নেবে? নাকি জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে গুটিয়ে থাকবে বরাবরের মতো? ইস্যুটা থিতিয়ে এলে, বা জনপ্রিয় অভিমত তৈরি হয়ে গেলে, তখনই কেবল একটা পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়ে দায় সারবে? 

দেখা যাক আমাদের সেলিব্রিটি, রোল মডেলরা কী করে। এটা এখন তাদের জন্য একটা এসিড টেস্ট।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা