উনি ভেবেছেন, বেতন দিয়ে একটা দাস রাখছেন, তাই খামচি দিয়ে রক্ত বের করার অধিকার ওনার আছে, লাথি দেবার অধিকার ওনার আছে, বাসায় আটকে রাখার অধিকার ওনার আছে এবং ইহা উনি ওনার এলিট শ্রেণীর সূত্রে প্রাপ্ত হইছেন।

সাঈদা সুলতানা এ্যানি একজন উচ্চশিক্ষিত নারী । উঁচু তলার প্রতিনিধি। তিনি তার গৃহ-কর্মী কে মারছেন, সেই ভিডিওটি দেখলাম। অবাক হইনি কারণ, এই সব এলিট শ্রেণীর নারীরা সৌখিন নারীবাদের চর্চা করেন, দেশালের দেশীয় ঢং এর শাড়ি পরেন, প্ল্যাকার্ডে নারী মুক্তির স্লোগান লিখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রগতিশীল ইমেজ তৈরি করেন। টকশোতে জ্বালাময়ী বক্তব্য কপচালেও দিন শেষে, ওনাদের ভ্যাক ভ্যাকে কাদার ঠোঙ্গা, ফুটো হয়ে সামনে চলে আসে ।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এ্যানি তার গৃহপরিচারিকা মেয়েটিকে ´শুয়োরের´ বাচ্চা বলে গালি গালাজ করছেন, মারছেন। ক্রোধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, প্রথমে অল্প গালি, তারপর বেশি গালি, তারপর তেড়ে এসেছেন । কারণ হল, গৃহ পরিচালিকা মেয়েটি শুদ্ধ ভাষায় এ্যানির গালির প্রতিবাদ করছিল।

যেহেতু এ্যানি একজন এলিট শ্রেণীর নারী, যেহেতু উনি একজন বুদ্ধিজীবী, যেহেতু ওনার শিক্ষাদীক্ষা ব্যাপক, যেহেতু উনি প্রগতিশীলতার গুদাম হইছেন, সেহেতু, এ্যানির ভাষা হবে শুদ্ধ, আর গৃহ পরিচালিকা মেয়েটির ভাষা হবে অশালীন, নোংরা। এ্যানি সেই ভাষা শুনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন। তারপর মাথায় হাত বুলায় বলবেন, "যা শুয়োরের বাচ্চা মাপ করে দিলাম।"

গৃহকর্মী নির্যাতন করে নারী মুক্তির ঝাণ্ডা ওড়াবেন সাইয়েদা সুলতানা অ্যানি

কিন্তু গৃহ পরিচালিকা মেয়েটি সেটা না করে নিজের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হইছে! এটা তো এ্যানি মানবেন না। উনি ভেবেছেন, বেতন দিয়ে একটা দাস রাখছেন, তাই খামচি দিয়ে রক্ত বের করার অধিকার ওনার আছে, লাথি দেবার অধিকার ওনার আছে, বাসায় আটকে রাখার অধিকার ওনার আছে এবং ইহা উনি ওনার এলিট শ্রেণীর সূত্রে প্রাপ্ত হইছেন।

উনি বোঝেন নাই , নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মেয়েটা প্রযুক্তি বোঝে, সে বোঝে তার অধিকার , সে এ্যানির মত মানুষের মুখোশ টেনে খুলে ফেলবে। এ্যানি তার ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, এই মেয়ে টাকা দাবি করছে। আমার প্রশ্ন হল, টাকা দাবি করলে উনি পুলিশে মেয়েটাকে না দিয়ে, কেন ছেড়ে দিলেন?

সাঈদা সুলতানা এ্যানির ফেসবুক স্ট্যাটাস এর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ২টা। এক- সে বলছে, গৃহপরিচারিকা মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল পাকিস্তানির সাথে। মানে বিষয় দাঁড়াইল, যেহেতু মেয়ের পাকিস্তানির সাথে বিয়ে হইছে তার মানে এই মেয়ে ভাল না! উনি জাতীয়তাবাদ ইমোশন ক্যাশ করার চাল চালছেন। দ্বিতীয় বিষয় হল ,উনি বলছেন রঙ এর স্প্রে থেকে ওনার বাচ্চাটার অ্যালার্জি হতে পারে। কথা হল, অ্যালার্জি হলে বাসায় ঐ স্প্রে কেন রাখা হল? এই দুর্বল ডিফেন্সিভ বুদ্ধি নিয়া আপনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন!

এ্যানির মত লোকজন তার ঔপনিবেশিক মানসিকতা বদলাতে পারেন নাই। উনি এবং ওনারা নিজেদের মনিব আর অধীনস্থদের চাকর ভাবেন, মানবতার কথা মুখে বললেও ভেতরে প্রচণ্ড বর্ণবাদী, শ্রেণী বৈষম্যের বিষ লালন করে। হঠাৎ মুখোশটা খুলে গেলে দেখা যায়, কুৎসিত পচাগলা রূপ।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা