ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে অপরাধীর ওপর রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে তার পুরুষাঙ্গ অকেজো করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে পাকিস্তানের মন্ত্রীসভায়। ইমরান খানও এই ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সেদেশের টেলিভিশন চ্যানেল জিও টিভি...

একটা অহেতুক কৌতুক দিয়ে শুরু করি। সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সতর্কবাণী লেখা থাকে, সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়, নিকোটিন মৃত্যুর কারন- ইত্যাদি। বিশ্বের সব দেশেই সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে এই কথাগুলো লিখে দিতে হয়। একবার হলো কি, এক দেশের সরকার ভাবলো, ক্যান্সারের ভয় দেখিয়ে তো লোকজনকে সিগারেট থেকে দূরে রাখা যাচ্ছে না, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে এখন থেকে লিখতে হবে- সিগারেট খেলে যৌনক্ষমতা হ্রাস পায়। সিগারেটের কোম্পানীগুলোও সেই হুকুম তামিল করতে বাধ্য হলো। 

সেই আদেশ জারীর পরে এক লোক গেছে দোকানে সিগারেট কিনতে, কেনার পরে সে দেখলো প্যাকেটের গায়ে লেখা যৌনক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সতর্কবাণী। লোকটা দোকানদারকে প্যাকেটটা ফেরত দিয়ে বললো, 'এটা পাল্টে যেটা খেলে ক্যান্সার হয় সেটা দিন।' 

কৌতুকের সারমর্ম এটাই- লোকজন মৃত্যুকে ভয় না পেলেও, যৌনক্ষমতা হ্রাস পাওয়াকে ভয় পায়। এজন্যেই তো এদেশের রাজধানী থেকে শুরু করে মফস্বল শহরের অলিগলিতেও অমুক-তমুক হারবালের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে, ভুয়া চিকিৎসা হয় জেনেও লোকজন ছুট লাগায় এসব জায়গায়।

যাই হোক, ভূমিকা লম্বা হয়ে যাচ্ছে, প্রসঙ্গে ঢুকে যাই। এই যে যৌনক্ষমতা হারানোর একটা আদিম ভয় কাজ করে মানুষের মধ্যে, সেটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান। ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য কমাতে এবার ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে অপরাধীর ওপর রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে তার পুরুষাঙ্গ অকেজো করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দেশটির মন্ত্রীসভায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও এই ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সেদেশের টেলিভিশন চ্যানেল জিও টিভি। ধর্ষণের মামলাগুলিকে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে অপরাধীদের শাস্তি পেতে অযথা দেরি না হয়। 

পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে এখনও কোন অফিসিয়াল অ্যানাউন্সমেন্ট না এলেও, গতকালই দেশটির কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী ফারোগ নাসিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ধর্ষকদের জন্য কঠোর আইন আসছে। সম্ভাব্য শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ থেকে ১৫ বছর কারাদণ্ড ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে খোজাকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ধর্ষণের আলামত শনাক্তে বিতর্কিত টু-ফিঙ্গার সিস্টেম বাতিল করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। নাসিম আরও বলেছিলেন, ধর্ষণকারীকে সাময়িক বা আজীবনের জন্য খোজাকরণ করা হতে পারে। কারও বিরুদ্ধে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি পাওয়া গেলে শাস্তি হিসেবে রাসায়নিক খোজাকরণের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এ আইন রয়েছে।

ইমরান খান

গত সেপ্টেম্বর থেকেই ধর্ষণের মতো অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি প্রণয়নের দিকে হাঁটতে শুরু করেছিল পাকিস্তান। লাহোরের ইস্টার্ন সিটির রাস্তায় সন্তানের সামনে এক নারী গণধর্ষণের শিকার হবার পর গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল, তখনই টনক নড়ে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, যৌন অপরাধ কমাতে ধর্ষণকারীকে জনসমক্ষে ফাঁসিতে দিতে হবে, নইলে রাসায়নিকভাবে খোজা করে দিতে হবে। নইলে ধর্ষণের মতো অপরাধ কমানো যাবে না। খুনীদের যেভাবে ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডারার, সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারার, থার্ড ডিগ্রি মার্ডারার- এভাবে বিবেচনা করা হয়, ধর্ষকদেরও সেভাবে বিবেচনা করতে হবে, আর সর্বোচ্চ স্তরের ধর্ষকেরা সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হবে। 

জিও টিভির দেয়া এই খবরটা যদি সত্যি হয়, তাহলে দারুণ এক নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও এমন সাজার প্রচলন হয়নি এখনও। তবে এখনও যেহেতু খসড়ার পর্যায়ে আছে এটি, কেবলই মন্ত্রীসভায় পাশ হয়েছে, সংসদে অনুমোদনের পরেই এটি পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। ওই খসড়ায় পাকিস্তানে মহিলাদের নিরাপত্তায় জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনীতে আরও বেশি সংখ্যায় মহিলা কর্মী নিয়োগ, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে ধর্ষণের মামলাগুলির বিচার এবং ধর্ষণের ঘটনার সাক্ষীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা- ইত্যাদি।

ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের চেয়ে রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীর পুরুষাঙ্গ অকেজো করে দেয়াটাকেই অনেকে যুক্তিযুক্ত মনে করেন। কারন ধর্ষণের শিকার একজন নারী বা শিশুকে যে মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়, সেটার ধাক্কা অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারেন না। এরকম তীব্র মানসিক শাস্তি ধর্ষকের জন্যেও প্রযোজ্য হোক, এটাই অনেকের চাওয়া। কারাদন্ডের পাশাপাশি একজন অপরাধীর জন্য অকেজো পুরুষাঙ্গ নিয়ে বেঁচে থাকার চাইতে বড় মানসিক শাস্তি আর কিইবা হতে পারে!

তথ্যসূত্র কৃতজ্ঞতা- এনডিটিভি ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা