পাকিস্তানের বন্ধু তো হনুলুলু ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান আপন ভাইও। পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে তিনি কি কম চেষ্টা করেছেন?

সাবেক ক্যারিবীয় অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব পাচ্ছেন- খবরটা মোটামুটি বাসি হয়ে গেছে এতক্ষণে। পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাকে 'নিশাণ-ই হায়দার' সম্মাননায় ভূষিত করা হবে, পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা সেটা। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি স্যামির নাগরিকত্বের আবেদনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, ঘোষনার আনুষ্ঠানিকতাটাই কেবল বাকী। 

খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।কেন খারাপ হলো, সেটা বলছি, তবে তার আগে ড্যারেন স্যামির এই সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পাওয়ার কারণটা বলে নেয়া যাক। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের টিম বাসে ভয়াবহ জঙ্গী হামলার পরে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিষিদ্ধই হয়ে গিয়েছিল। প্রায় নয় বছর কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন হয়নি পাকিস্তানে। জঙ্গী হামলার কারণে নেমে এসেছিল অলিখিত এক নিষেধাজ্ঞা। ভারত-অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড তো দূরের কথা, জিম্বাবুয়ে বা আয়ারল্যান্ডের মতো দলগুলোও পাকিস্তানে খেলতে যেতে রাজী হতো না। 

গত দশ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে পাকিস্তান। নিজেদের দেশে জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার মাশুলই দিচ্ছে দেশটা। এরইমধ্যে অবশ্য তারা চেষ্টা চালিয়েছে ছোট ছোট দলগুলোকে লোভ দেখিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে, সেই মিশনে তারা খানিকটা সফলও বটে। জিম্বাবুয়ে গেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটা দল গেছে পাকিস্তানে। তাদের দেখাদেখি শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশও গিয়ে সিরিজ খেলে এসেছে করাচী আর রাওয়ালপিণ্ডিতে। 

পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর ব্যাপারে বাইরের দেশগুলোর সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে যারা সবসময় কথা বলেছেন, ড্যারেন স্যামি তাদের একজন। শুরু থেকেই স্যামি বলতেন, প্রতিটা দেশের ক্রিকেটারদের অধিকার আছে হোম গ্রাউন্ডে, নিজেদের দর্শকের সামনে ক্রিকেট খেলার। পাকিস্তানকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোন মানে হয় না। স্যামি নিজেক পিএসএল খেলতে পাকিস্তানে এসেছেন, পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের সঙ্গেও তার দারুণ বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক, পাকিস্তানের ক্রিকেটের সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী তিনি। কাজেই, তাকে পাকিস্তান সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিতেই পারে। 

পাকিস্তানের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে ড্যারেন স্যামিকে

এখানেই মন খারাপের কারণটা নিহিত। পাকিস্তানের বন্ধু তো হনুলুলু ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান আপন ভাইও। পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে তিনি কি কম চেষ্টা করেছেন? হনুলুলুর নারী দলকে পাঠিয়েছেন পাকিস্তান সফরে, পুরুষ দলকেও পাঠাতে চেয়েছেন কয়েক দফা, দেশজুড়ে প্রতিবাদ হওয়ায় খানিকটা পিছিয়েছেন সফর, কিন্ত বাতিল করেননি।

শেষমেশ বন্ধু দেশটিতে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাঠিয়েই ছেড়েছেন তিনি, তাও একবার নয়, তিন-তিনবার! টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-২০ খেলতে হনুলুলু জাতীয় দল পাকিস্তানে যাচ্ছে তিন দফায়। এবার পাকিস্তানকে 'অনিরাপদ' বলবে, কার এমন বুকের পাটা? বন্ধুর এমন অবদানের কথা পাকিস্তান ভুলে গেল কি করে? স্যামিই শুধু পাকিস্তানের বন্ধু, আপন ভাই তাহলে কী?

হনুলুলুর বেশিরভাগ ক্রিকেটভক্ত যেখানে চাননি যে ক্রিকেটারেরা পাকিস্তানে যাক, এমনকি খোদ ক্রিকেটার আর কোচিং স্টাফদের মধ্যেও আপত্তি ছিল- সেসবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একবার নয়, দু'বার নয়- তিন তিনবার পাকিস্তান সফরের আয়োজন যে লোক করতে পারে, তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব না দিয়ে পাকিস্তান কিনা ড্যারেন স্যামিকে দিলো? এই রসিকতার মানে কি? ড্যারেন স্যামি তো কেবল মুখে বলেছেন পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর কথা, আপন ভাই কাজ করে দেখিয়েছেন, পাকিস্তানে জাতীয় দলকে পাঠিয়েছেন বারবার, পাকিস্তানকে নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। অথচ পুরস্কার পাওয়ার বেলায় কিনা তিনি উপেক্ষিত থাকলেন! 

এই পৃথিবীতে যে ভালো মানুষের দাম নেই, সত্যিকারের বন্ধুত্বের কোন মূল্য নেই- সেটাই যেন আরও একবার প্রমাণীত হলো এই ঘটনায়। মন খারাপ করবেন না আপন ভাই, পাকিস্তান আপনাকে নিশাণ-ই হায়দারে ভূষিত করেনি, সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়নি তো কি হয়েছে, প্রতিটা পাকিস্তানী ক্রিকেটপ্রেমীর মনের মধ্যে আপনি একটা বিশেষ জায়গা দখল করে আছেন, সেখান থেকে আপনার আসন কোন স্যামি ট্যামিরা টলাতে পারবে না...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা