অপরাজিতা আঢ্য: পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেও যিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
নব্বই দশকে নিজের স্থুল দেহের জন্য প্রসেনজিতের নায়িকা হতে পারেননি, খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাকে। সেই প্রসেনজিতের সাথেই প্রাক্তন করেছেন, তারপর করলেন কিশোর কুমার জুনিয়র।
টালিগঞ্জের সিনেমায় পনেরো বছর পর ফিরছে সুপারহিট জুটি প্রসেনজিৎ- ঋতুপর্ণা,এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা বছর জুড়ে,সঙ্গে আছে আরেক হিট নির্মাতা জুটি শিবু- নন্দিতা। সব মিলিয়ে 'প্রাক্তন' সিনেমা হয়ে উঠলো দর্শকদের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ছবি। মুক্তির পর দর্শকদের ঢল নামলো প্রেক্ষাগৃহে,শিবু- নন্দিতা বা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার কারনেই হয়তো সুপারহিট হয়েছে সিনেমা। তবে সিনেমা দেখা শেষে অন্য তৃপ্তি নিয়ে ফিরলেন দর্শকরা। তাদের মুখে শুধু একটাই নাম- 'মালিনী'। আত্বকেন্দ্রিক উজান,আধুনিকা সুদীপাকে ছাপিয়ে স্বামী সন্তান সংসারকে আদর্শ মানা মালিনী যেন হয়ে উঠলেন সিনেমার আসল আকর্ষন। এই মালিনী চরিত্রে অভিনয় করে যিনি নিজেকে অনন্য করে তুলেছিলেন, তিনি কলকাতার অন্যতম সেরা অভিনেত্রী 'অপরাজিতা আঢ্য'।
'তুমি জীবন কে কিছু দাও, জীবন তোমাকে দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে' বা 'তুমি যাকে ভালোবাসো তাঁর সবটা ভালোবাসবে', 'আমার কাছে এডজাসমেন্ট মানে হেরে যাওয়া নয়'- প্রাক্তন সিনেমার এই অসাধারণ সংলাপ গুলি আমরা তাঁর মুখেই শুনেছিলাম। প্রাক্তন এর পরে ভারতীয় বাংলা সিনেমা জগতে রীতিমত আস্থাভাজন বড় তারকা হয়ে উঠেছেন, সিনেমায় চরিত্র যতটুকুইহোক, তিনি যেন থাকেন আলোচনার প্রান্তে। আজকের এই পর্যায়ে আসতে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।
নব্বই দশকে নিজের স্থুল দেহের জন্য প্রসেনজিৎ এর নায়িকা হতে পারেননি, খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাকে। সেই প্রসেনজিৎ এর সাথেই প্রাক্তন করেছেন, তারপর করলেন কিশোর কুমার জুনিয়র। আর এই সিনেমাতেই বললেন আরেকটি বিখ্যাত সংলাপ 'শিল্পী হতে গেলে ট্যালেন্ট লাগে, আর শিল্পীর বউ হতে লাগে ধৈর্য্য'। তবে নব্বইতে রণাঙ্গন সিনেমায় প্রসেনজিতের ছোট ভাই কুশল চক্রবর্তীর প্রেমিকা হয়েছিলেন।
কথিত আছে অকাল প্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ উনার 'চিত্রাঙ্গদা' সিনেমা থেকে চরিত্রটি কেটে ছোট করার কারনে অভিমান করেছিলেন অপরাজিতা আঢ্য, জবাবে ঋতুপর্ণ বলেছিলেন তোকে এর থেকে আর বড় চরিত্র আর কেউ দিবে না। সেই দিনের সেই দুঃখবোধে অভিনয় জীবন কে নতুন ভাবে সাজিয়েছেন। শিবু- নন্দিতার ছবিগুলোতে তিনি যেন অন্যতম প্রাণ হয়ে থাকেন। 'বেলাশেষে' সিনেমায় এত এত চরিত্রের মাঝেও বুড়ি চরিত্রে নিজেকে স্বতন্ত্র করেছিলেন, পার্শ্ব চরিত্রেই তিনিই ছিলেন সবচেয়ে সমুজ্জ্বল।
একে একে প্রাক্তন, হামির পাশাপাশি তাদের প্রযোজনায় প্রজাপতি বিস্কুট থেকে 'মূখ্যার্জি দার বউ'তেও তিনি আছেন। বেলাশেষের সিক্যুয়েল 'বেলাশুরু'তেও থাকবেন স্বমহিমায়। গত কয়েক বছরে করেছেন মাটি, নূরজাহান, নবাব, ঘরে এন্ড বাইরে, সমান্তরাল- সহ বহু সিনেমা। বাংলা সিনেমার প্রান্ত পেরিয়ে হিন্দি সিনেমাতেও নাম লিখিয়েছেন অভিনয় করেছেন 'মেরি পেয়ারি বিন্দু'তে।
সিরিয়াল জগতেও তিনি অনন্য নাম। 'কুরুক্ষেত্র' সিরিয়ালের আদর্শ বউ থেকে 'মা' সিরিয়ালের মাতৃরুপে সবটাতেই সফল। জলনূপুর সিরিয়ালটি শুধুমাত্র আলোচনায় ছিল উনার 'পারী পাগলি' চরিত্রটির জন্য। শুধু যে মায়াময়ী রুপে নিজেকে তুলে ধরেছেন তা নয়, অদ্বিতীয়া সিরিয়ালে খল চরিত্রে পুরো সিরিয়ালটিকে জমিয়ে রেখেছিলেন। এছাড়া কনকাঞ্জলি, গানের ওপারে, সন্ন্যাসী রাজা সহ বেশ সংখ্যক সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন, ডিটেকটিভ বৌমা হয়েছেন ওয়েব সিরিজে।
অভিনয়ে আজকাল ভীষণ ব্যস্ত তিনি। হোক সেটা সিনেমা,সিরিয়াল কিংবা উপস্থাপনা। ব্যক্তিগত ভাবে উনার হাসিটা খুবই প্রিয়, মুখ অবয়ব যেন পুরো মাতৃরুপ। অভিনয় জীবনে বহুবার মায়ের চরিত্রে নিজেকে সঁপে দিলেও, নিদারুণ হলেও সত্যি বাস্তবে তিনি হতে পারেন নি গর্ভধারিণী মা।
আজ এই স্বনামখ্যাত অভিনেত্রীর শুভ জন্মদিন,শুভকামনা রইলো। শুভ জন্মদিন, অপরাজিতা আঢ্য!