নাজিয়া, অপূর্ব, আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা আবারও প্রমাণ করেছেন, বিশাল 'সুপারস্টার'দের মতো কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বা অভিয্যগের প্যান্ডোরার বাক্স না খুলেও চমৎকারভাবে একটা সম্পর্কের ইতি টানা যায়, ভালোবাসা না থাকলেও শ্রদ্ধাবোধটা টিকিয়ে রাখা যায়...

অভিনেতা অপূর্ব এবং নাজিয়া হাসান অদিতির সংসার ভেঙেছে গতকাল।বেশ কিছুদিন ধরেই তারা আলাদা থাকছিলেন। অফিসিয়ালি খবরটা জানিয়েছেন কাল। করোনাভাইরাসের তাণ্ডব ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই দম্পতির ডিভোর্সের প্রসঙ্গটা। তবে অপূর্ব এবং নাজিয়া যেভাবে তাদের যাত্রার ইতি টেনেছেন, এরচেয়ে ভালোভাবে একটা সম্পর্কের শেষ হতে পারতো না। কোথাও কোন কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি নেই, দোষারোপ নেই, নেই একে অন্যের দিকে ঘৃণাজনক বাক্যবাণ ছুঁড়ে দেয়ার চেষ্টা- পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখেই দুজনের হাত ছেড়েছেন তারা, বিষয়টা নিয়ে যাতে জলঘোলা বা নোংরামি করা না হয়, সেই অনুরোধও করেছেন। 

বিনোদন জগতের সাংবাদিকদের কেউ কেউ বিষয়টা জানতেন আগে থেকেই। তবে দেশের মানুষ জেনেছেন নাজিয়া হাসানের ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরে। নয় বছর যার সঙ্গে কাটিয়েছেন, তার প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান রেখেই প্রতিটা শব্দ উচ্চারণ করেছেন নাজিয়া, লিখেছেন- 

"জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, অসাধারণ একজন বাবা, ভাই হিসেবে চমৎকার, আর সন্তান হিসেবে অসম্ভব দায়িত্বশীল। ও প্রচণ্ড মেধাবী একটা ছেলে, লাখ লাখ ভক্ত ওকে ভালোবাসে, আর সেই ভালোবাসাটা ও নিজের গুণে অর্জন করে নিয়েছে। আপনারা দয়া করে অপূর্বকে ওর কাজ দিয়ে বিচার করবেন, ওর ব্যক্তিগত জীবন দিয়ে নয়। 

দুর্ভাগ্যবশত, বেশ কিছু কারণে আমরা আর একসঙ্গে থাকতে পারছি না, কিন্ত আমি ওর জীবনের উন্নতি আর মঙ্গল।কামনা করি প্রতি মুহূর্তে। কারণ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার, আমার সন্তান আয়ুশকে আমি পেয়েছি ওর কারণেই। ওর পরিবারের সদস্যরাও খুব ভালো মানুষ, আমি তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। দয়া করে আমাদের এই আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনা দিয়ে মানুষ হিসেবে আমাদেরকে বিচার করবেন না। গত নয় বছর আপনারা আমাদের ভালোবেসেছেন, আশা করি সেই ভালোবাসাটা বাকী জীবনেও আমাদের সঙ্গী থাকবে।" 

তার কিছুক্ষণ বাদেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অপূর্বও, সেই লেখার প্রতিটা শব্দেও মিশে ছিল সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া সঙ্গীনীর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসার ছোঁয়া। অপূর্ব লিখেছেন- 

"আমরা নয় বছর একে অন্যের সাথে সবকিছু ভাগ করে নিয়েছি। বিচ্ছেদটা আমাকে কিছুটা অবাক করে দিয়েছে সত্যি। কিন্ত মানুষের জীবনে এগুলো ঘটে, আমরা দুজনে মিলেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। এত বছর ধরে আমরা এক সাথে ছিলাম, নাজিয়া এই সময়টাতে আমার সুখ-দুঃখের সবচেয়ে বড় অংশীদার এবং সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল। আমার অনেক সাফল্যের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে ও। মানুষ হিসেবে নাজিয়া অসাধারণ, ও আত্মবিশ্বাসী এক উদ্যোক্তা, এবং ভীষণ দয়ালু ও মানবিক।

নাজিয়া, অপূর্ব, আয়াশ

আমার ক্যারিয়ারের অনেক অর্জন। তবুও আমার সর্বকালের সবচেয়ে বড় অর্জন সর্বদা থাকবে- আমাদের ছেলে আয়াশ। পিতৃত্বের এই দুর্দান্ত উপহারের জন্য আমি নাজিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে পারব না। ও আমার সন্তানের 'আইডিয়াল মাদার' হয়েছে, এবং আমরা ঠিক করেছি, ছেলেকে বড় করার দায়িত্বটা দুজনেই ভাগাভাগি করে নেবো, আমরা একসঙ্গে না থাকলেও। ডিভোর্স একটা ভয়ঙ্কর বিষয়, বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় অনেক প্রশ্ন, আমি জানি এবং বুঝি। সবাইকে অনুরোধ করব, আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন, আমি এবং নাজিয়া যেন কঠিন সময়গুলো পার করতে পারি..." 

অপূর্ব আরেক স্ট্যাটাসে অনুরোধ জানিয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গসিপ বা রসালো খবর তৈরী করার চেষ্টা যাতে না করা হয়। তার ভক্তরা যাতে নাজিয়াকে আক্রমণ করে কিছু না বলেন, সেই ব্যাপারেও কথা বলেছেন অপূর্ব। এমন কিছু হলে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন। অপূর্ব লিখেছেন, "অদিতিকে সম্মান করি এবং আজীবন করবো। সুতরাং কোনভাবেই অদিতিকে অসম্মান করে তার পাশে অন্য কারো নাম আমি সহ্য করবো না। ভুলে যাবেন না অদিতি এখন আইনগতভাবে আমার স্ত্রী না থাকলেও সে আমার সন্তানের মা।"

দুজনের ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো দেখে মুগ্ধ হলাম। সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ায় দুঃখ অবশ্যই আছে, কিন্ত এত চমৎকারভাবে যে একটা সম্পর্কের ইতি টানা যায়, সেটাও এই জুটিটা দেখিয়ে দিলেন আরেকবার। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন নজির হাতেগোনা। সম্পর্ক ভাঙলে এখানে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যায়, কাদা-জল বেরিতে এসে একাকার হয়, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের একটা নোংরা খেলা চলে। খুব অল্প জুটিই আছে, যারা আলাদা হয়ে যাওয়ার পরেও পরস্পরের প্রতি সম্মানটা বজায় রেখেছেন, সাবেক সঙ্গী বা সঙ্গীনীর নামে মিডিয়ার সামনে উল্টোপাল্টা কথা বলেননি। 

এই দেশে একজন সুপারস্টার আছেন। এক নায়িকাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি, কিন্ত খবরটা চেপে রাখতে বলেছিলেন। সন্তানের জন্মের পরে সেই নায়িকা মিডিয়ার সামনে এলেন, অভিযোগ করলেন সুপারস্টারের নামে। নায়ক তখন স্বীকার করলেন সবকিছু, সঙ্গে এও জানালেন, এই সন্তান আমার, কিন্ত বউ আমার না, ওকে আমি তালাক দিলাম! তারপর নিয়মিত বিরতিতে দুজনেই দুজনের নামে বিস্তর অভিযোগ করেছেন, সেসব নোংরামির দিকেও গড়িয়েছে। অন্তর্জালে সব রেকর্ড থেকে যায়। তাদের সন্তান একদিন বড় হবে, দেখবে, তার বাবা তার জন্মের পরে কি কদর্য ভাষায় তার মাকে আক্রমণ করেছিলেন, কিভাবে তার জন্মটাকে একটা 'আবেগী ভুল' হিসেবে উল্লেখ করেছেন!

অপূর্ব-নাজিয়ার সন্তান আয়াশের কথা ভেবে ভালো লাগছে। ওকে এমন পরিণতি বরণ করতে হবে না। ব্রোকেন ফ্যামিলির ছাপটা ওর মনে জায়গা করে নেবে না, বাবা-মা দুজনের ভালোবাসা আর আদরই সে পাবে। স্কুলের প্যারেন্টস ডে-তে হয়তো বাবা-মা দুজনকেই একসঙ্গে পাবে সে, মায়ের সঙ্গে থাকলেও, মন খারাপ হলেই বাবাকে ফোন করতে পারবে সে, বাবা ঢাকায় থাকলে ছুটে আসবেন সঙ্গে সঙ্গে, কিংবা নিজে এসে নিয়ে যাবেন তাকে। ওর বাবা-মা যেভাবে আলাদা হয়েছেন, একে অন্যের প্রতি সম্মান রেখে সম্পর্ক শেষ করেছেন, তাতে দুজনের বিচ্ছেদটা ওর বেড়ে ওঠায় কোন প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না। 

অপূর্ব আর নাজিয়ার নতুন জীবনের জন্যে শুভকামনা। আপনারা যখন একসঙ্গে ছিলেন, দর্শক আপনাদের ভালোবেসেছে। এখন আপনারা আলাদা হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে আমাদের ভালোবাসা কমবে না, বরং পুরো প্রক্রিয়াটা দেখে আপনাদের প্রতি সম্মানটা বেড়েছে বহুগুণে। একসঙ্গে থাকা বা আলাদা থাকার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে ভালো থাকা, আলাদা হয়ে যদি ভালো থাকা যায়, সেটাই থাকুন আপনারা... 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা