উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন দেশটিতে বড়দিন উদযাপন বাতিল করেছেন। এই দিনে এখন দেশটিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয় তার প্রয়াত দাদী কিম জং সুকের জন্মদিন!

পৃথিবীর মানচিত্রে সবচেয়ে বড় মহাদেশের নাম এশিয়া। এবং এই মহাদেশেই সবচেয়ে বেশি মানুষেরও বাস। আর কে না জানে, জনসংখ্যা যত বেশি, অদ্ভূত ও আজব সব ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও তত বেশি! তাই অতি স্বাভাবিকভাবেই, এশিয়ার দেশগুলোতে নানান ধরণের বিস্ময়কর কর্মকান্ডের দেখা মেলে, যা কালের প্রবাহে বর্তমানে এক প্রকার প্রথায়ই পরিণত হয়েছে। চলুন জেনে নিই এশিয়ার দেশসমূহে বিদ্যমান এমন অবাক করা কিছু প্রথার ব্যাপারে। 

এলিভেটরে প্রথম প্রবেশ মানেই ঘোর বিপদ! 

এটিকে অনেকে বিপদ বলে মানতে নাও চাইতে পারেন। কিন্তু কোন ব্যাপারে দায়িত্ব নেয়ার কথা শুনলেই যাদের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, তাদের কাছে জাপানের এই অদ্ভূত নিয়মটি রীতিমত এক যন্ত্রণার নাম। কেননা জাপানে একটি অলিখিত নিয়ম প্রচলিত আছে যে আপনি যদি কোন এলিভেটর বা লিফটে প্রবেশকারী প্রথম ব্যক্তি হন, তবে আপনাকে সেটির 'নেতৃত্ব' গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ কে কোন তলায় যাবে তা শুনে সে অনুযায়ী বোতাম টেপা, সবাই ঢোকার আগ পর্যন্ত এলিভেটরের দরজা খুলে রাখা, সবাই ঢুকে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করা - এইসব কাজের দায়ভার আপনার কাঁধেই বর্তাবে। 

চতুর্থ তলার কোন অস্তিত্বই নেই! 

গোটা এশিয়াই যেন কুসংস্কারের সদা জীবিত এক আড্ডাখানা। কত বিচিত্র সব কুসংস্কারে যে বিশ্বাসী এই মহাদেশের মানুষজন! সেরকমই একটি আজব কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে চীন, জাপান, কোরিয়ার মত দেশগুলোতে অনেক আবাসিক দালান ও হাসপাতালেই চতুর্থ তলার অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়া হয়। অর্থাৎ তৃতীয় তলার পরই পঞ্চম তলা। চতুর্থ তলা বলে কিছু নেই। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, চীনা ভাষায় 'চার' আর 'মৃত্যু' শব্দ দুইটি নাকি শুনতে প্রায় একই রকম। আর তাই মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতেই এত আয়োজন! 

বড়দিনের বদলে জাতীয় নেতার দাদীর জন্মদিন পালন! 

হ্যাঁ পাঠক, এই মাত্র যা পড়েছেন একদমই ঠিকই পড়েছেন। উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জিং-উন দেশটিতে বড়দিন উদযাপন রদ করেছেন। খৃষ্টীয় ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিনে এখন দেশটিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয় তার প্রয়াত দাদী কিম জং সুকের জন্মদিন। উল্লেখ্য, তিনি ছিলেন দেশটির প্রথম নেতা কিম টু সাং এর স্ত্রী। 

সিঙ্গেলদের জন্য অ্যান্টি ভ্যালেন্টাইনস ডে! 

প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল গোটা বিশ্বের মানুষ যেখানে মেতে ওঠে ভালোবাসা দিবস উদযাপনে, তখন দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে দেখা যায় 'ব্ল্যাক ডে' পালন করতে। কারা এই দিনটি পালন করে? যারা সিঙ্গেল, অর্থাৎ যাদের জীবনে কোন ভালোবাসার মানুষ নেই। দিবসের নামকরণের সার্থকতা বজায় রাখতে এ দিনে কিছু কাজ করা অবশ্য কর্তব্য। যেমনঃ উপরে ব্ল্যাক বিন পেস্ট দিয়ে বানানো সসের মোটা আস্তরণযুক্ত নুডলস খাওয়া, কালো পোশাক পরিধান করা, এবং সারাটি দিনজুড়ে নিজেদের একাকীত্ব নিয়ে ঠাট্টা-উপহাস করা।

দারিদ্র্যের ভয় থেকে বিড়ালের প্রতি বিতৃষ্ণা! 

ভিয়েতনামের অধিকাংশ মানুষই বিড়ালে ভয় পায়। তাই তাদের পোষা প্রাণীর তালিকায় বিড়াল তো থাকেই না, পাশাপাশি রাস্তাঘাটেও সচরাচর কোন বিড়ালের দেখা মেলে না। এবং আরও একবার এর পেছনে মূল কারণ হলো কুসংস্কারে বিশ্বাস। বিড়ালের 'ম্যাও ম্যাও' ধ্বনি শুনতে অনেকটাই ভিয়েতনামি ভাষায় 'দারিদ্র্য' অর্থবোধক শব্দটির মত। আর কেই বা চায় যেচে পড়ে দারিদ্র্যতাকে আমন্ত্রণ জানাতে! তাই ভিয়েতনামিরা বিড়ালের থেকে দূরে থাকাকেই নিরাপদ বলে মনে করে

সন্তান জন্মানোর পর স্বামী-স্ত্রীর পৃথক বিছানায় রাত্রিবাস! 

সন্তান জন্মদানের পর জাপানি সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিবারে স্ত্রীর ভূমিকায় খোলনলচে পরিবর্তন আসে। তখন স্ত্রী তার স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয়ার বদলে সন্তানের সাথে শুতে আরম্ভ করে। এবং সন্তানের জন্য নির্ধারিত বিছানাটি সাধারণত পৃথক কোন ঘরে হয়ে থাকে। সন্তানের জন্মের পর প্রথম কয়েকবছর মায়ের তার সাথে শোয়ার প্রচলন পৃথিবীর প্রায় সব দেশের কম বেশি আছে। কিন্তু জাপানিদের বিশেষত্ব হলো, মায়েরা স্রেফ এক-দুই বছর না, সন্তানের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছর হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে এক বিছানায় শুয়ে থাকে। 

বাচ্চাদের মাথায় হাত দেয়া মানা! 

থাইল্যান্ডের অধিবাসীরা মনে করে, প্রত্যেক মানুষের মাথায় একটি 'উজ্জ্বল আত্মা' বাস করে, এবং অন্য কারও সেটিকে বিরক্ত করা একদমই উচিৎ নয়। তাছাড়া মাথাকে তারা মানবশরীরের সবচেয়ে পবিত্র অঙ্গ হিসেবেও বিবেচনা করে। সেজন্য বাবা-মা ও সমাজে বসবাসকারী বিশেষ সন্ন্যাসী বা সাধুবাবা ব্যতীত আর কারওই অনুমতি নেই বাচ্চাদের মাথা স্পর্শ করার। 

চুইংগাম চিবোনো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ! 

সিঙ্গাপুরে এমন অনেক বিধিনিষেধ আছে যা বাইরের দেশের মানুষের কাছে যারপরনাই বিস্ময়কর বলে মনে হতে পারে। তবে সবচেয়ে আজব নিয়মটি বোধহয় চুইং গাম না চিবোনো। এমনকি এ দেশে চুইং গাম আমদানি বা বিক্রিও আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের দোকানেই বিশেষ প্রয়োজন বশত চুইং গাম কিনতে পাওয়া যায়, এবং সে জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র সাথে রাখার কোন বিকল্প নেই। 

সব মানুষের জন্ম একই দিনে! 

অধিকাংশ ভিয়েতনামিই তাদের জন্মের প্রকৃত তারিখে জন্মদিন পালন করে না। বরং তারা তারা তাদের পৃথিবীতে আগমনের শুভ মুহূর্তকে উদযাপন করে ভিয়েতনামি নববর্ষের দিন, যার নাম 'টেট'। এদিনটিতে পরিবারের বড়রা ছোটদেরকে, এবং এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে একটি করে লাল খাম উপহার দেয়, যার ভেতর কিছু টাকা থাকে, এবং সেই টাকাকে তারা অভিহিত করে 'হ্যাপি মানি' হিসেবে। 

যেখানে যখন খুশি মল-মূত্র ত্যাগের সুব্যবস্থা! 

চীনে একটি শিশু যেখানে যখন খুশি মল-মূত্র ত্যাগ করার অধিকার রাখে। এতে কারও কিচ্ছু বলার নেই। বরং কাজটি যেন তারা আরও বেশি সহজে করতে পারে সে ব্যবস্থাও করে দেয় তাদের বাবা-মা। সাধারণত তো প্যান্ট, পাজামা প্রভৃতির সামনের দিকেই ছিদ্র থাকে যা চেইন বা বোতামের সাহায্যে খোলা ও বন্ধ করা যায়। কিন্তু চীনে শিশুদের মলত্যাগও যাতে আরও নির্বিঘ্ন, নির্ঝঞ্ঝাট ও আনন্দময় হয়, তা নিশ্চিত করতে তাদের প্যান্ট বা পাজামার পেছনের দিকেও ছিদ্র করে দেয়া হয়। এবং সামনে-পিছনে, কোনো দিকের ছিদ্রই চেইন বা বোতামের মাধ্যমে বন্ধ করা যায় না। 

- ব্রাইটসাইড অবলম্বনে

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা