বাংলাদেশের কোনো কন্টেন্টে এর আগে আমি পর্ন দেখে মাস্টারবেশন দেখিনি, তাও একজন মেয়ের। সেক্স, কিসিং সিন, দেদারসে গালাগালি, ছুড়ি হাতে উপুর্যুপুরি রক্তাক্ত করা এরকম সব সাহসী সিনে ভরপুর আগস্ট ১৪।

'বিঞ্জ' নামে রবির নতুন স্ট্রিমিং টিভি ডঙ্গোল এসেছে বাংলাদেশে। তাদের নিজস্ব অরিজিনাল কন্টেন্টের একটি আগস্ট ১৪। মূলত বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ঐশী কেসের গল্প নিয়েই সিরিজের প্লট।

রিয়েল লাইফ ইন্সিডেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে এমনিতেই কাজ হয়েছে কম, কোনো চলমান কেস নিয়ে কাজ তো প্রায় শূন্যের কোঠায়। সেদিক থেকে এই সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করাটাই বেশ সাহসী সিদ্ধান্ত বলতে হবে। বাংলাদেশের নাটক ও সিরিজ খুব কমই দেখা হয় কন্টেন্টের কারণে তাই দু-তিনজন ছাড়া কাউকেই চিনতাম না এই সিরিজের। 

মিঃ হাইজিন: জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি   

সিরিজের গল্পটা সবার জানা। নির্দেশক শিহাব শাহিন তাই উপস্থাপনায় ভিন্নতা আনতে গিয়ে গল্প শুরু করেছেন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে। এখানে যেহেতু সব নামই পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে, তাই মূল চরিত্র তুশির হাত ধরে আমরা এগুতে থাকি। হত্যকাণ্ডের পর কীভাবে সে পালাতে চায়, কীভাবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ও পরবর্তীতে পুরো ঘটনা সবিস্তার জানায়-এভাবেই গল্প আগায়। আর দশটা রিয়েল লাইফ ক্রাইম কেসের প্লটই, পরিচিত ঘটনা হওয়ায় একটু জাজমেন্টাল পার্স্পেক্টিভ চলেই আসে। 

সিরিজ হিসেবে বিলো এভারেজ বলার কারণ ঘটনার গভীরে না যাওয়া, মোটিভ স্ট্যাবলিশ করতে না পারা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শ্যাবি ইনকোয়ারি আর ইনভেস্টিগেশন এক্সপেক্ট করলেও র'ভাবে দেখাতে পারে নি, বরং মনে হয়েছে নির্দেশনাতেই গলদ। অভিনয়ে শতাব্দী ওয়াদুদকে এই প্রথম বোধহয় লাউড মনে হল। ভালো কিন্তু আরও অনেক ভালো তিনি করতে পারেন। বাকি সব চরিত্রই ওভার দ্য টপ এক্টিং করেছে। শুধু একজন ছাড়া, তাকে নিয়ে বোল্ড অংশে আলোচনা করবো। 

শিহাব শাহীন এই প্রজেক্টে আরেকটু বাজেট পেলে হয়তো আরও ভালো মেকিং দেখাতে পারতেন। ক্যামেরার কাজ খুবই এভারেজ। ভায়োলেন্স যতটুকু দেখানো হয়েছে ততটুকুই আরও নির্মমভাবে দেখানো যেত। হয়তো ব্রড অডিয়েন্সের কথা চিন্তা করা হয়েছে তবুও এসব এখন দেখাতে হবে। অডিয়েন্সের মাইন্ডসেট এভাবেই চেঞ্জ হবে। তবে এই প্রথম বোধহয় গল্পের সময়ের সাথে শ্যুটিং টাইমও মেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ঢাকায় ১৫ আগস্টের যে পরিবেশ, তা খুব ভালোভাবে দেখানো হয়েছে; গল্প এজন্য আরও বিলিভেবল মনে হয়।

বিলো এভারেজ শো হয়েও বোল্ড এন্ড বিউটিফুল কেন আগস্ট ১৪? কারণ, তাসনুভা তিশা। আমার দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল যে বাংলাদেশের নাটক-সিনেমায় অভিনেতারা অভিনয় না জেনেই চলে আসেন। তিশার কোনো অ্যাক্টিং ট্রেনিং আছে কিনা জানা নেই, কিন্তু ওনার অভিনয় দেখে মনে হল তিনি হাত পাকিয়েছেন ভালোমতোই। আর এরকম একটা চরম ঘৃণ্য চরিত্র অনেক অভিনেত্রীই করতে চাইবে না। তিশা করেছেন এবং সে চরিত্র ফোটানোর জন্য যেমন ভাষা, যেমন বডি ল্যাংগুয়েজ আত্মস্থ করা প্রয়োজন সেগুলোর সবই করেছেন। 

তাসনুভা তিশা এখন পর্যন্ত নিজের সেরাটা দিয়েছেন এই সিরিজে 

এই গেল এই সিরিজের বিউটিফুল অংশ এবার আসি বোল্ডনেসে। আমি পৃথিবীজুড়ে সিরিজ-সিনেমা দেখি, চরিত্রকে বিলিভেবল করার জন্য নির্দেশকরা কতো কাঠখড় পোড়ান। গেম অফ থ্রন্স, নারকোস হোক কিংবা পাশের দেশের সেকরেড গেমস, মির্জাপুর- ভায়োলেন্স এন্ড সেক্স দেখানোর ক্ষেত্রে ওরা কখনোই পিছপা হয়নি। কারণ, যেগুলো একটা মানুষের নিত্য চাহিদা, যেগুলো বাস্তবে ঘটে সেগুলোকে লুকোনো মানে কল্পিত একটা জগত তৈরি করা।

একজন মানুষ সহবাস করবেই, একজন খুনি ছুড়ি দিয়ে রক্তে কব্জি ডুবিয়ে হত্যা করতেই পারে- এগুলো দেখালে হত্যা, রাহাজানি, ধর্ষণ বেড়ে যায় এগুলো বাজে কথা। এগুলো বাস্তব পৃথিবীকে পর্দায় নিয়ে আসে। তেমনি আগস্ট ১৪তে পুরো টিম এমন কিছুই দেখিয়েছে। বাংলাদেশের কোনো কন্টেন্টে এর আগে আমি পর্ন দেখে মাস্টারবেশন দেখিনি, তাও একজন মেয়ের। সেক্স, কিসিং সিন, দেদারসে গালাগালি, ছুড়ি হাতে উপুর্যুপুরি রক্তাক্ত করা এরকম সব সাহসী সিনে ভরপুর আগস্ট ১৪। 

এসব সিন না থাকলে কী হতো? না থাকলে তুশির ক্যারেক্টার বিলিভেবল হতো না। এমন না যে আহামরি কোনো সিরিজ হয়েছে, কিন্তু একটা চলমান প্রথা তো ভেঙ্গেছে। এই গল্প, এই প্লট বাইরের কোনো পরিচালক-প্রোডাকশনের হাতে পড়লে হয়তো অনবদ্য কিছু হতে পারতো, কিন্তু বাংলাদেশে এসেও যে স্রেফ প্যাকেজ নাটক হয়নি এটাই বড় সার্থকতা বলে মনে হচ্ছে আমার। 

এরকম কাজ যত বেশি হবে, তত ভালো আমাদের সিনেমা-সিরিজের জন্য। একশটা লুতুপুতু প্রেম, বেকার প্রেমিক-অপেক্ষমান প্রেমিকা, মধ্যবিত্ত পরিবারের কষ্ট নিয়ে বানানো নাটক-সিনেমার চেয়ে এমন বিলো এভারেজ কিন্তু বোল্ড ওয়েব সিরিজ একটা হওয়া ভালো।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা