সবাই উঠে গেল পাহাড়ের চূড়ায়, অথচ মেধাবী ছাত্রটা পাহাড়ের পাদদেশে বিষন্ন, হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সময়ের চক্রে সে অমলকান্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়...

একটা দল থাকে বন্ধুদের। সেখানে হাস্যরসের যোগান দেওয়া মানুষটা জানে না, সেই ছোট্ট দলের ভেতর গড়ে উঠেছে আরেকটা দল। যারা হাসি তামাশার মাঝেও নিজেদের জন্য কাজ করে যায়। এগিয়ে যায় নিজের রাস্তায়। কৌশলে, সন্তপর্ণে, গোপণে। হাস্যরসের যোগানদাতা যখন বুঝতে পারে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। সবাই যার যার রাস্তায় উঠে চলে গেছে বহুদূর। সে পড়ে থাকে একা। মাঝরাস্তায়, অনেক পিছে।

সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটাকে মাঝেমাঝে দেখা যায় সবার পিছে পড়ে থাকতে। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। অন্য সবার মতো সে একই পথে হাঁটতে চায়নি। সবাই উঠে গেল পাহাড়ের চুড়ায়, অথচ মেধাবী ছাত্রটা পাহাড়ের পাদদেশে বিষন্ন, হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সময়ের চক্রে সে অমলকান্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

সবচেয়ে রূপবতী তরুণীটির মনে খেলা করত এক রোমাঞ্চকর, প্রেমময় ভবিষ্যতের। অন্যরা যখন ভালোবাসার কাঙ্গাল, তখন সহস্র ভালোবাসার ভীড়ে সে বোকার মতো খুঁজে নেয় ভুল মানুষকে। যখন অন্যসবাই গোছালো, সুখি জীবনে প্রবেশ করেছে, সে পড়ে রয় অন্ধকার চোরাগলিতে। ভুল মানুষের সাথে, ভুল সময়ের চক্রে সে অন্ধ জীবের মতো ঘুরতে থাকে। ততদিনে উদ্ধার পাবার সব পথ রুদ্ধ। একটা সময় যার পায়ে ভালোবাসারা ধুলো হয়ে পড়ে থাকত, আজ তার পায়ের তলায় ফুটো-সিকি পয়সার ভালোবাসাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

সময় নিষ্ঠুরতম পরীক্ষক। মানুষের প্রত্যেক পদক্ষেপ তার ক্যালকুলেটরে যোগ হয়। যোগফলের বিনিময়-ঋণ সে নিখুঁতভাবে শোধ করে দেয়। পাওলো কোয়েলহো তার বিখ্যাত অ্যালকেমিস্টে বলেছিলেন, 'when you want something, all the universe conspires in helping you to achieve it.' ব্যাপারটা খুব সাধারণ। আপনি কিছু একটা পেতে চেয়েছেন, সবাই আপনাকে সেটা পেতে সাহায্য করছে।

ভাবুন তো, আপনার দরকার এক কোটি টাকা। আপনি সবাইকে বলুন। কেউ সাহায্য করছে? করছে না। আপনি কারো সামনে হাত পাতুন। কেউ আপনাকে দশ টাকাও দিবে না। তত্ত্বীয়ভাবে, আপনি এক কোটি টাকা কখনোই অর্জন করতে পারবেন না। এবার আপনি একটা রিক্সা নিয়ে রাস্তায় নামুন। প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে ইনকাম করছেন। একদিন না একদিন পাঁচশ পাঁচশ করেই আপনি এক কোটি টাকা কামিয়ে ফেলবেন। হয়তো সেজন্য আপনাকে ২০০ বছর বাঁচতে হতে পারে। কিন্তু পারবেন।

মনে রাখুন- দরজা বন্ধ করে যতক্ষণ মন খারাপ করে থাকবেন, তত বেশী পিছিয়ে যাবেন

কোয়েলহোর কোটেশনটাও তেমন। আপনাকে তখনই সবাই সাহায্য করবে, যখন আপনি নিজেকে সাহায্য করবেন। ধর্মগ্রন্থেও একই কথা বলা হয়েছে। যে নিজেকে সাহায্য করবে না, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও তাকে সাহায্য করবেন না। অথচ সৃষ্টিকর্তা চাইলেও পারত। পৃথিবীতে কিছু অর্জন করা খুব সহজ। যখন পথে নামবেন। যখন নামবেন না, জোয়াল কাঁধে গরুকে নিয়ে লাঙল দিতে জমিতে নামবেন না, কেউ আপনার জমি চাষ করে দিয়ে যাবে না। হয়তো ঈশ্বর আপনার জমির মাটিটা নরম করতে উপর থেকে বৃষ্টি ঝরাবে। এর বেশি তিনিও করবেন না।

আপনি ডিপ্রেশনে আছেন? কোন অপ্রাপ্তি? অর্থ-চাকরি-প্রেমিকা কিংবা অন্যকিছু? দরজা বন্ধ করে যতক্ষণ মন খারাপ করে থাকবেন, ততক্ষণ আপনি পিছিয়ে পড়তেই থাকবেন। যতক্ষণ নিজের কষ্টের কথা অন্যকে বলতে থাকবেন, ততক্ষণ আপনি পিছাতেই থাকবেন। দরজা খুলে রাস্তায় নামুন। দুটো জুতোর তলা ক্ষয় করুন, চাকরির গোটা পাঁচেক বই পড়ে ঝালাই করে নিন। দেখবেন, সবটা পেয়ে যাচ্ছেন।

মেধাবী ফার্স্টবয়দের থেকে সেকেন্ড, থার্ড বা লাস্ট বয়রা জীবনে বেশি উন্নতি করে। কেন বলেছি? মেধাবীরা ভাবে বেশি। তাদের আত্মবিশ্বাস প্রবল। কিন্তু যে সেকেন্ড বয় সে সারাজীবন ফার্স্ট হবার চেষ্টা করে এসেছে। সে জানে, বই খুলে পড়েই ফার্স্ট হতে হবে। লাস্ট বয়রা জানে, পৃথিবীতে সে ফিট নয়। টিকে থাকতে হলে খেটে খেতে হবে। এভাবেই তারা ধীরেধীরে অনেকদূর এগিয়ে যায়।

আর ফার্স্টবয়? নিজের ‘আত্মবিশ্বাস’ একটা সময় তাকে সবার পেছনে মাঝরাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে যায়। জীবনে হয়তো অনেক ভুলভাল সিদ্ধান্ত বারবার পিছিয়ে দিয়েছে, ঠিক সময়ে হয়তো ফলাফলটা হাতে আসেনি, অর্জনটা হয়তো বয়সের তুলনায় অনেক কম, তাতে কী? চাকায় প্যাডেল দিলেই রিক্সা চলবে। রিক্সা চললেই উপার্জন পকেটে আসবে। কেউ আপনাকে হাতে তুলে দিবে না, মুখে খাইয়ে দিবে না। আপনার অর্জনটা আপনাকেই উপার্জন করতে হবে। আপনি মানসিকভাবে অনেক দূর্বল? ভেঙ্গে পড়ছেন বারবার? বারবার ব্যর্থ? আপনার জন্যই পাওলো কোয়েলহো অ্যালকেমিস্টে আরো একটা কথা বলেছেন। 'The secret of life, though, is to fall seven times and to get up eight times.'

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা