ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি, ওসমানী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। কিন্তু আদতেই কি তাই?

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে ওসমানী এক্টিভ লিস্টে আহূত হন। ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। এতে রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বলে ঘোষনা করা হয়। এবং বাংলাদেশ সরকার এক ঘোষনায় ওসমানীকে ১২ এপ্রিল থেকে মন্ত্রীর মর্যাদাসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই মুজিবনগরে উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তর গঠন করা হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ওসমানিকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া হয়। তার পেশাগত ক্রমিক নম্বর ৮২১।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ইস্যুটা নিয়ে সবচেয়ে বেশী প্যাচায় ছাগুরা। তারা কিন্তু এটা ভুলে যায় মুক্তিযুদ্ধের আগে ওসমানী একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা হলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচিত একজন এমপি ছিলেন। কিন্তু তারা শেষ বয়সের ওসমানীকে মাথায় নিয়ে প্রশ্ন সাজায়- মজাই লাগে ব্যাপারটা। তো ছবিতে দেখা যাচ্ছে ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি একজন ক্যাবিনেট মিনিস্টারের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। 

তবে ওসমানীর আনুষ্ঠানিক অধিভুক্তিতে একটু সময় লেগে যায়। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন ওসমানী। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে নতুন করে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দিতে হয়। ১৫ জুলাই '৭১ (কাগজে ভুলে ৭০ লেখা) বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আনুষ্ঠানিক কাগজপত্রে ওসমানীকে নতুন করে সেনাবাহিনীতে অধিভুক্ত করা হয়, এবং এতে সাক্ষর দেন উপ-সেনাপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খন্দকার । প্রসঙ্গত একে খন্দকার তখন অ্যাক্টিভ সার্ভিস হোল্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন, আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন তিনিই।

আর অধিভুক্ত হওয়ার কাগজপত্রে ওসমানীর পক্ষে সাক্ষী হিসেবে সই করেছিলেন ২ নম্বর সেক্টর অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ ১৫ জুলাই, ১৯৭১।

এই দেরি হওয়ার কারণ ছিলো বাংলাদেশ সরকারের দাপ্তরিক কাগজপত্র সিল ইত্যাদি তখনও চূড়ান্ত হয়নি। যে কারণে ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগে সাধারণ কাগজপত্রই ব্যবহার করা হয় প্রথমে। তার নিয়োগ অনুমোদন দিয়ে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাক্ষর করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রসঙ্গত তখনও বাংলাদেশ সরকারের সিলসহ দাপ্তরিক কাগজপত্র ছাপা হয়নি।

এখন কেনো কমান্ডার ইন চিফ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নন এই ব্যাপারে খোদ তাজউদ্দিন আহমেদ (যিনি আসলে মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার সেনাপতি) সুন্দর যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন: 'সিএনসির বাংলা তরজমা কিন্তু সর্বাধিনায়ক নয়, প্রধান সেনাপতি। আমাদের সরকার সামরিক নয়। সামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সেনাপতি একই ব্যক্তি থাকেন। এজন্য প্রধান সামরিক শাসক ও প্রেসিডেন্ট তিন বাহিনীর পুরো দায়িত্বে থাকেন। এজন্যই তখন সেনাবাহিনী প্রধানকে সর্বাধিনায়ক বলা হয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় তিন বাহিনীর তিনজন প্রধান থাকেন। রাষ্ট্রপ্রতি তিন বাহিনীর সমন্বয়ক হিসেবে তিনিই হন সর্বাধিনায়ক।‘ তো যেহেতু রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিনিই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা