আপনারা যারা এই মানুষটিকে নিয়ে অনলাইনে ট্রল-ফ্রল করেন, তাদেরকে দেখলে আমার রীতিমত কষ্ট হয়। একটা মানুষ একাই চেষ্টা করছে তাঁর নিজের মতো করে, আর আপনারা তাঁকে নিয়ে ট্রল করেই কূল পান না...

ব্যারিস্টার সুমন ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় আরেক প্রিয় বড় ভাই ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ হিল বাকি ভাইয়ের মাধ্যমে। বাকি ভাই-ভাবী আর আমি একই বাসায় থাকি ম্যানর পার্কে। ঐ বছরই সুমন ভাই, বাকি ভাইরা বার অ্যাট ল ডিগ্রীটা সম্পন্ন করছিলো লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০০৮/০৯ সালের কথা। সেই থেকে সুমন ভাইয়ের সাথে যে হৃদ্যতার সম্পর্ক, আজও তা আছে।

সুমন ভাইদের একই ব্যাচে নানা দেশের ছেলে মেয়েরা ব্যারিস্টার হতে এসেছে। এদের মধ্যে প্রচুর পাকিস্তানী ছাত্র-ছাত্রী। সুমন ভাইরা এই পাকিস্তানীদের সাথে একটা ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে বসলো। পাকিস্তানীদের খুব ধারণা বাংলাদেশীরা ফুটবল খেলতে পারে না এবং খুব সহজেই তাদের হারিয়ে দেয়া যাবে।

সেই ফুটবল টিম

খেলা শুরু হলো ওয়েস্ট হ্যাম মাঠে। ঐদিন খুব সম্ভবত বাংলাদেশ ৫ টা গোল দিয়েছিলো পাকিস্তানকে। পাকিস্তান একটি গোলও দিতে পারেনি। সুমন ভাই একাই করেছিলো ৪ টা গোল, যদি খুব বেশী ভুল না করে থাকি আমি। সুমন ভাই সেই ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে অধিনায়ক ছিলেন। সেইদিন আমি নিজ চোখে সুমন ভাইয়ের ফুটবলের প্রতি প্যশন, ভালোবাসা আর উদ্দীপনা দেখেছিলাম। আহা, ঐদিন পাকিস্তানকে ৫ টা গোল দেবার পর আমাদের সে কি উচ্ছাস! সুমন ভাইকে সবাই কোলে করে ঘুরলেন। সবাই বেশ মজা করলেন সেদিন।

মাঠে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুমন ভাই

আজকে আপনারা যে সুমন ভাইকে দেখেন ব্রীজ ঠিক করছে, ফুটবল একাডেমী গড়ে ফুটবলার বানাচ্ছে, এই সুমন ঠিক আজ হঠাৎ করেই এমন না। বহু আগের থেকে এই মানুষটা তাঁর পিতৃস্থান হবিগঞ্জ-চুনারুঘাটের জন্য কিছু করতে হবে এই চিন্তায় তটস্থ থাকতেন। আমরা যারা সুমন ভাইকে কাছ থেকে চিনি, ব্যক্তিগতভাবে জানি তাঁরা জানেন এই লোক কী পরিমাণ পরিশ্রমী আর ফোকাসড।

আপনারা যারা এই মানুষটিকে নিয়ে অনলাইনে ট্রল-ফ্রল করেন, তাদেরকে দেখলে আমার রীতিমত কষ্ট হয়। একটা মানুষ একাই চেষ্টা করছে তাঁর নিজের মতো করে, চেষ্টা করছে তাঁর এমবিটে যা কুলায় সেটুকু নিয়ে, আর আপনারা তাঁর কত কিছু নিয়ে ট্রল করেন। আপনাদেরকে সৃষ্টিকর্তা হেদায়েত দান করুক, এই কামনা করি। এই মানুষটার প্যান্ট টান দিয়ে যে লাভ নেই, সেটা যারা বুঝেও এমন করেন, তাদের জন্য আমার আসলে করুণা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর হলেন ভাই। আমি সেদিন খুবই উচ্ছাসিত ছিলাম দুই কারণে। এক হচ্ছে প্রিয় বড় ভাই এমন একটি সম্মানের দায়িত্ব পেলেন আর দুই হচ্ছে ট্রাইবুনাল সম্পর্কিত নথি-ডকু (যেগুলো আইনী ভাবে পাবলিকলি দেয়া যায়) এর ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে পারবেন এই ভেবে। এইখানে একটা মজার ব্যাপার শেয়ার না করে থাকতে পারছি না।

সুমন ভাইদের বার অ্যাট ল গ্রুপের একই ব্যাচে ছিলেন মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিব মোমেন। তিনিও ব্যারিস্টার হয়েছেন।একই ব্যাচের দুইজন। একই ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা। একজন লড়ছেন রাজাকারদের বিপক্ষে আরেকজন লড়ছেন রাজাকারদের পক্ষে, এটা আমার জন্য এক দেখার মতো বিষয় ছিলো। সুমন ভাইয়ের এই সমগ্র কাজের পরিধির দিকে তাকালে শুধু মনে হয়, ইশ যদি এইরকম শ'খানেক সুমন জন্ম নিতো দেশে! দেশটা কোথায় চলে যেতো বা যেতে পারতো!

ব্যারিস্টার সুমনের সাথে লেখক ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার

গত বছর সাইবার ট্রাইবুনালে ভাইয়ের সাথে আবার দেখা। নুসরাত হত্যার আসামী ওসি মোয়াজ্জেমকে নিয়ে এসেছে শুনানীর জন্য। সুমন ভাই একাই এই ওসিকে আদালতের সামনে এনে হাজির করেছিলেন। যদিও সেদিন ক্যামেরা ট্রায়াল চলার কারণে সাধারণ দর্শনার্থী আমরা আদালতে থাকতে পারিনি, কিন্তু দেখে শান্তি লেগেছিলো যে সুমন ভাই কাজটা করেছেন।

গত ইলেকশনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নেবার জন্য প্রস্তুতি নিলেও তাঁরই ওই আসন থেকে সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফরাসউদ্দিন সাহেব দাঁড়িয়েছিলেন বলে সম্মান করে সুমন ভাই সরে গিয়েছিলেন। আমি যদিও উনার উপর ব্যাপক রাগ করেছিলাম সে সময় কেন তিনি সরে গেলেন।

সুমন ভাইয়ের জন্মদিনে, আজকেই কথাগুলো বলতে বড় ইচ্ছে হলো। শুভ জন্মদিন সুমন ভাই। আপনি সুস্থ্য থাকুন, আপনি ভালো থাকুন। এই দেশটার বড় দরকার আপনাকে।

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা