বরুণ বিশ্বাস: নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে কোনো আন্দোলন নয়, বরং একক প্রচেষ্টায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন অসামান্য এক বিপ্লব, কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন প্রভাবশালী ধর্ষকের আত্মা। সরকারী চাকরি আর আয়েশের জীবন ছেড়ে মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছিলেন, সেটার মূল্যও তাকে দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে...
গোবরডাঙা স্টেশন, উত্তর চব্বিশ পরগণা। ট্রেনের ভীড় সামলে ছিপছিপে গড়নের মানুষটা নেমে এলেন, ওভারব্রীজটা পার হতে গিয়ে অন্তত জনাপাঁচেক লোকের সঙ্গে কুশল বিনিময় হলো। সাইকেলটা রাখা আছে স্টেশনের বাইরে একটা দোকানে। আজ সঙ্গের ছেলে দুটো নেই, তিনিই বারণ করে দিয়েছেন আসতে। গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠান আছে একটা, লোক দরকার ওখানে। ওভারব্রীজ থেকে নামতেই দুটো ছেলে তার পিছু নিলো, সেটা তিনি বুঝতে পারলেন না। একজন পেছন থেকে ডাক দিলো- 'বরুণদা!' মাঝারি উচ্চতার মানুষটা ঘুরে তাকালেন, আবার প্রশ্ন এলো, আপনি বরুণ বিশ্বাস? লোকটা হাসিমুখেই জবাব দিলেন, 'হ্যাঁ, তোরা?' জবাব এলো না। বরুণ আবার জিজ্ঞেস করলেন, 'তোরা সুঁটিয়ার?' 'না দাদা' বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো দুজনেই। বরুণও আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলেন।
দুটো গুলির আওয়াজ শোনা গেল, পরপর, স্টেশন চত্বরটা কেঁপে উঠলো বিকট শব্দে। অন্ধকার কেটে দুই তরুণের ছুটে পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই দেখা গেল, বরুণ বিশ্বাস নামের বছর চল্লিশের তরুণটি মাটিতে পড়ে আছেন, কাতরাচ্ছেন যন্ত্রণায়, পিঠে দুটো ক্ষত, সেখান থেকে রক্ত ঝরছে অঝোরে। স্টেশনের প্রতিটা মানুষ বরুণকে চেনে, শ্রদ্ধা করে, গত একটা যুগ ধরে বরুণ এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন, নিজের পরিবার, ক্যারিয়ার সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন তিনি গ্রামের মানুষের জন্য। সেই বরুণের গুলিবিদ্ধ আহত শরীরটা আধঘন্টা ধরে স্টেশনে পড়ে রইলো, বরুণ কয়েকবার অনুরোধ করলেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সেই আকুতিতে সাড়া দিলেন না কেউ, পুলিশ কেসে ফেঁসে যাওয়া ভয়ে। আধঘন্টা পরে যখন রেলওয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা এসে বরুণের রক্তাক্ত, নিস্তেজ দেহটা হাসপাতালে নিয়ে গেল, তখন ডাক্তারদের আর কিছুই করার ছিল না।
বরুণ বিশ্বাস কে ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে বছর কুড়ি আগের টাইমলাইনে ফিরে যেতে হবে, স্থান উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার সুঁটিয়া ও তার আশেপাশের কয়েকটা গ্রাম। সেখানে তখন জঙ্গলের রাজত্ব চলছে, মানুষের নয়। খুন, লুটতরাজ, রাজনৈতিক সন্ত্রাস সেখানকার নিয়মিত ঘটনা। আর ধর্ষণ- সেটা তো মুড়িমুড়কির মতো ঘটে চলেছে। আর এসবের কেন্দ্রে ছিল সেখানকার প্রভাবশালী দুই মাস্তান সুশান্ত চৌধুরী ও বীরেশ্বর ঢালী, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এরা। পঁচিশ-ত্রিশজনের একটা দল ছিল এদের, অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করে বেড়াতো দলটা। এদের কুকীর্তির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে আর রক্ষা ছিল না, বাড়িঘরে হামলা, রাতের বেলায় বাড়ির মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া, এমনকি পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সামনেই মেয়েদের ধর্ষণ করাটাও ছিল নিয়মিত ঘটনা।
সুঁটিয়া এবং তার সাথে সাথে বিষ্ণুপুর, গাজনা, কানাপুকুর, কুঁটিপাড়া, পশ্চিম বারাসাত, স্বরূপনগর এর মত কিছু জায়গায়ও সুশান্ত চৌধুরী আর তার দলবলের কোপ পড়েছিল। সরকারী হিসেব অনুযায়ী ২০০০-২০০২ সালের মধ্যেই সুঁটিয়া ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে অন্তত তেত্রিশটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, যদিও বাস্তব সংখ্যাটা একশোর ওপরে বলে এলাকাবাসীর দাবী। ভাবুন একবার, তিন-চারটা গ্রামেই তিন বছরে একশোর বেশি ধর্ষণ! রাজনৈতিক প্রতিপত্তি থাকায় পুলিশও এদের ঘাঁটাতে সাহস পেতো না, উল্টো মামলা করতে গেলে হয়রানির শিকার হতো ভুক্তভোগীরাই। শোনা যায় সুশান্ত চৌধুরী তার ‘কার্গিল পার্টি’র ছেলেদের বলত, “কোন মেয়েটাকে ভাল লাগছে বল। তুলে আন, মস্তি কর। বাকিটা আমি সামলে নেব।” সিনেমার মত মনে হলেও, ঘটনাগুলো বাস্তবেই ঘটেছিল।
একটা ঘটনার কথা বলা যাক। গ্রামে এক বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে, হঠাৎ সুশান্তর দলবল এসে সেখান থেকে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল। মেয়েটির অপরাধ? সে নাকি বলেছে বিয়েবাড়ির ফুচকাটা ভাল নয়। সারা রাত ধরে গনধর্ষন করে রক্তাক্ত এবং অজ্ঞান অবস্থায় তাকে বাড়িতে ফেলে দিয়ে আসা হল। হুমকি দেওয়া হল মেয়েটির পরিবারকে- পুলিশকে জানালেই বাড়ি সুদ্ধু লোক ‘ফিনিশ’ হয়ে যাবে। তার পরের রাতে আবার তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করা হল তাকে। তারপর আবার, আবার। শেষটায় শুধুমাত্র মেয়েকে বাঁচাতেই গ্রাম থেকে পালালেন মা, আশ্রয় নিলেন কলকাতায়- এমনই ভয়াবহ অবস্থা ছিল সুঁটিয়ার।
তবে আচমকা একটা টুইস্ট এলো কাহিনীতে। বন্যাবিধ্বস্ত সুঁটিয়ার হাইস্কুল মাঠে একটা ফ্লাড সেন্টার বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল। সুশান্ত আর তার দলবল এক লাখ টাকা চাঁকা দাবী করলো ঠিকাদারের কাছে। সেই ঠিকাদারও কঠিন লোক, এমন ঘুঘু অনেক চরিয়েছেন তিনি। সরকারের উঁচু পর্যায়ে তার পরিচিত লোক ছিল, সোজা কমপ্লেন করে দিলেন সেখানে। ফলাফল, গদি নড়ে উঠলো সুশান্তের, তাকে যেতে হলো জেলে। এতদিন ধরে দলবল নিয়ে যে অত্যাচার চালিয়ে এসেছে পাষণ্ডটা, সেসবের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে থাকলো এলাকার মানুষ, তৈরি হলো প্রতিবাদী মঞ্চ।
২৭ জুলাই, ২০০২, ‘প্রতিবাদ মঞ্চের প্রথম সভা, কয়েকশো মানুষ হাজির হয়েছে। কিন্ত বক্তৃতা দেয়ার জন্য মঞ্চে যাচ্ছে না।কেউই। কারন সুশান্ত জেলে থাকলেও, তার দলের অর্ধেক ছেলেরা তখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। সমাবেশে একটা চাপা।নীরবতা, এরইমধ্যে জনতার সারি থেকে মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন বরুণ বিশ্বাস, মাইক হাতে নিয়ে গমগমে গলায় বললেন-
“আমরা যদি নিজেদের মা-মেয়ে-বোনেদের সম্মান রক্ষা করতে না পারি, তাদের জন্য আওয়াজ তুলতে না পারি, তাহলে সভ্যসমাজে থাকার যোগ্য নই আমরা। ধর্ষকদের মুখোমুখি হবার সাহস না থাকলে তাদের চেয়েও বেশি শাস্তি হওয়া উচিত আমাদের। সুঁটিয়ার আজকের যে অবস্থা, সেটার পেছনে আমাদের দায় কম নয়। আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়ালে এই দিন দেখতে হতো না! তাই আসুন, আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমাদের মহিলাদের সম্মান রক্ষা করুন।”
পাঁচ মিনিটের ওই একটা ভাষণ বরুণকে নেতা বানিয়ে দিলো। প্রতিবাদী মঞ্চের চেহারা হয়ে উঠলেন তিনি। গ্রামের মানুষের মধ্যে তার তুমুল জনপ্রিয়তা। তবে নেতা হওয়ার বীজ বরুণ বুনে রেখেছিলেন আরও আগেই। ভীষণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন, বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছিল তার। এরপর একইসাথে ডব্লু.বি.সি.এস এবং ডব্লু.বি.এস.এস.সি (স্কুল সার্ভিস) পাশ করার পরেও সরকারী চাকরিতে যোগ দেননি, কারণ ততদিনে নিজের এলাকা আর এলাকার মানুষজনের জন্য কাজ করার এক অদ্ভুত নেশায় পড়ে গেছেন তিনি। যদিও বরুণের জন্ম হবার কথা ছিল বাংলাদেশে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাণ বাঁচাতে ফরিদপুরের ভিটেমাটি ছেড়ে পশ্চিম বাংলায় পালিয়ে গিয়েছিলেন বরুণের মা-বাবা।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে কোনও আন্দোলন নয়, বরং একক প্রচেষ্টায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লব। নারীর মর্যাদা রক্ষার্থেই হোক বা নদী বাঁচানোর আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়াই হোক, বরুণ বিশ্বাস ছিলেন অনন্য। ১৯৯৮ সালে তিনি কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে স্কুলশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতা তার রক্তে মিশে ছিল, মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। ক্লাসে পাঠ্যবইয়ের বাইরেও ছাত্রদের তিনি রাজনীতি আর সমাজের দর্শন সম্পর্কে বলতেন, শোনাতেন মনীষীদের জীবনী। আর বলতেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কথা, শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা।
প্রতিবাদ মঞ্চে বরুণের ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল সুঁটিয়ার মানুষ, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল গণ আন্দোলন, আর সেই আন্দোলনে সবার আগে থাকা লোকটার নাম ছিল বরুণ বিশ্বাস। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তালিকা করা হলো সেইসব পিশাচদের, যারা গত তিনটি বছর ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল গ্রামজুড়ে। বিশাল মিছিল নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ এবং স্মারকলিপি দেয়া হলো, ওপরের আদেশ পেয়ে পুলিশও নড়েচড়ে বসলো, গ্রেপ্তার করা হলো পাঁচজনকে। এদের মধ্যে একজন গ্রামবাসীর হাতে আটক হয়েছিল, তাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলতো জনতা, বরুণই তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন, তাকে শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত উপহার দিয়ে বলেছিলেন, 'জেলে বসে পড়িস!'
গ্রামের লোকজনকে সচেতন করার জন্য বরুণের চেষ্টার অন্ত ছিল না, সকলের হাতে লিফলেট গুঁজে গণধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন সুশান্ত গ্রেপ্তার হবার আগেও, তখন কেউ সাহস করেনি তার পাশে দাঁড়াতে। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ধর্ষিতা মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা এবং তাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করা, কাউন্সেলিং করা, নদী ভরাটের প্রতিবাদ, বিভিন্ন অসুবিধা সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো- এসবের নেপথ্যে ছিলেন এই প্রতিবাদী যুবকই। মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে নিজে বিয়েথা করেননি। এলাকার তরুণদের বিনে পয়সায় টিউশন করাতেন, নিজের বেতনের প্রায় সবটাই দান করে দিতেন গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য। তার রুমে একটা চৌকি ছিল, এক বৃদ্ধা শীতে কষ্ট পাচ্ছেন শুনে সেটাও বৃদ্ধাকে দান করে দিয়েছিলেন। নিজে ঘুমাতেন প্লাস্টিকের ওপরে কাঁথা বিছিয়ে।
অপরাধীরা গ্রেপ্তার হলেও তাদের ষড়যন্ত্র থেমে ছিল না, জেলের ভেতরে বসেই ঘোঁট পাকাতে লাগলো বরুণকে শেষ করে দেয়ার জন্য। ক্লাস নেয়ার জন্য গ্রাম থেকে কলকাতায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করতেন বরুণ, পথেই তাকে শেষ করে দেয়ার প্ল্যান করা হয়। আঠারো বছরেরও কম বয়েসী দুই কিশোরকে হাতে পিস্তল আর টাকা ধরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় বরুণকে শেষ করে দেয়ার, যাতে তারা ধরা পড়লেও শাস্তি বেশি না হয়, কিশোর আইনে বেঁচে যায়। সেটাই হয়েছিল পরে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, আধঘন্টা ধরে বরুণ স্টেশনে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করেছেন, যে মানুষগুলোর জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন বছরের পর বছর ধরে, তারাই কেউ এগিয়ে আসেনি বরুণকে বাঁচাতে।
হাসপাতালের মর্গ থেকে জুলাইয়ের ছয় তারিখ (২০১২) বিকেলে বরুণের লাশটা যখন সুঁটিয়ায় নিয়ে আসা হয়, তখন কিন্ত মানুষের ঢল ভেঙে পড়েছিল গ্রামে। প্রায় চল্লিশ হাজার লোক যোগ দিয়েছিল তার শেষযাত্রায়। ক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়েছিল পুলিশ ফাঁড়িতে, এলাকায় ডাকা হয়েছিল হরতাল। মুখ্যমন্ত্রীর আদেশে জোরেশোরে শুরু হয় তদন্তের কাজ। সেই তদন্তেই উঠে আসে, জেলে বসে সুশান্ত চৌধুরীই মাস্টারপ্ল্যান সাজিয়েছিল বরুণকে সরিয়ে দেয়ার। যদিও বরুণ বিশ্বাস ন্যায়বিচার পাননি আজও। সুশান্ত জেলেই মারা গেছে, তার ওপর হামলা চালানো একজন তিন বছর কিশোর সংশোধনাগারে কাটিয়ে বেরিয়ে গেছে, তারপর আরেকটা খুন করে আবার গ্রেপ্তার হয়েছে। বরুণের হত্যাকান্ডের সঙ্গে মন্ত্রীর যোগসাজশ আছে- এমন মন্তব্য করায় মানহানি মামলার হাজিরা দিতে প্রতি মাসে কোর্টে যেতে হচ্ছে বরুণের বোন প্রমীলা রায়কে।
বরুণ মারা যাওয়ার পরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তাকে নিয়ে প্রকাশিত খবরের শিরোনামে লিখেছিল- ‘Man who gave the poor a voice now silenced.’ সত্যিকার অর্থেই বরুণ গরীব-মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর ছিলেন, জনগণের কণ্ঠ ছিলেন, যে আওয়াজ প্রভাবশালীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে বারবার। বরুণ বিশ্বাসের কথা পশ্চিমবঙ্গের অজস্র মানুষ জেনেছে যখন রাজ চক্রবর্তী 'প্রলয়' নামের সিনেমাটা বানিয়েছেন বরুণের ঘটনা নিয়ে, তখন। নইলে মোটাদাগে বরুণকে লোকে ভুলে গেছে বললেও ভুল হবে না, বরুণের প্রতিবাদী চেতনাও অস্তমিত আজ। কবে কে কার জন্য প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিল, সেসব মনে রাখার ঠ্যাকা কার পড়েছে?
তবু মিত্র ইন্সটিটিউশনের কাঠের বেঞ্চগুলোতে শোভন+স্বর্ণালী টাইপের আঁকিবুঁকির জায়গায় আজও খোদাই করে লেখা থাকে ‘প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাস, তোমায় ভুলি নাই’ লাইনগুলো। পিঠে গুলি করে মানুষকে মেরে ফেলা সহজ, চেতনাকে তো গলাটিপে মারা যায় না কখনও। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রতিবাদে দ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে বরুণ বিশ্বাস ছিলেন, আছেন, থাকবেন চিরকাল...
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন