৪১তম বিসিএসের ইঁদুর দৌড়ে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৯ দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এখন চিন্তার বিষয়, আমরা এমন এক পরীক্ষার্থী জেনারেশন তৈরি করে ফেলেছি যার সংখ্যা সমষ্টি ছোটখাটো দেশগুলোর জনসংখ্যাকে পেছলে ফেলে দিতে পারে। এতোটাই বিশাল শিক্ষানবিশ প্রজন্ম আমাদের।

বড় হয়ে তুমি কী হতে চাও? এই প্রশ্ন শুনে বড় হয়নি এমন কেউ নেই। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে জগতের সকল যাবতীয় সফল পেশার লিস্ট নিয়ে তৈরি থাকেন অনেকেই। লিস্টে সেরাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনারা কী হতে চান? তারা বলবে বিসিএস ক্যাডার। ৪১তম বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থীর আবেদন কিন্তু তাই প্রমাণ করে দেয়। গতকাল ৪ই জানুয়ারী শনিবার আবেদনের শেষ দিনে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থীর আবেদনপত্র জমা পড়েছে।

আবেদনকারীর সংখ্যা এত বাড়ার কারণ কী? জানতে চাইলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘বিসিএসের প্রতি তরুণদের আগ্রহ ও আস্থা বাড়ছে। এ কারণে এবার যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে।’ সর্বশেষ জনসংখ্যার তালিকা থেকে দেখা যায়, বিশ্বের যতগুলো দেশ রয়েছে তার মধ্যে ৫৯টি দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ৪ লাখেরও কম! অর্থাৎ, ৪১তম বিসিএস এর ইঁদুর দৌড়ে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৯টি দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এখন চিন্তার বিষয়, আমরা এমন এক পরীক্ষার্থী জেনারেশন তৈরি করে ফেলেছি যার সংখ্যাসমষ্টি ছোটখাটো দেশগুলোর জনসংখ্যাকে পেছলে ফেলে দিতে পারে। এতটাই বিশাল শিক্ষানবিশ প্রজন্ম আমাদের! আরব্য রজনীর সেই আশ্চর্য প্রদীপের কথা আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই। কিংবা যাদুর কোনো পরশপাথর। বিসিএস বর্তমানে তার চেয়ে কম কিছু না। যার ছোঁয়ায় রয়েছে জীবন বদলে যাওয়ার গ্যারান্টি। শাহরুখ, সালমানকে পেছনে ফেলে টগটগে সেনসেশন এখন বিসিএস। পাত্র/পাত্রীপক্ষের প্রথম পছন্দ। সাফল্যের ডিরেক্ট ভিসা। আর কী চাই!

সকাল না হতেই পাবলিক লাইব্রেরিতে ভিড়!

বিসিএস ছাড়াও, প্রায় ৫ লাখ কোয়ালিফাইড আবেদনকারীকে আর কী কাজে লাগানো যায় আসুন সেটা ভাবা যাক! এদের দিয়ে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। দেশে বিদেশে তো মূর্খের অভাব নেই। দেশের মধ্যেই একটা ডেভেলপড দেশ গড়ে তোলা যায়। যেকোনো দেশের সামরিক বাহিনীকে টক্কর দেয়া যাবে এই সংখ্যা দিয়ে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশ। স্বল্পশিক্ষিত দেশসমূহে রপ্তানি করা যাবে তাদের। আর কতদিন গার্মেন্টস বা মেডিসিন নির্ভর হয়ে থাকবো আমরা। আর কিছু না হলে, বিশ্বের অব্যবহৃত অঞ্চলসমূহে তাদের পাঠিয়ে দিয়ে এডভান্সড জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা যায়!

আচ্ছা, এবার কিছুটা সিরিয়াস হওয়া যাক। আমরা যে অনুপাতে শিক্ষানবিশ প্রজন্ম গড়ে তুলেছি, সে অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র নেই আমাদের দেশে। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষিত প্রজন্ম দিয়ে আমরা কী করবো যদি তাদের কাজেই না লাগাতে পারি। এই বিসিএসমুখী প্রজন্মকে সফলতার স্বাদ না দেয়া গেলে তখন ঐ ৫৯টি দেশের জনসংখ্যার চেয়েও এদেশে হতাশাগ্রস্তদের সংখ্যা বেশি হবে। ব্যাপারটা কিন্তু ভেবে দেখার সময় চলে যাচ্ছে।


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা