ভাইরাসকে রাইফেল দিয়ে মোকাবেলা করা যায় না। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে নিরাপত্তা পোশাক লাগে, লাগে প্রটেক্টিভ গিয়ার। সেনা সদস্যদের প্রটেকটিভ গিয়ারের কথা কেউ কি ভেবেছেন?

'আর্মি নামছে'- যত ঘোর বিপদেই থাকুন, খেয়াল করে দেখবেন, এই একটা বাক্য  আপনার মনে সুদৃঢ় এক মনোবলের জন্ম দিয়ে দেয়। আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন- রাস্তায় আর্মি নেমেছে, বিপদ কেটে যাবে। এর কারণ কী?  ওরাও তো আপনার-আমার মতোই  এই দেশেরই সন্তান। অন্য কোনো ফোর্সকে যখন ভরসা করা যায় না, তখন ওরা কীভাবে  গণমানুষের এতটা ভরসার জন্ম দিল?

ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে খুব আহামরি পজিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নেই, তাদের নেই  বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আধুনিক অস্ত্র, পাওয়ার মিসাইল। আছে শুধু একটা জিনিস, কলিজা। ডিউটি ফার্স্ট। 

গৃহযুদ্ধে দেশ অচল, শান্তির বার্তা নিয়ে  যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে কেউ যেতে চাইছে না? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে দেয়। তখন জীবন বাঁচানোর কৃতজ্ঞতায় সেই দেশ বাংলা ভাষাকে  তাদের দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা প্রদান করে। পাহাড় ধ্বসে জনপদ বিলীন? আর্মিকে বলো, তারা এসে দুদিনে আগের চেয়েও ভালো রাস্তা বানিয়ে দিবে। টর্নেডো, বন্যা, ঝড়ের  মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা চরম সামাজিক অস্থিরতা, প্রথমেই স্মরণ করে বলি- আর্মিকে ডাক দাও, ওদের ছাড়া হবে না। 

নভেল করোনার মহামারী প্রকোপে দেশ টালমাটাল। চতুর্দিকে মারাত্মক মিসম্যানেজমেন্ট, দায়িত্বহীনতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা, চিকিৎসা অনিশ্চিত।  ভরসা যোগানোর কেউ নেই। আবারও আর্মির শরণাপন্ন। বিমানবন্দর থেকে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের আশকোনার হাজীক্যাম্পে আর্মির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। এছাড়াও উত্তরা দিয়া বাড়িতে এক হাজার শয্যার কোয়ারেন্টিনের  দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। পরিস্থিতি যখন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সেই আর্মিকেই মাঠে নামানো হয়েছে।

লকডাউনের দিকে এগুলে খুব শীঘ্রই তাদের আরও অনেক অনেক সহায়তার প্রয়োজন হবে। ওদের ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবেলার ভিন্ন উপায় আমাদের জানা নেই। সেনা সদস্য যারা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে নেমেছে, তাদের প্রত্যেককে পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট কি দেয়া হয়েছে? সেনা সদস্যদেরও পরিবার রয়েছে, একজন সেনার ঘরেও তার শিশু সন্তান রাতে না খেয়ে বাবা ফিরে আসার অপেক্ষায় চেয়ে থাকে। সেনা সদস্যদের ঘরেও থাকেন  বৃদ্ধ পিতা, অসুস্থ মা। 

দেশকে ভাইরাসমুক্ত রাখার লড়াইয়ে যারা আপনার হয়ে সম্মুখে লড়ছেন, তাদের লড়াইয়ের উপাদানের কী হবে? ভাইরাসকে রাইফেল দিয়ে মোকাবেলা করা যায় না। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে নিরাপত্তা পোশাক লাগে, লাগে প্রটেক্টিভ গিয়ার। সেনা সদস্যদের প্রটেকটিভ গিয়ারের কথা কেউ কি ভেবেছেন? 

সেনাবাহিনী জেগে থাকে বলে, আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা