যে দেশে, যে ধর্মীয় বিশ্বাসীদের কারণে একটি শিশুকে কবর থেকে উঠিয়ে তার লাশ রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়, সেই দেশের অধিবাসী, সেই বিশ্বাসী- ধ্বংস হোক।

হায়া সোফিয়া (Hagia Sophia) কে তুরস্ক সরকার মসজিদে রুপান্তরের ঘোষণা দিয়েছে। মূলত এটি খ্রিস্টান ক্যাথেড্রাল হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে অটোমান সুলতান মাহমুদ ইস্তাম্বুল দখল করার পর এটি মসজিদে পরিণত করেন। ১৯৩৪ সালে আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল আতাতুর্ক এটিকে যাদুঘরে পরিণত করেন। সেই থেকে হায়া সোফিয়া সমগ্র বিশ্বে সেক্যুলারিজমের প্রতীক হিসেবে পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হিসেবে টিকে আছে।

কিন্তু বর্তমান এরদোগান সরকার এটিকে পুনরায় মসজিদে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হায়া সোফিয়ার মতো একটা স্থাপত্য সমগ্র মানব জাতির সম্পদ। এটি একটি ধর্মীয় স্থাপনার থেকেও বেশি কিছু। আফসোস, কামাল আতাতুর্কের তুরস্কের প্রধানের আবার অটোমান সম্রাট হবার বাসনা পেয়ে বসেছে। এটা মানব জাতির জন্য একটি ভুল সিদ্ধান্ত।

এদিকে আমার দেশে একটি সদ্য মৃত শিশুর লাশ কবর থেকে তুলে গোরস্থানের বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। মৃত শিশুটির অপরাধ? শিশুটি 'আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের' সদস্য। আচ্ছা একটি শিশু, যে ঠিক মতো তাকাতেও শিখেনি এই পৃথিবীতে, সে কোন ধর্মের বা সম্প্রদায়ের হতে পারে? শিশুটির পিতা আহমাদিয়া বলে, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বিশ্বাসের থেকে তার বিশ্বাস কিছুটা আলাদা বলে, কবর দেয়া একটা শিশুর লাশ কবর খুঁড়ে বের করে বাইরে ফেলে দেয়া হল? এ কেমন ধর্ম? এ কেমন ধার্মিক? এত হিংস্রতা আর ঘৃণার বসবাস কোন ধার্মিকের অন্তরে?

এটা আজকের দিনের শুধু নয়, এই বছরের সব থেকে ন্যাক্কারজনক সংবাদ বলে আমি মনে করি। একটি দেশে কেবল পিতার ধর্মীয় বিশ্বাস আমার সাথে বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক বলে, একটি শিশুর লাশ কবর থেকে তুলে ফেলে দেয়া হয়। এখানে আপনার ধর্মের অবমাননা হয়েছে কি? কই কাউকে তো দেখলাম না ধর্মের এহেন অবমাননার প্রতিবাদ করতে।

ব্যক্তি জীবনে বদ্ধ ঘরের আড়ালে কে কার সাথে সেক্স করলো- তাতে ধর্মের অবমাননা হয়, কেউ আপনার অযৌক্তিক বিশ্বাসকে প্রশ্ন করলে ধর্মের অবমাননা হয়, একটি শিশুর লাশের অবমাননা হলে সেটা আপনার ধার্মিক মনকে কি একটুও নাড়া দেয় না? নাকি মনে হয়, আহমাদিয়াদের সাথে এমন করা ঠিকই আছে?

যে দেশে, যে ধর্মীয় বিশ্বাসীদের কারণে, একটি শিশুকে কবর থেকে উঠিয়ে তার লাশ রাস্তায় ফেলে দেয়া হয় সেই দেশের অধিবাসী, সেই বিশ্বাসী- ধ্বংস হোক। সেই মানুষ ধ্বংস হোক। যদি স্রষ্টা থেকে থাকে, যদি প্রকৃতির বিচার বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকে, তবে ধ্বংস হোক আমাদের এই ইউটোপিয়ান স্বর্গীয় আবাস। আর যদি অস্তিত্ব না থাকে, কোন মহান সত্তার বা প্রাকৃতিক বিচারের, তবে আমরা যেন একবার হলেও ক্ষমা চাই, নিজেদের কাছে।

*

 

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন

আরও পড়ুন-


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা