প্রশাসনের দায়িত্ব- অথচ পালন করছে বিদ্যানন্দ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

যে কাজগুলো প্রশাসনের করবার কথা- সেগুলোই করছে একটি শিক্ষা সহায়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ভাবাটা কিন্তু খুব সহজ, তবে কাজটা করে দেখানো বেশ কঠিন। আর এই অসাধ্যকে সাধন করতে মাঠে নেমেছে তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা।
যে কাজগুলো প্রশাসনের করবার কথা- সেগুলোই করছে একটি শিক্ষা সহায়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন! ৪০ জন কর্মকর্তা, কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা আটটি শাখা, নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনাথাশ্রম আর পরিপূর্ণ স্কুলের স্বপ্ন দেখছে বিদ্যানন্দ। বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই উঠে এসেছেন সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণী থেকে, নিজের উদ্যোগে আর অর্থায়নে শুরু করলেও এখন এটি শত মানুষের আশির্বাদে চলছে।
দূরপাল্লার বাসে হয়তো ছুটবে আপনারই কোন প্রিয়জন, প্রিয় মানুষের কাছে, আপন ঘরে। যাত্রাপথে হয়তো অজ্ঞাতে বয়ে নিবে করোনাভাইরাসের জীবাণু,এতে ঝুঁকিতে থাকবে আপনার পরিবার। তাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিদ্যানন্দের উদ্যোগে অ্যালকোহল ছিটানো হয় বাস এবং ট্রেন ষ্টেশনে। ঝুঁকি নিয়ে ছুটছে স্বেচ্ছাসেবকরা শেষ রাত থেকে, কিছুটা হলেও সচেতন করছে মানুষদের। শুধু স্টেশন বা টার্মিনাল নয়, স্কুল, সরকারি অফিস, মসজিদ- প্রতিটি স্থানে কাজ ছেটানো হচ্ছে জীবাণুনাশক। প্রতিদিন লাখ টাকার অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়, তবুও চেষ্টা চলছে করছি কাজটি চালিয়ে নেবার।
শুধু জীবাণুনাশকই নয়, বিদ্যানন্দ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিনামূল্যে পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুয়িপমেন্ট) বিতরণের। বিদ্যানন্দ টিম ইতিমধ্যে এক হাজারের গাউন সেলানোর কাজ শুরু করেছে। এক বহুজাতিক কোম্পানি অতিরিক্ত তিন হাজারের বেশি গাউন তৈরির জন্য উৎসাহ দেখিইয়েছে, সেটা হলে মোট পাঁচ হাজার গাউন বিতরণের আশা করা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে যাত্রীদের হাত ধোয়ার জন্য সেটআপ বসিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। লাখ মানুষ অতিক্রম করে এই পথ দিয়ে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই উদ্যোগে যদি জনসাধারণের সামান্য উপকার হয় তবে বিদ্যানন্দের চেষ্টা সার্থক হবে।
নাগরিকদের মৌলিক চাহিদার কোনটাই বাদ রাখছে না বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। একে একে সব মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণে উদ্যোগ নিচ্ছে তারা। এরই প্রমাণ মিলছে তাদের প্রতিটা প্রজেক্টে। গত বইমেলায় পুরাতন জিনিসের বিনিময়ে বই দিয়েছে বিদ্যানন্দ। আর এই সংগ্রহ দিয়ে পার্বত্যঞ্চলে এতিমদের জন্য তৈরি করেছে কম্পিউটার ল্যাব। উত্তরাঞ্চলের দুস্থ মানুষদের জন্য পরিচালিত হয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প।

মেয়েদের জন্য আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করেছে তারা। চাকরীর ইন্টার্ভিউ, ভর্তি পরীক্ষা কিংবা চিকিৎসার কারণে অনেক নারীর বাসস্থানের প্রয়োজন হয়। দুই এক রাত থাকার জন্য নিরাপদ বাসস্থান পাওয়া দুস্কর। কিন্তু ঘরের বাইরে মেয়েদের নিরাপদ আবাসন কই? ছেলেরা বোর্ডিং খুঁজে নিলেও মেয়েদের ভরসা শুধুমাত্র আত্মীয় কিংবা দামী হোটেল। এই অবস্থা থেকে নারীদের পরিত্রান দেবার জন্য তারা বাসস্থান তৈরি করেছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম সমুদ্র সৈকতের আবর্জনা দিয়ে তারা বইমেলার স্টল বানিয়েছিলো।
গত সিটি নির্বাচনের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। সেই নির্বাচনী পোষ্টারের পেছনের সাদা অংশ দিয়ে বানানো হয়েছে এতিমদের লেখাপড়ার খাতা। এবং পোষ্টারের লেমিনেশনে ব্যবহৃত পলিথিন দিয়ে প্যাকেট করা হয়েছে বিতরনের জন্য শীতবস্ত্র। পোষ্টারের উচ্ছিষ্ট দড়ি ব্যবহার করা হয়েছে চাল-ডালের প্যাকেট বাঁধতে। সাথে বিদ্যানন্দের এক টাকায় আহার প্রজেক্টের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়। এভাবে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ এমন বড়ো পরিসরে আর কেউ করেনি। উল্লেখ্য, এটি একটি চলমান প্রজেক্ট।
ভাবাটা কিন্তু খুব সহজ, তবে কাজটা করে দেখানো বেশ কঠিন। আর এই অসাধ্যকে সাধন করতে মাঠে নেমেছে তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা। তারা সারাদিন শহরজুড়ে ঘুরে ঘুরে, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার এই মিশনে নেমেছে এ দেশটিকে পথ দেখাতে।
দেশকে বদলানোর কথা আমরা সবাই কমবেশি বলেই থাকি। দেশের জন্য কাজ করে দেখানোর সময় অধিকাংশই ঠনঠন, মাছি ভনভন। এই কাজটাই যারা করে যাচ্ছে তাদের জন্য ধন্যবাদ, সম্মান, শুভকামনা কিংবা ভালবাসা যথেষ্ট নয়। যে যেভাবে পারি, যার অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব এই মানুষগুলোকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। দেশটা আমাদেরই, তাই খেয়ালটাও তো আমাদেরই রাখতে হবে।