বাংলাদেশি যাত্রীবাহী বিমান আর ভ্রাম্যমান চিড়িয়াখানার মধ্যে কোনও পার্থক্য নাই।
আমরা একটা অসভ্য জাতি। এ লাইনটা পড়ে অনেকে গালাগালি দিয়ে আবারও প্রমাণ করে দেবে ব্যাপারটি। আর আমাদের অসভ্যতার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় আকাশে, যে কোন বিমান ভ্রমনে। আর বাংলাদেশ বিমান হলে তো কথাই নেই। একদম হোমগ্রাউন্ড। বাপ-দাদার কেনা সম্পত্তি। তাই ইচ্ছেমত ভেঙে চুরে খেলো, সরকারি মাল, দরিয়ায় ঢাল।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়ার সচিব মোহাম্মদ মহিবুল হক এর একটা ইন্টারভিউ দেখলাম। সেখানেও তিনি একই কথা বলেছেন। সাড়ে ১২শো কোটির ব্র্যান্ড নিউ বিমানটা যখন প্রথম ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে গেলো, সেখানকার ক্লিনাররা পর্যন্ত বিমানটা পরিস্কার করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলো। কারণ? যারা বাংলাদেশি যাত্রী ছিলো তারা পান খেয়ে ভিতরে পিক ফেলেছে, থুথু ফেলেছে, খাবারের উচ্ছিষ্ট এদিক সেদিক পড়ে আছে, সিগারেট খেয়ে ছাই-মাথা সব ফেলেছে, পুরো প্লেনটাই নোংরা করে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছে।
টয়লেট এর কথা নাই বা বললাম। দরজাই ভেঙে ফেলেছে টয়লেটের। বুঝে নিন অবস্থা। এরাই যখন আবার অন্য এয়ারলাইন্সে বসে তখন জেন্টেলম্যান হয়ে বসে থাকে। বাংলাদেশ বিমানে উঠলেই এরা এটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে। এই মানসিকতা পরিবর্তন না করলে তো হচ্ছে না। লন্ডন থেকে সেই প্লেন যখন ফেরত এসেছিলো, তারা সামনের সিটের দুইটা মনিটর ভেঙে ফেলেছিলো। বিমানে বসে সিটের মনিটরের সাথে যুদ্ধ করার কোনো দরকার আছে? তারা নিজেরাই ভালো ব্যবহার করছে না, কিভাবে তারা ভালো ব্যবহার আসা করতে পারে? আপনি বিমানে যখন বসবেন তখন এটাকে নিজের সম্পত্তি না ভেবে সম্পদ ভাবতে হবে। দেশের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে হলে আপনার মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
সচিব সাহেবের এই কথাগুলো রূঢ় হলেও সত্য। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে প্রেক্ষাপট এর চাইতেও ভয়াবহ। বাংলাদেশি যাত্রীবাহী বিমান আর ভ্রাম্যমান চিড়িয়াখানার মধ্যে কোনও পার্থক্য নাই। অনেকে ভাববেন বৈষম্যমূলক কথাবার্তা বলছি। নিজে কখনও ভ্রমন করলে এই অভিজ্ঞতা থাকার কথা। এখানে আসলে ধনী-গরীব এর কোনও ফারাক নেই, প্রবাসী শ্রমজীবীদের যেমন এই আচরণ করতে দেখেছি, খুব ধনী ব্যবসায়ীরাও ঘুরেফিরে ঐ একই কাজ করেছে।
বিমান ছাড়ার পর এরা সবাই টয়লেটের দিকে লাইন ধরে, দেখলে মনে হয় হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে হিসু করা জন্যই এসেছে। আর টয়লেট ব্যবহারের নূন্যতম সেন্স তো এদের ভেতর বিন্দুমাত্র নাই। খোলা ময়দান আর বদনাই ঠিক আছে এসব যাত্রীর জন্য। আর প্লেন ল্যান্ড করার আগে এদের তাড়াহুড়া দেখে কে! ভাই রে ভাই, কারা এরা? উসাইন বোল্টের বংশধর? প্লেন নামলাই সব লাগেজ নিয়ে দে দৌড়!
যেসব যাত্রী বাংলাদেশ বিমানে এমন আচরণ করেন, এরা অন্য এয়ারলাইন্সে গেলে যে খুব একটা সাধু হয়ে যান তাও না। তবে তখন এদের মধ্যে কিছুটা হলেও ভয় থাকে, যেটা বাংলাদেশ বিমানে চড়লে থাকে না। এই মানুষগুলোর জন্য বাঙালি দেখলেই বিদেশীরা তাচ্ছিল্য করার কারণ পায়।
যে দেশে ম্যানহোলের ঢাকনা/ল্যাম্পোস্টের লাইট চুরি হয়ে যায়, সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন নিজেরাই গায়েব করে ফেলি। সেখানে কয়েকশ' কোটি টাকার প্লেন খেয়ে ফেলার লোভ সামলানো আসলেই কঠিন। খুব কঠিন।
আরও পড়ুন- আমরা এতো অসভ্য কেন?