শুধু খামচায়নি, কতক্ষণ পর নিজের যৌনাঙ্গটা জোর করে আমার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। আজও মনে হলে বমি চলে আসে। কতক্ষণ পরে এসে একটা হেচকা টানে আমার পরনের লুঙীটা খুলে তার এক মাথা আমার চুলে বেধে অন্য মাথা ফ্যানের সাথে বেধে ফ্যানের সুইচ অন করে দেয়।

বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান সে। খুব সম্ভবত গায়ের রঙ দেখেই দাদী বলেছিলেন এই মেয়ে আমার বংশের নাম উজ্জ্বল করবে। ঘরের প্রথম সন্তান মেয়ে হলে সংসারে বরকত বাড়ে। তাই হুজুর পাক (সা) এর মেয়ের সাথে মিল রেখে নাম দিয়েছিল ফাতেমা। সবাই আদর করে ডাকতো বিবি ফাতেমা। খুলনার খালিশপুর এর কাছে সোনাডাঙায় বাড়ি।

শেখ মুজিব ছয় দফা আন্দোলনের বছর মেট্রিক দেয় সে। রাজনীতি অতশত বুঝে না, কিন্তু বুঝে শেখ মুজিব। সেও আন্দোলনে যোগ দেয়। তারও সায় যে আমার পাট বিক্রি করে ইসলামাবাদ চকচক হবে তা হবে না। ছিল শেখ মুজিবের গোঁড়া ভক্ত। ৭০ এর নির্বাচনে শেখ মুজিব একবার এসেছিল খুলনায়, অবশ্য শেখ মুজিব তত দিনে আর শেখ মুজিব নাই, তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে গেছেন। তো যেভাবেই হউক বঙ্গবন্ধুকে দেখতে সে গান্ধী পার্কের উঁচু দেয়ালটাতে চরে বসে। সবাই গুন্ডা মেয়ে গুন্ডা মেয়ে বলে নামতে বলে। এত বড় মেয়ে এত ছেলের মধ্যে কী? তার এক কথা- আপনারা যাই বলেন আর করেন, বঙ্গবন্ধু না দেইখা আমি যামু না।

বাড়ি ফিরে মা খেতে ডাকে, না বিবি খাবে না তার পেট ভরে গেছে। মাকে বলে- মা তুমি ঘরে থাইকা কি যে ভুল করলা চাইর দিকে মানুষ আর মানুষ। আর মা বঙ্গবন্ধু! মা কি যে চোখ তার মনে হয় আগুন বাইর হইবো। আইজকা আমার না খাইলেও চলবো।

৭১ এ আইএ দেবার কথা, কিন্তু বিবি ফাতেমা ঠিক করেছে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলে সে এ বছর পরীক্ষা দিবে না। সারা বছর আনন্দ ফুর্তি করবে। আগামী বছর পরীক্ষা দিবে। আর ৭০ এর নির্বাচনে সব ভোটই শেখের বাক্সে সুতরাং এখন পড়াশুনা না করলেও চলে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো সময় বেশ।

আজকাল ফাতেমার সাথে বিহারী নাসির খানের প্রায় ঝগড়া হয়। নাসির খান সব সময় বাঙালিদের বাঙাল কুত্তা বলে এই নিয়ে। ফাতেমা ভাবে, দাঁড়াও, আমাদের বঙ্গবন্ধু খালি ক্ষমতায় বসুক! তখন তোমারে আমি দেখামু কে কুত্তা, কে কী। এর মাঝেই চলে আসে ২৫ শে মার্চের কালো রাত। সোনাডাঙ্গার কিছু না হলেও গুজব আসতে থাকে ঢাকার। পরে বুঝতে পারে সেসব গুজব ছিল না। সত্য এর চেয়েও ভয়ানক ছিল।

এপ্রিলের শুরুতে মিলিটারি জিপের আওয়াজ শুনে পুরো এলাকাবাসী গ্রামের দিকে পালাতে থাকে। তার সবচেয়ে ছোট ভাই পোনা ছিল ফাতেমার কোলে। ভাইকে কোলে নিয়ে সে বেশি জোরে পালাতে পারলো না। সেই নাসির খান ধরে ফেললো। বাঁচার জন্য একটু জোর করাতে রাগে সে পোনাকে সজোরে আছাড় মারে। দুই বছরের পোনার মাথা থেকে মগজ আলাদা হয়ে পরে থাকে। এ দৃশ্য দেখে ফাতেমার সব শক্তিই হারিয়ে গেলে। তার চুলের গোছায় টানতে টানতে মুল রাস্তা দিয়ে বিহারী পাড়ায় নিয়ে আসে নাসির খান। বাপ ছেলে মিলে কখনো একা বা কখনো দুইজন একসাথেই ধর্ষণ করে।

এভাবে চলে কয়েকদিন। তারপর যখন পাকিস্তানিদের হাতে তাকে তুলে দেয়া হয়, সে আর আগের মতো পবিত্র নাই। হয়ে গেছে নাসির খান আর তার বাপের উচ্ছিষ্ট। ফাতেমার চোখ বন্ধ। সে জানে না তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার সাথে ট্রাকে আরো ৬-৭ জন হবে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সে মানুষের হাততালি শুনতে পায়। সে আজও ভাবে সেখানে কি কোন বাঙালী হাততালি দিচ্ছিলো?

নতুন যে ঘরে ফাতেমাকে নিয়ে আসা হয়, ঘরটা বড়; এখানে আগে থেকেই কিছু মেয়ে আছে। জাদরানী এসে তাকে কাপড় দিয়ে যায়। সে গোসল দিয়ে এসে দেখে তাদের খাবার দেয়া হয়েছে। তার মনে পরে বাড়িতে কতদিন দুধভাত খায়নি, ফেলে দিয়েছে! আর এইখানে এরা যাই দেয় পেট পুরে খায়। আসলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় ভালোভাবে। যাতে এখান থেকে যখনই মুক্তি পাবে সেদিনই নাসিরের উপর প্রতিশোধ নিতে পারে। এ বিশ্বাস তার আছে সে মুক্ত একদিন হবেই হবেই।

ফাতেমা তার জীবনে কখনো গণহত্যা দেখেনি। কিন্তু গণধর্ষণ কতবার দেখেছে তার হিসেব নেই। দেখেছে কি, সে নিজে কতবার গনধর্ষণের শিকার হয়েছে সে নিজেও জানে না। আজকাল আর পাকি শুয়োরের অত্যাচার গায়ে লাগে না। আসলে ধর্ষণের শিকার হতে হতে অনুভূতিগুলোই ভোঁতা হয়ে গেছে। এই ক্যাম্পের এক সিপাহী আছে। চেহারা সুরাত মানুষের মত হলেও আসলে মানুষ না, পশুর চেয়েও অধম। যখনই আসে খুব মারধর করে। আর সবচেয়ে বেশি মারা হয় ফাতেমাকে।

কারণ তার চোখ দেখে বোধহয় এ পশু বুঝে ফেলে এদের জন্য এ চোখ দিয়ে বের হয় চরম ঘৃনা। যখনই সিপাহী ফাতেমার পাশ দিয়ে যায় কমপক্ষে তার পেট বরাবর একটা সজোরে লাথি মারে। একেকদিন এই সিপাহী মাতাল হয়ে আসে ফাতেমার কাছে। ফাতেমার শুধু মনে হয় মুসলমানের না মদ খাওয়া হারাম। মনে হয় সকল হালাল হারাম শুধু মাত্র বাঙালী মুসলমানের জন্য। এসেই ফাতেমার পরনের গেঞ্জি খুলে খামচাতে খামচাতে তার পিঠ ও মুখ কেটে ফেলে (বাকি অংশ ফাতেমার নিজের ভাষ্য মতে। তা নাহলে কেউ এই অত্যাচার বুঝবে না।)

তারপর কি হলো বলতেও লজ্জা লাগে। কিন্তু বলতে হবে না হলে এরা কোনদিন জানবেও না কি পরিমান অত্যাচারিত হয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। শুধু খামচায়নি, কতক্ষণ পর নিজের যৌনাঙ্গটা জোর করে আমার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। আজও মনে হলে বমি চলে আসে। আমিও শরীরে যতোটুকু শক্তি ছিল তাতেই তার পুরুষাঙ্গ কামরে দেই। তখন একটা চিৎকার দিয়ে আমার চুলে টান দিয়ে আমাকে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেয়।
কতক্ষণ পরে এসে একটা হেচকা টানে আমার পরনের লুঙীটা খুলে তার এক মাথা আমার চুলে বেধে অন্য মাথা ফ্যানের সাথে বেধে ফ্যানের সুইচ অন করে দেয়। একটা মাগো বলে চিৎকার করে আর কিছু বলতে পারি না। পরে এক হাবিলদার এসে ফ্যানের সুইচ অফ করে।

জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় ফাতেমা হাসপাতালে। এখানে কিছুদিন থেকে অল্প সুস্থ হলে তাকে আবার ক্যাম্পে ফিরিয়ে নেয়া হয়। প্রথম তিন দিন ভালোই ছিল। কেউ কিছু করেনি, কিন্তু চতুর্থদিন থেকে আবার শুরু হয় সেই আগের অত্যাচার। কিন্তু সেই সিপাহী আর ছিল না। সবাই বলাবলি করেছে তার নাকি কোর্ট মার্শাল হয়েছে। 

শীতের শুরু হয়েছে, বুঝতে পারে ফাতেমা। এরকম একদিন তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কোথায় তারা জানে না। পরে নামার পর পাকিদের কথায় বুঝতে পারে এর নাম বাঙ্কার। একটা রুমে তাদের রাখা হয়। এই রুমের ভিতর একটা জানালা আছে। যদিও অনেক উচুতে হওয়ায় আকাশ দেখা যায় না। তবুও দিন রাতের হিসেব পাওয়া যায়। এখানেও প্রথম কিছুদিন তাদের সাথে কিছু করা হয় না। কিন্তু একদিন ১৫-২০ জন আর্মি এসে এক বিভীষিকার রাত উপহার দিয়ে যায়।

এ বাঙ্কারেই পরিচয় হয় ফাতেমার সাথে বরিশালের হিন্দু মেয়ে চাপার। চাপার বাবা মা কে মেরে তবেই চাপাকে তুলে আনা হয়। চাপার সাথে সখ্যতা হয়ে গেলে চাপাকে বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে বলে বাড়ি বলে আর কিছুই মনে হয় নাই। আর এর ভাইয়েরাও তাকে মনে হয় রাখবে না। কারন সে হিন্দু। তার জাত গেছে কারন পাকিস্তানি মুসলমানেরা তাকে ভোগ করেছে। সুতরাং তার যাওয়ার কোন যায়গা নাই। মুক্ত হওয়ার পর মুক্তিবাহিনী তাদের খুলনা নামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে টাকা দিয়ে দিলে বাড়ি ফিরতে পারবে নাকি। ফাতেমা হ্যাঁ সুচক মাথা নারে। তাকে ১০০টাকা দেয়া হয়। ফাতেমা চাপাকে সঙ্গে করে বাড়ি ফিরে আসে।

বাবা-মা তাকে দেখে অনেক খুশি হয়। ফাতেমা সবার কাছে মাফ চায় পোনাকে বাঁচাতে পারেনি বলে। একদিন ফাতেমা তার বাবাকে বলে বাবা আমি কলেজে যাবো না? বাবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে বাবাকে জিজ্ঞেস করে কি সমস্যা বাবা বলে তুই কলেজে গেলে চাপার কি হবে? ফাতেমা বলে তাকেও কলেজে ভর্তি করে দাও। কিন্তু তার যে বাবা মার পরিচয় নেই। পরে ফাতেমার বাবা স্থানীয় এক নেতা কে ধরে চাপাকে ঢাকার নার্সিং কলেজে ভর্তি করে দেয়। এবং কিছু বৃত্তির ব্যাবস্থাও হয়ে যায়।

আজও চাপার বাপের বাড়ি খুলনাই। এক হিন্দুর কন্যাদান করে ফাতেমার বাবা। বিএ পাশ করলে ফাতেমার জন্যও ছেলে দেখা হয়। কিন্তু পারার লোকে ফাতেমার নামে কুৎসা রটায় সে বীরাঙ্গনা না সে বারাঙ্গনা। শেষ পর্যন্ত ফাতেমার বিয়ে ঠিক হয় মেট্রিক পাশ ছেলে তাহেরের সাথে। ফাতেমার মা প্রথমে রাজি হন নাই। কিন্তু পরে রাজি হয়ে যান। ফাতেমা তাহেরকে সব খুলে বললে তাহের বলে যখন বাঁচাতেই পারিনি পশুর হাত থেকে তাহলে এখন অপবাদ দেবো কেন বলে বুকে জড়িয়ে নেয়। 

সুখেই ছিল ফাতেমা। শ্বশুর গ্রামের স্কুলে চাকরির ব্যাবস্থাও করে দিলো। যাচ্ছিলো ভালই। একটা ছেলেও হলো। কিন্তু ঝামেলা হলো ৭৫ এর পরে। যখন বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হলো। কষ্ট পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু চুরান্ত সর্বনাশ হয়েছে খালেদ মোশারফ আর কিছু মুক্তিযোদ্ধা মারার পর যখন জামায়েত ইসলাম এদেশের রাজনীতিতে আসলো। যখন রাজপথে আবার "নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার" স্লোগান দেয়া শুরু হলো তখন থেকেই ফাতেমার সেই পুরানো স্মৃতি মনে পড়া শুরু হলো এবং প্রচন্ড মাথা ব্যথা সাথে।

ডক্টর কোন কিছুই খুঁজে পায় না। আস্তে আস্তে পাগল হতে থাকে ফাতেমা। ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়া হয় ফাতেমাকে। সেখানে অপারেশন করে ফিরে এসে কিছুদিন সুস্থ থেকে আবার আগের মত হয়ে যায়। প্রায়ই বাড়ি সন্তান ফেলে চলে যায় বিহারী পাড়াতে। নাসির খানকে খুঁজে। প্রায় শ্বাশুড়ীকে ধরে কাঁদে আর বলে আম্মা আমার সব শেষ। আমাকে অনেক অত্যাচার করছে আম্মা।এইটা নাসিরের বাড়ি। সেই আমাকে তুলে আনছে আম্মা।আস্তে আস্তে ফাতেমা হয়ে যায় বীরাঙ্গনা ফাতি পাগলী... 

ফাতেমার একটা মেয়েও হয়েছিল পরে। মেয়েটা হয়েছে ডক্টর আর ছেলেটা সাংবাদিক। ফাতেমার স্বামীর ব্যবসারও অনেক উন্নতি হয়েছে। মানুষকে দানও করে প্রচুর। শুধু ফাতেমারই মাথা ঠিক থাকে না মাঝে মাঝে।চলে যান স্থানীয় কলেজে আর বলতে থাকেন স্কুলে ছাত্রী পড়াবেন। সেই যে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে মাথায় আঘাত দেয়া হলো সেই ব্যথা আর ভয়ের ফলাফল এটা। 

বি:দ্রঃ নাসির খানকে ফাতেমার ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা সোনা কেটে টুকরা টুকরা করেছিল যুদ্ধের কোন এক সময়। পরে এক অভুক্ত কুকুরকে খাবার জন্য দেয়া হয়েছিল কিন্তু কুকুরেরও বোধহয় জাতে বেধেছে তাকে খেতে, তাই খায় নাই।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা