বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র: যার কাছে ম্লান হয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং উত্তম কুমার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
কায়স্থের ছেলে মহালয়ার অনুষ্ঠানে মন্ত্র পড়বেন- উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অনেকেই সেটা মানতে পারেননি। কিন্ত রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনীর সম্প্রচার হবার সাথে সাথে সব বদলে গেল, সেই অনুষ্ঠান এমনই জনপ্রিয়তা পেল যে, বাঙালী তার মহানায়ককেও ছুঁড়ে ফেলেছিল অবলীলায়!
আকাশবাণী কলকাতার অফিসে হিন্দু সমাজের নেতারা হাজির হয়েছেন, পঙ্কজ মল্লিকের সঙ্গে দেখা করবেন, বিরাট অভিযোগ নিয়ে এসেছেন তারা। অফিসের আনাচেকানাচে ফিসফাস চলছে। পঙ্কজবাবু তখন রেকর্ডিং রুমে, সেখান থেকে ডেকে আনা হলো তাকে। অভিযোগ পেশ করা হলো- কায়স্থের ছেলেকে দিয়ে চণ্ডিপাঠের আসর বন্ধ করতে হবে। এতে নাকি দেবীর অপমান, হিন্দু ধর্মের অপমান হয়। নেতাদের দাবী একটাই, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে বাদ দিয়ে ব্রাহ্মণ কারো গলায় মন্ত্রোচ্চারণ করানো হোক। তাহলেই আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
পঙ্কজ মল্লিক কঠিন মানুষ, ঘাড়ের রগ একটা নয়, কয়েকটা বাঁকা তার। এমন আবদারে তার রাজী হবার প্রশ্নই আসে না। বরং হিন্দু সমাজের নেতাদের পাল্টা হুমকি দিলেন তিনি, মহালয়ার অনুষ্ঠানে মন্ত্রপাঠ যদি কেউ করে থাকে, সেটা বীরেনই করবে। সেইসঙ্গে এটাও বলে দিলেন- "আমাকে বাদ দিয়ে মহালয়া হলেও হতে পারে, কিন্ত বীরেনকে বাদ দিয়ে 'মহিষাসুরমর্দিনী' চালানো অসম্ভব!" পঙ্কজ মল্লিক সেদিন হয়তো জানতেন না, উত্তেজনার বশে বলে ফেলা তার এই কথাটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ প্রমাণ করে দেবে সাড়ে চার দশক পরে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সামনে ম্লান হয়ে যাবেন বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণময় এবং জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর একটি- উত্তম কুমারও!
সাল ১৯৩১, কলকাতা। সেবছর অন্নপূর্ণা এবং বাসন্তী পুজো একদম গায়ে-গায়ে পড়েছিল। এই দুই পুজোর মাঝখানে রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নাম দেওয়া হয় 'দেবী বসন্তেশ্বরী'। অনুষ্ঠানটির নেতৃত্বে ছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক, বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র, হরিশচন্দ্র বালি- এরা সবাই। সম্প্রচারের পর অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেল অনুষ্ঠানটি। বাঙালির মনে এতটাই জায়গা করে নেয় এই অনুষ্ঠান যে, উৎসাহিত হয়ে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, পরের বছরেই এটি চণ্ডীপাঠ হিসাবে অনুষ্ঠিত হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। পরের বছর দূর্গাপূজোর বেশ খানিকটা আগেই শুরু হলো রিহার্সেল। হিন্দু সমাজের বিরোধের ঘটনাটা তখনকার। রেডিওতে টুকটাক নাটক করা বীরেন্দ্র ভদ্র জাতে ব্রাহ্মণ ছিলেন না, রেডিওরই কেউ হয়তো সেটা পাচার করেছিল হিন্দু সমাজের নেতাদের কাছে, তারাও করার মতো কাজকম্মো না পেয়ে পাওয়ার প্র্যাকটিস করতে হামলে পড়েছিলেন আকাশবাণীতে। কিন্ত রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পঙ্কজ মল্লিক, যার সঙ্গে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিচু গলায় কথা বলতেন, তিনি তো এসব পাতি নেতাদের হুমকিতে দমে যাওয়ার লোক নন। কাজেই ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন গেরুয়াধারী নেতারা, স্নান সেরে গরদের ধুতি-পাঞ্জাবী পরে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
১৯৩২, মহালয়ার দিন ভোররাত, আঁধারের চাদর তখনও সরেনি, শহর কলকাতায় শীতের আমেজ চলে এসেছে অবশ্য। এমনই সময়ে রেডিওতে শোনা গেল বীরেন ভদ্রের গমগমে গলা, ভেসে এলো গুচ্ছ গুচ্ছ কিছু শব্দ- ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর...'
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, অমন হৃদয় নিংড়ানো আওয়াজে চণ্ডীপাঠ করলেন কে? কেউ ভুলেও জানতে চাননি, যিনি মন্ত্রোচ্চারণ করলেন, তিনি ব্রাহ্মণ সন্তান নাকি কায়েতের ছেলে! ৮৮ বছর আগে জিতে গিয়েছিল পঙ্কজ মল্লিকের জেদ। ভাগ্যিস! সবার অলক্ষ্যে কেউ একজন সেদিন নিজের হাতে লিখেছিলেন এক নতুন ইতিহাস। আপামর বাঙালির ভালোবাসায় কালজয়ী হয়েছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে 'মহিষাসুরমর্দিনী'। মহালয়ার ভোর হয়েছিল কায়েতের ছেলের চণ্ডীপাঠে। এরপর থেকে মহিষাসুরমর্দিনী যেন বাঙালীর পূজোর অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে, পূজোর সব উপকরণের মতো বীরেন্দ্র ভদ্রের গলায় মহালয়ার শুরুটাও হওয়া চাই- নইলে পূজোর মহিমাটা কোথাও যেন হারিয়ে যায়!
এক ধারায় সাড়ে চারটে দশক কেটে গেল।পালাবদলের হাওয়া লাগলো ১৯৭৬ সালে। ইমার্জেন্সি চলছে তখন গোটা ভারতজুড়ে। দিল্লিতে বসে আকাশবাণীর কর্তারা ঠিক করলেন, মহিষাসুরমর্দিনীর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হবে। তার পরিবর্তে মহালয়ায় হবে নতুন অনুষ্ঠান, নতুন সঙ্গীতায়োজনে, স্টার কোন ভয়েস নিয়ে। বাঙালীর কাছে তখন সবচেয়ে বড় স্টার উত্তম কুমার, তাকে রাজী করানো হলো। উত্তম রাজী ছিলেন না শুরুতে, কারণ দিনশেষে তিনিও তো বাঙালী, মহিষাসুরমর্দিনীর আবেদনটা তিনিও বোঝেন। তিনি ছুটে গেলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কাছে, বীরেনবাবু সাহস দিলেন তাকে, রাজী হয়ে রিহার্সেল শুরু করলেন উত্তম।
ফলাও করে প্রচারণা চালানো হলো, মহালয়ার সকালে নতুন অনুষ্ঠান আসছে, উত্তম কুমার কণ্ঠ দেবেন তাতে, অনুষ্ঠানের নাম 'দেবী দূর্গতিহারিনী'। সবার মধ্যে একটা আগ্রহও তৈরী হলো। উনিশশো ছিয়াত্তরের মহালয়ার সকালে বাঙালির ঘুম ভাঙলো মহানায়কের কণ্ঠে মন্ত্রপাঠ শুনে। তারপর যেটা হলো, সেটা উত্তমের ক্যারিয়ারের একমাত্র দুঃস্বপ্ন। দিকে দিকে সমালোচনা আর প্রতিবাদের ঝড় উঠলো, আকাশবাণীর অফিসে চিঠির মেলা বসলো, শত শত লোক গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গালাগাল দিতে থাকলো আকাশবাণীর কর্তৃপক্ষকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা আগের রেকর্ড করা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহালয়া চালাতে বাধ্য হলো আবার।
এমন নয় যে উত্তম কুমার মাইক্রফোনের সামনে খারাপ পারফর্ম করেছিলেন, কিংবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের করা সঙ্গীতায়োজনটা বাজে হয়েছিল। সমস্যাটা হচ্ছে, দিল্লিতে বসে থাকা আকাশবাণীর কর্তারা বাঙালি সেন্টিমেন্টটা ধরতে পারেননি, বুঝতেও পারেননি। সব নতুন যে সবাই মেনে নিতে পারবে না, সেটা তাদের কল্পনায় ছিল না। বাঙালী উত্তমের গলায় মন্ত্রোচ্চারণ শুনেছে ঠিকই, কিন্ত তাতে পূজোর আমেজটা খুঁজে পায়নি কোথাও। কাজেই এত আয়োজন করে বানানো 'দেবী দুর্গতিহারিনী' ফ্লপ শো হিসেবে একদিনের মাথায় নেমে গেল রেডিও থেকে, ফিরে এলো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গমগমে গলার সেই আওয়াজ।
১৯৭৬ সালে আকাশবাণী যখন এত আয়োজন করছে মহালয়াকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য, তখন তাদের কেউ বীরেন্দ্রবাবুকে জানায়ওনি কিছু। অথচ লোকটা নিজের গোটা জীবনটা বেতারকে দিয়েছেন, কী না করেছেন তিনি রেডিও'র জন্য? সংসারের দিকে তাকাননি, স্ত্রীকে সময় দেননি, ছেলে-মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত থেকেছেন, বিনিময়ে পেলেন একরাশ অবহেলা। খুব কষ্ট পেয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ, আক্ষেপ করে বলেছিলেন- “ওরা একবার আমায় জানালোও না। আমি কি নতুন কিছুকে কোনও দিন বাধা দিয়েছি?”
দুর্গাপুজোর কার্টেন রেজার ধরা হতো বীরেনবাবুর আওয়াজকে! নাতিশীতোষ্ণ সকালে এক হলদে রঙের রোদ্দুর মাখা মায়া যেন! শরৎ এসে হাজির হচ্ছে পুজোর আকাশে, তারই মাঝে রেডিওতে দেবীপক্ষের আগমনধ্বনি ঘোষণা করছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। রেডিও বলতেই তখন পশ্চিমবঙ্গের অজস্র মানুষ বুঝতো শুধু এই মানুষটিকে। বছর গড়িয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মহিষাসুরমর্দিনীর জনপ্রিয়তা। সেই ভোররাতে হিমেল হাওয়ার মধ্যেই লোকজন জেগে উঠতো কেবল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মন্ত্রপাঠ শোনার জন্য। যাদের ঘরে রেডিও নেই, তারা অন্যের বাড়িতে চলে আসতো। যত যাই হোক, মহিষাসুরমর্দিনী মিস দেয়া যাবে না!
আকাশবাণীকে যিনি বাঙালীর কাছে এত জনপ্রিয় করে তুলেছেন, তাকে প্রাপ্য মর্যাদাটা আকাশবাণী কখনোই দিতে পারেনি। স্টাফ আর্টিস্ট হয়েই অবসর নিয়েছিলেন বীরেনবাবু। পেনশন জোটেনি। আসলে আখের গোছানোর কথা কখনও ভাবার সময় পাননি তিনি। অবসরের পরে, ‘মহাভারতের কথা’ বলার জন্য ক’টা টাকা পেতেন। ক্রমশ স্মৃতিভ্রংশ হয়ে আসছিল। তাতে অস্বস্তিতে পড়ছিলেন তখনকার প্রোগ্রাম অফিসার। সেই অনুষ্ঠানও আর চালু রাখা গেল না! তখন অর্থাভাব মেটাতে পাড়ায় পাড়ায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে বেড়াতে লাগলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সেখান থেকেও যে বেশি কিছু পেতেন, তা’ও নয়। সামান্য কিছু টাকাই জুটত, তাতে সংসার চলতো না ঠিকমতো।
বড্ড অভিমান ছিল মানুষটার। মুখে কিছু বলতেন না যদিও। আকাশবাণীর এমেরিটাস প্রোডিউসার-এর মতো সম্মাননার পদ জোটেনি তার। বলতে গেলে কিছুই মেলেনি ভাগ্যে, না কোনও সরকারি খেতাব, না পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ। মিলেছে তো কেবল গুচ্ছের চাদর আর উত্তরীয়! তাতে কি আর পেটের খিদে মেটে? আকাশবাণীকে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন চাকরির শেষ দিন পর্যন্ত। অথচ তাকেই কিনা বারবার অপমানের মুখে পড়তে হয়েছে! অবসর নেওয়ার পর আকাশবাণীতে একটা কাজে এসেছিলেন, ঢুকতে গিয়ে বাধা পেলেন। একজন সিকিউরিটি গার্ড বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কাছে ‘পাস’ চেয়ে বসল। সেদিন মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল তার, চেঁচিয়ে লোক জড়ো করে ফেলেছিলেন, থরথর করে কাঁপছিলেন, ফর্সা চেহারায় শিরাগুলো দপদপ করছিল। শিল্পীরা আর যাই হোক, অপমান জিনিসটা কখনও মেনে নিতে জানেন না, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রও পারেননি।
উত্তম কুমারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল, ১৯৭৬ এর মহালয়ার পরে চারপাশ থেকে যখন সমালোচনা ধেয়ে আসছে, তখন তিনি উত্তমকে ফোন করে বলেছিলেন, কোনকিছুতে কান না দিতে। উত্তমের কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর সততায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের সন্দেহ ছিল না কোন। ১৯৮০ সালে উত্তম কুমার মারা গেলেন, তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে মন্ত্রপাঠ করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রই। অনেকেরই তখন মনে পড়ে যাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর আকাশবাণীতে বীরেন্দ্রবাবুর পাঠ করা বিশ্বকবির কবিতাটার কথা-
প্রভাত আজি মুদেছে আঁখি, বাতাস বৃথা যেতেছে ডাকি,
নিলাজ নীল আকাশ ঢাকি নিবিড় মেঘ কে দিল মেলে।
কূজনহীন কাননভূমি, দুয়ার দেওয়া সকল ঘরে-
একেলা কোন পথিক তুমি পথিকহীন পথের 'পরে।
হে একা সখা, হে প্রিয়তম, রয়েছে খোলা এ ঘর মম,
সমুখ দিয়ে স্বপনসম যেয়ো না মোরে হেলায় ঠেলে।
শেষ জীবনটা সুখের ছিল না বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের, অভাব তো সঙ্গী ছিলই, সেইসঙ্গে শরীরে বাসা বেঁধেছিল আলঝেইমার, কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। ১৯৯১ সালের ৪ঠা নভেম্বর অনন্তলোকের পথে যাত্রা করলেন তিনি, পেছনে রেখে গেলেন কর্মময় এক জীবন, রেডিওর বাইরে রঙ্গমঞ্চে, গ্রামোফোন রেকর্ডে, ছায়াছবিতে আর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালিখিতেও তিনি ছিলেন অনন্য বিস্ময়। সিনেমার গল্প লিখেছেন, সিনেমা পরিচালনাও করেছেন, দুর্দান্ত সেন্স অফ হিউমার ছিল তার সঙ্গী, আড্ডা জমাতে জুড়ি ছিল না কোন। ক্রিকেট-ফুটবলের ধারাভাষ্যও শোনা গেছে তার মুখে, খেলা বুঝতেন না খুব একটা, দেখতে দেখতে শিখে নিয়েছেন সময়ের সাথে সাথে। একবার তো গোলকিপার বল ধরায় 'হ্যান্ডবল! হ্যান্ডবল!' বলে চিৎকার করে সবাইকে হাসিয়ে ফেলেছিলেন!
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ওই মহিষাসুরমর্দিনী রেডিওর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা অনুষ্ঠান হিসেবে অনেক আগেই রেকর্ড করে ফেলেছে। তবুও শেষ বয়সের অনেক সাক্ষাৎকারেই বারবার ঠিকরে বেরিয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের হতাশা আর অভিমান, বলতেন- ‘‘ভাবতেই পারিনি সবাই আমাকে ভুলে যাবে...’’ তবে নিজেই আবার বলে গিয়েছেন, ‘‘আমাকে ভুলে গেলেও বছরে একবার সেই দিনটিতে স্মরণ করবেই করবে। তাতেই আমার তৃপ্তি।’’ আজ মহালয়া, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে আজকের দিনটাতে অন্তত স্মরণ করতেই হবে।
সত্যিই তো, আকাশবাণী তাকে হয়তো ভুলে গেছে, তার অবদানকে মনে রাখেনি, বছরে একটা দিনই শুধু তার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে রেডিওতে। আগস্টের চার তারিখে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্মদিন, বছরের এই দিনটাতেও কোন বাড়তি আয়োজন থাকে না আকাশবাণীর কলকাতা স্টেশনে, কেউ স্মরণও করে না তার কথা। কিন্ত বাঙালি তাকে আজও ভোলেনি, তার গমগমে গলার আওয়াজ ছাড়া আজও দূর্গাপূজো অসম্পূর্ণ থেকে যায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে- এই অর্জন তো চাট্টেখানি কথা নয়!
তথ্যসূত্র কৃতজ্ঞতা: আনন্দবাজার পত্রিকা, দেশ পত্রিকা, এনডিটিভি ডটকম।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন