টিচালার চরিত্রের জন্য চ্যাডউইক কত পরিশ্রম করেছে তা ব্ল্যাক প্যান্থারে ওর পার্ফরমেন্স, বডি ল্যাংগুয়েজ দেখলেই টের পাওয়া যায়। ব্ল্যাক প্যান্থার আহামরি কোন সিনেমা না। কিন্তু অ্যামেরিকান কালচারে ব্ল্যাক প্যান্থারের ইমপ্যাক্ট অবিশ্বাস্য...

চ্যাডউইক ৪ বছর ধরে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিল। অথচ কেউ জানতো না ওর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে লড়াই এর খবর। হয়তো নিজের এই লড়াইকে একান্ত ব্যক্তিগত করে রাখতে চেয়েছিল। সিভিল ওয়ারেই প্রথম দেখা চ্যাডউইকের সাথে। আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকার সাথে বলা যায় সেইম স্ক্রিনটাইম ও দ্বিগুণ দাপট সত্যিই অবাক করে দিয়েছিল। 

সিভিল ওয়ারের সময় থেকেই ক্যান্সারের সাথে লড়াই শুরু। মার্ভেল ঠিক করে রেখেছিল ব্ল্যাক প্যান্থারের স্ট্যান্ড এলোন সিনেমা করবে তাই সিভিল ওয়ারে ইন্ট্রোডিউস করানো আর কী! টিচালাকে পরিচিত করে তোলা। টিচালার চরিত্রের জন্য চ্যাডউইক কতো পরিশ্রম করেছে তা ব্ল্যাক প্যান্থারে ওর পার্ফরমেন্স, বডি ল্যাংগুয়েজ দেখলেই টের পাওয়া যায়। ব্ল্যাক প্যান্থার সিনেমা হিসেবে আহামরি কোন সিনেমা না। কিন্তু অ্যামেরিকান কালচারে ব্ল্যাক প্যান্থারের ইমপ্যাক্ট অবিশ্বাস্য।

কুগলার, চ্যাডউইক, এঞ্জেলা ব্যাসেটরা সেটা জানতেন। জানতেন যে একটা বিপ্লব শুরু হতে যাচ্ছে তাদের হাত ধরে। বছরের পর বছর ধরে ডেনজেল ওয়াশিংটন, মরগান ফ্রিম্যান, স্পাইক লি রা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা রেসিজমের সাথে যে লড়াইটা করে আসছেন তার সবচেয়ে বড় মশালটা তাদের হাতে ছিল এখন। স্টান লি, জ্যাক কির্বিরা যখন ব্ল্যাক প্যান্থারকে কমিকসে ইন্ট্রোডিউস করান তখনও তাদের মাথায় ছিল যে তাদের রিডারদের অনেকেই ব্ল্যাক অ্যামেরিকান। যেকোনো জাতি, গোত্রের মানুষ ভ্যালিডেশন পেতে চায় তারা যা দেখে-পড়ে-শুনে বড় হয় সেখানে। ব্ল্যাক প্যান্থার সেরকম একটি ভ্যালিডেশন ছিল তখন, এখনো।

ব্ল্যাক প্যান্থার সিনেমায় চ্যাডউইক বোসম্যান

মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে একমাত্র ব্ল্যাক সুপারহিরো ছিল ততদিন পর্যন্ত ওয়্যার মেশিন। সেখানেও অভিনেতা পরিবর্তন করতে তাদের দ্বিধা হয় নি। ব্ল্যাক প্যান্থার মূলত মার্ভেলের সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সকে গ্লোবালাইজ করার একটা মাধ্যম মাত্র, একইভাবে যেমন প্রথম এশিয়ান সুপারহিরোকেও তারা ইন্ট্রোডিউস করাতে যাচ্ছে। কিন্তু ব্ল্যাক প্যান্থারের কাস্ট এবং ক্রু'র কাছে শুধু এটি একটি সিনেমা বা প্রোডাক্ট ছিল না। বরং তারা নিজেরা অউন করে নিয়েছিল। অউন করে না নিলে চ্যাডউইক ক্যান্সারের সাথে লড়াইরত অবস্থায় নিজের সেরাটা দিতে পারতো না। ফিল্মিং এর সময় চ্যাডউইকের দেখা হয়েছিল দুটো ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলের সাথে। যারা বলেছিল তাকে যে- আমরা অপেক্ষা করছি তোমার সিনেমাটি দেখার জন্য। কিন্তু আফসোস যে সিনেমা মুক্তির আগেই তারা ক্যান্সারের কাছে পরাস্ত হয়। 

কেন আফ্রিকান অ্যামেরিকান বা মোটা দাগে ব্ল্যাক পিপলরা অপেক্ষা করছিল ব্ল্যাক প্যান্থারের? কারণ তারা জানতো একটা প্যারাডাইম শিফট হতে চলেছে। ব্ল্যাক প্যান্থারের চেয়ে অনেক অনেক সুপেরিয়র সিনেমা এসেছে যেখানে সরাসরি এড্রেস করা হয়েছে রেসিজম ইস্যু। ম্যালকম এক্স, সেলমা, টুয়েলভ ইয়ারস এ স্লেভ, ইনভিক্টাস, ইত্যাদি। তবুও ব্ল্যাক প্যান্থার কেন? কারণ ব্ল্যাক প্যান্থার ভ্যালিডেশন দিতে পারে তাদের। 

ব্ল্যাক প্যান্থারের বাজেট, সুপারহিরো ইউনিভার্সে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করা, এখনকার ব্ল্যাক চিল্ড্রেনদের নিজস্ব একটি সুপারহিরো মুভি, প্রিয় সুপারহিরো থাকা এগুলো ব্ল্যাক প্যান্থারই কেবল তাদের এনে দিতে পারে। এজন্য স্টার ওয়ারস, এভেঞ্জারস, এভাটারদের বক্স অফিসের সাথে পাল্লা দিতে পেরেছিল স্ট্যান্ড এলোন এই সুপারহিরো সিনেমাটি। মুক্তির পর রেসিজমে উদ্বুদ্ধ অনেক রেসিস্টরা বিরোধিতাও করেছিল এই সিনেমার, এমনকি বাংলাদেশেও আমি দেখেছি মানুষকে বলতে 'কালাদের মুভি দেখি না'। কিন্তু তারা সুবিধা করে উঠতে পারে নি ব্ল্যাক প্যান্থারের অসীম সফলতা ও কালচারাল ইমপ্যাক্ট দেখে।

কিং টিচালা

চ্যাডউইক , কুগলাররা ব্ল্যাক প্যান্থারে অনেকগুলো জিনিস তুলে ধরেছিল নান্দনিক মেটাফোরে। ফিকশনাল ওয়াকান্ডার কালচার মূলত আফ্রিকান বিভিন্ন কালচার ব্লেন্ড করেই তৈরি করা। তাদের বিভিন্ন ট্রাইবের মধ্যকার বন্ড, সাদাদের প্রতি বিরূপ মানসিকতা, এমনকি অনেকদিক দিয়ে উন্নত হয়েও বহির্বিশ্বের কাছে গরিব দেশ হিসেবে আখ্যা পাওয়া, সবকিছুই সাটলভাবে তুলে ধরা হয়েছে ব্ল্যাক প্যান্থারে। শুধু যে রেসিজম সাদাদের মাঝেই আছে এমনটা না, তাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতাকেও সাহসীভাবে দেখানো হয়েছে। 

সামনের জন এক পা আগে না বাড়ালে নিজেরই যে বাড়াতে হয় সে চেষ্টাটা করার কথা বলা হয়েছে। সবসময় হোয়াইট অ্যামেরিকানদের মাঝে একজন ব্ল্যাককে যেভাবে কপর্দকহীনভাবে দেখানো হয়েছে বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে সেটার বিপরীত রূপ দেখানো হয়েছে মার্টিন ফ্রিম্যান অর্থাৎ এজেন্ট রসের মাধ্যমে। আবারও বলছি ব্ল্যাক প্যান্থার সিনেমা হিসেবে আহামরি কিছু না। ব্ল্যাক প্যান্থারকে বলা যায় সেলিব্রেশন। এই সেলিব্রেশনটা ব্ল্যাক কালচারের, এই সেলিব্রেশনটা ভ্যালিডেশনের, এই সেলিব্রেশনটা নিজস্বতার। 

চ্যাডউইক বোসম্যানের দারুণ দারুণ সব সিনেমা আছে। শুধু ব্ল্যাক প্যান্থারের ছাঁচে তাকে আটকে ফেললে ভুল করা হবে। কিন্তু চ্যাডউইক কিং টিচালা হিসেবেই বেঁচে থাকবেন বেশি মানুষের হৃদয়ে। যারা তাকে আপন করে নিয়েছিল ওয়াকান্ডার রাজা হিসেবে। যারা তার কাছ থেকেই শুনেছিল- মৃত্যু মানেই জীবনের শেষ নয়।

“In my culture, death is not the end. It’s more of a stepping off point. You reach out with both hands and Bast and Sekhmet, they lead you into a green veld where you can run forever."

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা