যারা মনে করেন, মোশাররফ করিম মানে শুধুই ভাঁড়ামি- তারা বোধ নাটকটা দেখলে বুঝবেন এই মানুষটা ভাল স্ক্রিপ্ট আর ক্যারেক্টার পেলে চমৎকার অভিনয় দিতে পারেন। তবে এই নাটকের শো স্টিলার আরেকজন...

'বোধ' নামের একটা নাটক প্রচারিত হয়েছে এবারের ঈদে। নাটকটার টিজার আসার পর থেকেই আগ্রহী ছিলাম নাটকটা নিয়ে। নাটকটা দেখেও বেশ ভাল লেগেছে। নাটকের রিভিউ লেখার জন্য বা এই নাটক কতটা ভাল তা জানানোর জন্য এই লেখা না। বোধ সম্ভবত এবারের ঈদের একমাত্র নাটক যেটা ইউটিউবে ইংরেজি সাবটাইটেল সহ আপলোড করা হয়েছে। 

আমি যখন থেকে অনলাইনে নাটক সিনেমা নিয়ে লেখা শুরু করেছি, তখন থেকে এই ব্যাপারটা বলে যাচ্ছি যে- আমাদের উচিত আমাদের দেশে নির্মিত চমৎকার কাজগুলো ইংরেজি সাবসহ ইউটিউবে আপলোড করা। আগেরগুলো যদি সম্ভব নাও হয়, অন্তত বর্তমানে যা হচ্ছে, সেগুলোতে যেন ইংরেজি সাবটাইটেল যোগ করা হয়। নিজেদের বাজার প্রসারিত করতে না পারলে আমরা খুব বেশিদিন টিকতে পারব না। সেক্ষেত্রে ইংরেজি সাবটাইটেলের কোন বিকল্প নেই। ইংরেজি ভাষাভাষী কোন দেশে বসবাসরত আমার কোন বন্ধুকে আমি নিজের দেশের কোন ভাল কন্টেন্ট দেখাতে পারি না কারণ আমাদের বেশিরভাগ কাজের কোন ইংরেজি সাবটাইটেল নাই।

দিনশেষে তারা মনে করে আমাদের দেশে শুধুই বলিউডের দুর্বল কপির মত নাচগানের সিনেমা হয়। অথচ জীবন থেকে নেয়ার মত সিনেমা আমি তাদের দেখাতে পারি না কারণ তারা বাংলা জানে না আর ইংরেজি সাবটাইটেলে এই সিনেমা এভেলেবল না। অথচ ইন্ডিয়ার সিনেমা তো অবশ্যই, বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ নিয়ে তাদের যে সমস্ত সিরিয়াল স্টার প্লাস বা জি টিভিতে প্রচারিত হয়, তার সবগুলোতে ইংরেজি সাবটাইটেল যোগ করা।

ইউটিউবে এই প্রথম বাংলা নাটকে ইংরেজী সাবটাইটেল যুক্ত হয়েছে

যারা মনে করেন, মোশাররফ করিম মানে শুধুই ভাঁড়ামি- তারা বোধ নাটকটা দেখলে বুঝবেন এই মানুষটা ভাল স্ক্রিপ্ট আর ক্যারেক্টার পেলে চমৎকার অভিনয় দিতে পারেন। তবে এই নাটকের শো স্টিলার আরেকজন। নাম তার আশিষ খন্দকার। প্রথমবার আমি তাকে দেখি হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে অনিমেষ আইচ পরিচালিত 'নিষাদ' নাটকে। মিসির আলির ক্যারেক্টর প্লে করেন তিনি এই নাটকে। নাটকটা দেখার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি মনে করি- এর চেয়ে পারফেক্ট মিসির আলি আর সম্ভব না। হুমায়ূন আহমেদ নিজেও অনিমেষ আইচকে নিজের বাসায় ডেকে এই নাটকের জন্য প্রশংসা করেছিলেন। 

আশিষ খন্দকার দিল্লীর NSD তে স্কলারশিপ পেয়ে পড়াশোনা করে এসেছেন অভিনয়ের উপর। যে NSD তে তিনি নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরি, আশীষ বিদ্যার্থী, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর মত অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছেন। অলিয়েস ফ্রঁসেজে তিনি বাচ্চাদের এক্টিং এর উপরে একটা কোর্স নেন, স্টেট ইউনিভার্সিটিতেও এক্টিং নিয়ে পড়ান। মোরশেদুল ইসলামের চাকা সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। বাথানের মত সিনেমাও বানিয়েছেন। 

ইউটিউবে তন্নতন্ন করে আশীষ খন্দকারের মাত্র একটা ইন্টারভিউ পেলাম। ২০১৮ তে বাংলা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা সেই ভিডিওতে ভিউ মাত্র ৬৭২টি। অবাক হইনি। এই দেশ এভাবেই ট্যালেন্টের মূল্য দেয়। আশীষ খন্দকার তার লম্বা চুলগুলোকে কালার করে টিকটকে নাচানাচি করলে হয়ত এর চেয়ে বেশি প্রচার আর ভিউ পেতেন। 

ইন্টারভিউয়ের শেষে আশিষ খন্দকারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল দেশে তার প্রিয় অভিনেতা কে? তার উত্তর ছিল হুমায়ুন ফরীদি। সেটা দেখে মুচকি হেসে আমি মনে মনে বলেছিলাম- মানিকে মানিক চিনে....

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা