খাবার খেতে টাকা লাগবে- এটাই চিরচারিত নিয়ম। এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে দারুণ একটি উদ্যোগ নিয়েছেন গায়ক বন জভি। আত্মার রান্নাঘর খুলে বসেছেন তিনি...
তুমি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ নাকি খ্রিস্টান? উত্তর এলো, আমি ক্ষুধার্ত স্যার। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্ম হলো এই ক্ষুধা। ক্ষুধার কাছে হার মানতে বাধ্য হয় সবাই। পূর্নিমার চাঁদ আসলেই ঝলসানো রুটি মনে হয় তখন। দেহ কিংবা মনের এই ক্ষুধা না থাকলে পৃথিবীতে আর কোনও সমস্যাই থাকতো না মনে হয়।
ইটস মাই লাইফ- নিয়মিত গান শোনার অভ্যেস আছে অথচ এ গানটি শোনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া খুব কস্টকর হয়ে যাবে। পুরো দুনিয়া মাতিয়েছিলেন গানটির জনক বন জভি। এই প্রজন্মের কাছে যে উন্মাদনা তৈরি করেছিলেন সেটা এখনও নস্টালজিক করে দেয় আমাদের। এই মানুষটা শুধু গান গেয়েই আনন্দ দেননি, মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছে মানসম্মত খাবার। সঙ্গীতের গণ্ডি পেরিয়ে গড়ে তুলেছেন সৌল কিচেন। যেখানে কোনো ফিক্সড প্রাইস ছাড়াই খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। মুখ, পেট, মন সবই তৃপ্ত করে দেবার জোগাড় একদম।
সৌল কিচেন। কি সুন্দর নাম! আসলে এটি একটি ফাউন্ডেশন। যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে তিনটি কমিউনিটি রেস্টুরেন্ট খুলেছেন বন জভি। সমাজে যে শ্রেণীর ভালো খাবার খাওয়ার সাধ্য নেই, সঠিক খাবারের অভাবে যারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন তারা বিনামূল্যে খাবার খেতে পারবেন এই সৌল কিচেন থেকে। যাদের সাধ্য রয়েছে, তাদের অবশ্য মূল্য পরিশোধ করেই খেতে হবে। তবে এই রেস্টুরেন্টের খাবার মেন্যুতে কোনও প্রাইস ঠিক করে দেয়া নেই। যে যার সাধ্যমত বিল দিতে পারবে। যাদের খাবার কেনার সামর্থ্যই নেই, তারাও সেই খাবারটা কম মূল্য দিয়ে খেতে পারবেন। আবার যদি একদমই টাকা না থাকে, সেক্ষেত্রে সৌল কিচেনের স্বেচ্ছাসেবী হয়ে সে খাবার খেতে পারবেন। রেস্টুরেন্টের বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো বিলিয়ে দেয়া হয় ক্ষুধার্ত মানুষদের মাঝে। খাবার খাওয়ার জন্য টাকা থাকা লাগবেই- এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে কি চমৎকার ভাবনা। তাই না?
আমেরিকার অনেক কমিউনিটিতে গৃহহীন মানুষ রয়েছেন। যাদের থাকার বা খাবার জায়গা নেই। অনেক স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটিতে দেখা যায় সব ছাত্রছাত্রীদের আহারের ব্যবস্থাও থাকে না। অনেক শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে ভালো খাবার কেনার সাধ্যও থাকে না। এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো ঠিকঠাক মতো খেতেও পায় না। তাদের খাবার ব্যবস্থা করবার জন্যেই মূলত ২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে সৌল কিচেন। ক্ষুধার বিরুদ্ধে তার এই সংগ্রাম আজবীন চালিয়ে যাবার নিশ্চয়তা দিয়েছেন বন জভি। তার এই সিদ্ধান্তের প্রতি রইলো অশেষ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। সৌল কিচেনের মাধ্যমে আরও অনেকে অনুপ্রেরণা পাবেন যারা আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে চান।
বন জভির এই ফাউন্ডেশনে সাহায্য করছেন তার স্ত্রী ডরোথিয়া হার্লে। স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলেই কাজ করেন রেস্টুরেন্টে। তারা বলছেন, আমেরিকায় শুধুমাত্র নুডুলস খেয়েই অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন পার করে দেয়। এভাবে একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠতে পারে না। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পুস্টিকর খাবার পৌঁছে দেয়াটা আমাদেরই দায়িত্ব।
শুধু পাতলা খিচুড়ি নয় বরং সুষম এবং সঠিক খাবার নিশ্চয়তা যতদিন আমরা দিতে না পারবো, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই যাবে। শুধু খাদ্য নয়, বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা... একটি মানুষের রয়েছে প্রতিটি মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর অধিকার। সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই- এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি। নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।