ফুডপান্ডা বলছে, খাবার বিক্রির লভ্যাংশ থেকে ৫১% দিতে হবে তাদের। রেস্টুরেন্ট মালিকরা রাজী না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের পরোক্ষভাবে বলেছে খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে হলেও যেন লাভের পরিমাণ বাড়ানো হয়। ডিজিটাল মাফিয়াগিরি ছাড়া এটাকে আর কীইবা বলা যায়?
খাবারের হোম ডেলিভারি সার্ভিস ফুডপান্ডা বয়কটের একটা শোরগোল উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে রেস্টুরেন্টগুলোকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ এনেছেন মালিকদের কয়েকজন। তাদের দাবী, পরোক্ষভাবে খাবারের দাম বাড়ানোর জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে ফুডপান্ডা কর্তৃপক্ষ।
করোনা আউটব্রেকের কারণে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে প্রায়, অনেক ছোটখাটো উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে, চেইন রেস্টুরেন্ট এবং বড়সড় রেস্তোরাঁগুলোই টিকে আছে। তাও অপারেশন চলছে সীমিত পরিসরে, বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টই ডাইন-ইন সার্ভিস বা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা চালু করেনি এখনও, হোম ডেলিভারি সার্ভিসটাই চালু আছে। আর এসব অর্ডারের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আসে ফুডপান্ডার মাধ্যমে। আর সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অনৈতিকভাবে নিজেদের লাভের হার বাড়াতে চাইছে মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানটি।
রেস্টুরেন্ট মালিকদের সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগির যে চুক্তি, সেটা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুডপান্ডা। খাবার বিক্রি করে পাওয়া মোট লাভের শতকরা ৫১ শতাংশ এখন থেকে দিতে হবে তাদের। রেস্টুরেন্ট মালিকরা এটাকে অসম্ভব বলে দাবী করেছেন, তখন ফুডপান্ডা পরোক্ষভাবে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, খাবারের দাম বাড়িয়ে যেন সেখান থেকে বিক্রেতারা লভ্যাংশ বাড়ান, ফুডপান্ডা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে না। ডিজিটাল মাফিয়াগিরি ছাড়া এটাকে আর কীইবা বলা যায়?
কয়েকটা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারটা নিয়ে ফুডপান্ডার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন, কিন্ত প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে আশাতীত সাড়া পাওয়া যায়নি বলেই জানয়েছেন রেস্টুরেন্টের মালিকরা। মাত্র তিনদিনের নোটিশ দেয়া হয়েছে তাদের, এরপরেই নতুন রেভিনিউ শেয়ার সিস্টেমে চলে যাবে ফুডপান্ডা। যারা এই রেভিনিউ মডেলে রাজী হবে না, তাদের ছাড়াই কাজ চালাবে প্রতিষ্ঠানটি। আরেক ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান উবার ইটস বাংলাদেশ ছেড়েছে কিছুদিন আগে, একারণে মার্কেটে ফুড পান্ডা এখন অনেকটাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেছে, আর সেই সুযোগটাকেই এভাবে অপব্যবহার করতে চাইছে তারা।
খাবার বিক্রি করে পাওয়া লাভের সিংহভাগ যদি ফুডপান্ডাই নিয়ে যায়, তাহলে বাধ্য হয়েই রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে খাবারের দাম বাড়াতে হবে। রেস্টুরেন্ট মালিকদের হিসেবে, খাবারের দাম প্রায় দেড়গুন বাড়াতে হবে এজন্য। অর্থাৎ যে খাবারের দাম ছিল একশো টাকা, সেটার দামই এখন দেড়শো টাকা হয়ে যাবে। ফুডপান্ডা হয়তো গ্রাহক আকর্ষণের জন্য ফ্রি ডেলিভারি বা এরকম আকর্ষণীয় অফার দেবে, কিন্ত খাবারের দাম বেড়ে যে আসল ভোগান্তিটা গ্রাহকদেরই পোহাতে হবে, সেটা পান্তাভাতের মতোই সহজ একটা ব্যাপার।
এই তুঘলকি কাণ্ডেরই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। ফুডপান্ডা যেটা করছে, সেটা নৈতিকতাকে বিসর্জন দেয়া কাজ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ব্যবসা করতে উপমহাদেশে এসে গোটা উপমহাদেশ দখল করে নিয়েছিল। ফুডপান্ডা দেশ দখল করতে না চাইলেও, বাজার অস্থিতিশীল করে দিচ্ছে। যেখানে লোকাল ভেন্ডরগুলো ২০-২৫ শতাংশ রেভিনিউ সিস্টেমে অপারেশন চালাচ্ছে, সেখানে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিক্রেতাদের ব্ল্যাকমেল করে খাবারের দাম বাড়াতে বাধ্য করে গ্রাহককে ভোগান্তির মুখে ফেলাটা কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাজ হতে পারে না।
এর আগেও ফুডপান্ডা বয়কটের একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল মালয়েশিয়ায়, রাইডারদের লভ্যাংশ কমিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ঘটেছিল সেই ঘটনাটা। সেবার প্রতিবাদের মুখে নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশেও এমন কিছু না ঘটলে রেস্টুরেন্ট মালিকদের অনেকেই হাংরি নাকি, পাঠাও ফুড বা সহজ ফুডের মতো দেশীয় ফুড সার্ভিসগুলোর দ্বারস্থ হবে, নইলে নিজেদের ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আসবে। তাতে আখেরে হয়তো ভোক্তাদেরই উপকার হবে...