ব্রিজার ওয়াকার: অসম সাহসী এক ক্ষুদে সুপারহিরো!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
মাত্র ছয় বছর বয়স, অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছে পিচ্চিটা! আগুয়ান কুকুরের আক্রমণ থেকে বোনকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছে সে, মুখে পড়েছে নব্বইটা সেলাই! তার এমন কৃতিত্বে মুগ্ধ হয়েছেন পর্দার সুপারহিরোরাও!
সোশ্যাল মিডিয়া অদ্ভুত এক চিড়িয়াখানা। প্রতিদিন এখানে অজস্র তারকার জন্ম হয়। আবার সেভাবে প্রতিদিনই অনেক তারকা মরে যায় সময়ের নিয়মে। তবে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে তারকা না, বরং আত্মপ্রকাশ করেছেন এক সুপারহিরো। "সুপারহিরো" শুনেই হয়তো নড়েচড়ে বসেছেন সবাই। তা বসুন। এবার সেই সুপারহিরোর বয়স শুনলে ভাববেন, আমি বোধহয় মজা করছি। গুরুত্বই দেবেন না হয়তো আমার কথাকে।তাও বলি। তাঁর বয়স মাত্র ৬। ভুল ভাববেন না। বয়স যাই হোক, মানুষটি আসলেই সুপারহিরো। কেন? সেটাই বলছি এখন।
তাঁর নাম ব্রিজার ওয়াকার, বাড়ি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াওমিং প্রদেশে। নাম শুনেই হয়তো অনেকে চিনে ফেলেছেন তাকে। চেনার কথাও। গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলছে সে। অবশ্য এই হুলস্থুল তোলপাড়ের পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে।
কয়েকদিন আগে চার বছরের ছোট বোনকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন আমাদের এই ক্ষুদে সুপারহিরো। হুট করেই সামনে পড়ে এক জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুর। কুকুর সাধারণত হিংস্র হয়না অতটা। তাকে কেউ না ঘাঁটালে, সেও কাউকে ঘাঁটায় না। কিন্তু এই কুকুরটির হলো মতিভ্রম। কামড়াতে গেলো ব্রিজারের ছোট্ট বোনটিকে৷ কিন্তু সুপারহিরো তা মানবেন কেন? তিনি মানলেনও না। সব সুপারহিরোর যেমন আলাদা একটা বিশেষ অস্ত্র বা ক্ষমতা থাকে। সেরকমটা রয়েছে তাঁরও। তার অস্ত্রের নাম "সাহস।" সেটাকে পুঁজি করেই তিনি দাঁড়ালেন কুকুরের সামনে, বোনকে বাঁচানোর জন্যে। কুকুর আক্রমণ করলো তাকে। গাল, চিবুক কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিলো। এগুলো অবশ্য কোলাটেরাল ড্যামেজ। সাহস কিন্তু রইলো অক্ষত। সে সাথে ছোট্ট বোনটিও।
পরে সুপারহিরোকে হাসপাতালে নেয়া হয়। গালে নব্বইটিরও বেশি সেলাই দিতে হয়। কিন্তু তাতে কী আসে যায়? বাবা-মা'কে সাফ সাফ জানিয়ে দেন- কুকুরের আক্রমনে কাউকে যদি মরতেই হতো, সেটা যেন তিনি হন। এ কারনেই কুকুরের সামনাসামনি হয়েছিলেন তিনি।
পরে এ ঘটনা ভার্চুয়াল জগতে চলে আসে। আস্তে আস্তে সবাই জানতে পারে এই ক্ষুদে সুপারহিরোর গল্প। পর্দার নকল সুপারহিরোরা এই আসল সুপারহিরোকে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে প্রশংসা করতেও পিছপা হয়না। সে তালিকায় আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর... আছেন সবাই। একে একে সবাই এসে একবাক্যে কুর্নিশ জানান আমাদের অকৃত্রিম সুপারহিরোকে। ক্রিস হেমসওয়ার্থ, ক্রিস ইভান্স, রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, অ্যানা হ্যাথওয়ে... দেখেছেন তার ভক্ত তালিকা কতটা ঈর্ষনীয়? আমরা যাদেরকে প্রতিদিন অনুসরণ করি আগ্রহী শিশুর মতন, সেই মানুষগুলোই দলবেঁধে এই লোকটির পেছনে ভক্তিগীতি গাইছে। এ কী চাট্টিখানি কথা! এমনি এমনি কী আর তিনি সুপারস্টার, বলুন। এখানেই শেষ নয়, এই মানুষটিকে সাম্মানিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উপাধি দিয়েছে ওয়ার্ল্ড বক্সিং ফেডারেশন, তাঁর এই দুর্দান্ত সাহসিকতার জন্যে।
ব্রিজার ওয়াকারের এ গল্পটা ভালো লেগেছে এ কারনেই, হতে পারে সে একরত্তি এক শিশু৷ কিন্তু ভেতরে যে মানসিকতা ও সাহস সে ধারণ করে, সেটি একবাক্যে অসাধারণ এবং বিরল। এরকম সাহসী শিশুর গল্প জানা, জেনে সবাইকে জানানো এবং শোনানোর মধ্যেও একটা তৃপ্তি আছে। পৃথিবীতে প্রতিদিন এত এত খারাপ খবরের ভীড়ে এই সুন্দর, শান্তির খবরগুলোই তো আমাদের মন ভালো করে দেয়। এবং এটাই তো গুরুত্বপূর্ণ। তাই না?