ব্রুস লি- এক ক্ষণজন্মা সুপারস্টারের গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বয়স যখন বারো, তখন রাস্তার বখাটে ছেলেদের হাতে তাকে একবার ভীষণ মার খেতে হয়েছিলো। এই ঘটনাটিই হয়তো পাল্টে দিয়েছিল তার জীবন!
বয়স যখন বারো তখন রাস্তার বখাটে ছেলেদের হাতে তাকে একবার মার খেতে হয়েছিলো। এই ঘটনাটিই হয়তো তার জীবনকে পালটে দেয়। এরপরই তিনি মার্শাল আর্টে ঝুঁকে পড়েন। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রেও মার্শাল আর্টকে রুপায়ন করা হয় তারই হাত ধরে। নাম তার ব্রুস লি। যিনি একাধারে অভিনেতা, মার্শাল আর্ট শিল্পী। যিনি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা জ্যাকি চ্যানেরও আইডল।
বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী একশ জন মানুষের একটি তালিকা করেছিলো। ব্রুস লি ছিলেন তাদের একজন। শুধু একজন মার্শাল আর্ট শিল্পী কিংবা অভিনেতা নন, তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, একজন শিক্ষক, একজন আর্টিস্ট, একজন ফিল্মমেকার। তাকে ব্যাক্তিগতভাবে রোল মডেল মানতেন অগণিত মানুষ। তার স্টাইল ও কাজকর্ম অনুসরণ করতেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। অল্প বয়সের রহস্যজনক মৃত্যুতে জীবন অবসান হলেও এখনো আছেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই মানুষটার জীবনের কিছু দিক নিয়েই এই লেখাটি এগিয়ে চলো পাঠকদের জন্যে।
ব্রুস লি চাইনিজ নন
অনেকের ধারণা তার জন্ম চীনে। কিন্তু তার জন্ম হয়েছিলো সানফ্রান্সিসকোতে। বেড়ে ওঠা হংকংয়ে। তার দাদী ছিলেন একজন জার্মান ভদ্রমহিলা। মিশ্র রক্ত শরীরে প্রবাহিত হলেও এটিই তার জন্যে আশীর্বাদ হয়ে আসে। মার্শাল আর্ট শেখার সুযোগ হয়, তিনি খুঁজে পান নিজের জীবনের নিজস্ব গতিপথ।
ডান্সার ব্রুস লি
ব্রুস লি অসাধারণ নাচতে পারতেন। ১৯৫৮ সালে তিনি একটি নাচের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নও হন! তখন মাত্র হাই স্কুলে পড়তেন তিনি। অভিনয়, মার্শাল আর্টের ট্রেইনিংসহ দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের বাইরে নাচের অনুশীলনের জন্য আলাদা সময় বের করতেন তিনি।
বাতাসের চেয়ে বেশি গতিতে ফাইট করার ক্ষমতা
চোখের পলকে হাওয়া হয়ে গেলো- আমরা এই বাক্যটি যেভাবে ব্যবহার করি, একইভাবে ব্রুস মার্শাল আর্ট ফাইটিংয়ের সময়ে তেমনভাবেই ফাইট করেন। এত ক্ষীপ্র গতিতে তিনি হাত চালাতেন যে প্রতিপক্ষ আঘাত প্রতিহত করারও সময় পেত না! ১৯৬২ সালেই একটি ফাইটে তিনি মাত্র ১১ সেকেন্ডে তার প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন। এই ১১ সেকেন্ডে তিনি ১৫ টা ঘুষি আর একটা কিক করেছিলেন বেচারাকে।
ব্রুস লি- দ্য ড্রাগন
তার আসল নাম ছিলো লি-জান-ফান। কিন্তু তার পরিবার তাকে ডাকতো ম সি তুং যার অর্থ- যে কখনো স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না। ব্রুস লি জন্মেছিলেন ড্রাগন বর্ষে। এটি প্রতি বারো বছর অন্তর অন্তর আসে। চীনাদের রাশিচক্রে যারা ড্রাগন বর্ষে জন্মায় তাদেরকে খুব ভাগ্যবান ও ক্ষমতার অধিকারী মনে করা হয়। যেহেতু সে ড্রাগন বর্ষে জন্মেছে , একারণে ব্রুস লিকে ছোট্ট ড্রাগন বলেও ডাকা হতো।
ড্রাগসের সাথে ব্রুস লি'র সম্পর্ক
অনেকের ধারণা ব্রুস লি ড্রাগসে আসক্ত ছিলেন। অথচ, তিনি কখনো ধূমপান করেননি, এমনকি এলকোহল জাতীয় পানীয় থেকে দূরে থাকতেন সবসময়। যদিও মার্শাল আর্ট ও সিনেমার স্ট্যান্ট করতে গিয়ে জীবনে অসংখ্যবার তিনি ইনজুরিতে পড়েছেন। যার কিছু কিছু এমনই মারাত্মক ছিলো যে ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ারও পরিস্থিতি হয়েছিল। তাই ইনজুরিতে পড়ার কারণে তাকে প্রচুর পেইনকিলার নিতে হয়েছে।
দার্শনিকতার প্রতি আগ্রহ
মার্শাল আর্ট ও অভিনয়ের বাইরে ব্রুস লি আরেকটু কাজে খুব সময় দিতেন। সেটি হচ্ছে ফিলোসফি পড়া ও লেখা। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে তার পড়ার বিষয়ও ছিলো দার্শনিকতা। অনেকে বিভিন্ন বিষয়ে তার কাছে মতামত জানতে চাইতো, এবং তার কথাকে গুরুত্বও দিতো খুব। “দ্যা ওয়ারিয়র উইথইন” নামে ব্রুস লি’র দার্শনিকতার ইতিবৃত্ত নিয়ে একটি অসাধারণ বইও আছে, যেখানে এই বিশ্বকে আরো গভীরভাবে বোঝা ও একটি সফল জীবন গড়ার জন্যে কী করা উচিৎ সে সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ব্রুস লি ছিলেন একজন সত্যিকার শিল্পী
ব্রুস লির নানান দিকে আগ্রহ ছিল। অবসরে তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। তাছাড়া কবিতাও লিখতেন তিনি! তার কবিতা সংকলিত হয়েছে “The Tao of JeetKune Do”-এই বইটিতে। মার্শাল আর্ট আর ফাইটিংয়ের দৃশ্য বেশি আঁকতে পছন্দ করতেন তিনি। তার নিজের সংগ্রহের ২০০০+ বই নিয়ে একটি লাইব্রেরিও আছে। নতুন কিছু পড়তে তার খুবই ভালো লাগতো।
ব্রুস লি ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না
তিনি এমন এক পরিবারে জন্মেছিলেন যেখানে তার মা ছিলেন একজন ক্যাথলিক ধর্ম বিশ্বাসী। আর বাবা ছিলেন একজন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ছোটবেলায় তাকে ক্যাথলিক স্কুলে পাঠানো হলেও এক পর্যায়ে তাকে ধর্ম নিয়ে আর কোনো চাপ দেয়া হয় নি। একবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন।
যে কাজগুলো করতে একদমই পারতেন না
ব্রুস লি সাঁতার পারতেন না, পানি দেখলেই তার ভয় করতো। বাইক, গাড়ি কোনোটাই তিনি চালাতে পারতেন না। তার বন্ধুদের মতে, তিনে ছিলেন একজন জঘন্য ড্রাইভার এইজন্য ব্রুস নিজেই মাঝেমধ্যে বন্ধুদের অনুরোধ করতেম তার হয়ে গাড়ি কিংবা বাইক চালানোর জন্যে!
জন্মই যার অভিনেতা হওয়ার জন্যে
ব্রুস লি যখন খুব ছোট, তখন থেকেই তিনি তার মাকে বলতেন, তিনি খুব বড় সিনেমাতারকা হবেন! বয়স যখন ছয়, তখন “বার্থ অব ম্যানকাইন্ড” নামে হংকংয়ের একটি সিনেমায় কাজ করেন। যেখানে তার চরিত্রটি ছিলো পথশিশুর, যে কিনা মারামারি করে। মাত্র ১৮ বছর বয়স হতে না হতেই ব্রুস লিকে ২০ টি সিনেমায় বিভিন্ন রোলে দেখা যায়। ছোট থেকেই বিভিন্ন সিনেমায় শিশু চরিত্রে অভিনয়ের জন্যেই হয়তো ক্যামেরায় সামনে সহজাত সাবলীল অভিনয় করতেন ব্রুস লি।
ব্রুস লি'র মৃত্যু রহস্য
ব্রুস লি'র মৃত্যু নিয়ে এখনো গুঞ্জন চলে। কেউ বলে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। আবার কারো ধারণা তার মৃত্যুর সাথে পরিবারের অভিশাপ জড়িত। কেউই ঠিক জানে না কেন হুট করে এমন সুস্বাস্থ্যবান একজন মানুষ চোখের পলকে মারা গেলো। হংকংয়ের কাউলুন টং এর বাড়িতে মারা যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন তারা মাথা ব্যথা। এজন্যে ঔষুধ খেয়েছিলেন। এরপরই রহস্যজনকভাবে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই মানুষটার মৃত্যু হয়। ব্রুস লির একটি অসাধারণ উক্তি দিয়ে লেখাটির সমাপ্তি টানছি।
সবসময় নিজস্বতা ধরে রাখো, নিজেকে প্রকাশ করো, নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। সফল ব্যক্তিত্ব খুঁজে বেড়ানো আর তাদের নকল করে তাদের মতো হওয়ার চিন্তা বাদ দাও।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন