
প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশে। আসুন জেনে নেয়া যাক সে পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশে। এমন কিছু প্রস্তাব ও পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আগামী মার্চের মধ্যে শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালে গিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পুরোপুরি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে।
প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। হাতে-কলমে শেখানো যায় এমনভাবেই বইগুলো হবে। প্রাথমিক স্তরে বইয়ের নামেও পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে। বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বই পড়ানো হবে। যে ১০টি বই পড়ানো হবে সেগুলো হলো: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধু ১০ম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী।
একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষায় শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। উচ্চমাধ্যমিকে ছয়টি বিষয়ে ১২টি পত্র থাকবে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি— এই তিনটি বিষয় সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে। এর সঙ্গে একজন শিক্ষার্থী তার পছন্দের শাখার তিনটি বিষয় নেবে, যার প্রতিটির জন্য তিনটি পত্র থাকবে। যেমন বিজ্ঞানের তিনটি বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের প্রতিটির জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়পত্র থাকবে। বাধ্যতামূলক ওই তিনটি পত্র এবং শাখার প্রতিটি বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষা হবে একাদশ শ্রেণিতে।
শাখার বিষয় নির্বাচনে কিছু নমনীয়তা দেখানোর চিন্তাও আছে। এটি হলে একজন শিক্ষার্থী চাইলে তার মূল শাখার দুটি বিষয়ের সঙ্গে অন্য শাখার আরেকটি বিষয় নিতে পারবে। এই পরীক্ষা হবে শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এই পরীক্ষার নম্বর বোর্ডে সংরক্ষিত থাকবে। এরপর দ্বাদশ শ্রেণিতে সংশ্লিষ্ট শাখার প্রতিটি বিষয়ের বাকি দুটি করে মোট ছয়টি পত্রের পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষার নম্বর ও একাদশ শ্রেণিতে সংরক্ষিত নম্বর মিলিয়ে চূড়ান্ত হবে একজন শিক্ষার্থীর উচ্চমাধ্যমিকের ফল।

এনসিটিবি থেকে জানানো হয়, অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বইয়ের সংখ্যাও এখনকার চেয়ে কমবে। বিষয়বস্তু বদলাবে। আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত হবে। তখন বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হবে। বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষার ভিতটা তত শক্ত করতে হবে। এজন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে সব বিষয়ে মোটামুটি দক্ষ করে গড়ে তোলা দরকার। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে কতটুকু পড়ানো হবে, সেগুলো সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করতে হবে। সময়ের চাহিদায় উপযুক্ত করে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে এই নতুন ধারার শিক্ষাস্তর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই দেশের বাইরে পড়াশুনা করতে গেলে এখান থেকে পড়ে যাওয়া বিষয়গুলো আবার পড়ে পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ বারবার করতে হয়। সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন ব্যতীত শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সার্টিফিকেট তৈরির কারখানার কোনো মুল্য নেই। অথর্ব জিপিএ-ফাইভ জেনারেশনই তৈরি হবে এতে, মানবসম্পদ তৈরি হবে না। মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী ছাড়া বহির্বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বিকল্প কোনো পথ নেই।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে আমরা দেখেছি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঢেউয়ে ভেসে আসা অযাচিত জিপিএ-ফাইভ। সৃজনশীলতার নামে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিণত হয়েছে গিনিপিগে। যথাযথ পদক্ষেপের পরিবর্তে কয়েক বছর পরপর এভাবে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে থাকলে এই গিনিপিগটাও হয়তো আর বাঁচবে না।