এই কাজটা অন্য কেউ করলে ছাত্রলীগ এতোক্ষণে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭৩ টা মামলা করতো সারাদেশে। কিন্তু একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের যে খুব বেশি কিছু করার নেই সেটা পরিস্কার...

কোনভাবেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হতে পারে না। কোনভাবেই না। হ্যা, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি যেই সংগঠন গড়েছিলেন সেটার নাম পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ছিল। কারণ তখন এই দেশটার নাম পূর্ব পাকিস্তান ছিল। কাজেই ছাত্র সংগঠনের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। 

কিন্তু শুরু থেকেই সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগ বলতো। কাগজে কলমে প্রতিষ্ঠাকালে এর  ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ থাকলেও ১৯৫৩ সালে ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনায় ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’ হয়ে উঠে। এরপর ছাত্রলীগ কখনও ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেনি। আর ৭০ এর নির্বাচন এবং  স্বাধীনতার পর থেকে সেটা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কাজেই এখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বললে সেটা অবশ্যই ভুল। ভয়াবহ ভুল। অবশ্যই তাতে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা আছে। 

আমি জানি এই কাজটা অন্য কেউ করলে ছাত্রলীগ এতোক্ষণে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭৩ টা মামলা করতো সারাদেশে। কিন্তু ক্ষমতাসীন একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের যে খুব বেশি কিছু করার নেই সেটা পরিস্কার। 

তবে অবাক হয়েছি মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যে। তিনি ভুল স্বীকার করলেই হয়ে যেতো। কিংবা বলতে পারতেন তিনি আসলে এভাবে বলতে চাননি। বোঝাই যাচ্ছে এটা সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু তিনি যেভাবে সেই ভুলকে টিকিয়ে রাখতে ইতিহাস শেখানোর চেষ্টা করছেন সেটা ভয়ানক! 

আচ্ছা নিজের বক্তব্যে যদি অটল থাকেন তাহলে পারলে আগামী ২৩ জুন  পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ৭২ বছর পালন কইরেন দেখি কেমন পারেন। আচ্ছা বলেন তো ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন হয়েছিল কিন্তু কেন আওয়ামী লীগ তার ৭২ বছর পালন করে? কেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের না? 

এই সেই স্মারক স্ট্যাম্প

কারণটা খুব সহজ। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন হলেও ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম "আওয়ামী লীগ" করা হয়। এরপর আর এর সঙ্গে মুসলিম ছিল না। এখন যদি কেউ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বদলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে সেটা তো ভয়ানক বিপদের কথা!

আওয়ামী লীগকে বলবো এই ধরনের ইতিহাস বিকৃতি ঠেকান। নয়তো দেখবেন এই লিংক ধরে বহুজন বলবে দেখেন, একদিন সত্যি সত্যিই ছাত্রলীগ মুসলিম ছাত্রলীগ হয়ে গেছে আর আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে মুসলিম লীগ। 

আবারও বলছি, ভুল মানুষের হতেই পারে। সেই ভুল স্বীকার করে নেয়াই ভালো। কিন্তু সেটা না করে ভুল তর্ক করে যাওয়াটা ভয়ঙ্কর। ইতিহাসের ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর এই খেলা বন্ধ হওয়া উচিত।

আরেকটা কথা আমাদের ডাকবিভাগের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে যে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ তার বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এই দুর্নীতি লুটপাট ঢাকতে ইতিহাসের এসব নাটক কী না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কখনোই চুরি লুটপাট হতে পারে না। কাজেই সরকারকে বলবো না ডাকবিভাগের দিকে নজর দিন।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা