চেতা নিলওয়াতি: দৃষ্টিশক্তিহীন এক নারী সাংবাদিকের হার না মানার উপাখ্যান!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আচমকা দৃষ্টিশক্তি হারানো চেতার জীবনটা থমকে যেতে পারতো, সেটা তিনি হতে দেননি। আগের মতোই সাংবাদিকতা করছেন, ওয়েবসাইট ডেভেলপ করছেন, করোনা কেটে গেলে অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টার্স করতে যাবেন; কে বলবে তিনি চোখে দেখতে পান না?
শ্রীলঙ্কান ইরফান হাফিজের গল্প পড়েছিলাম বেশ কিছু বছর আগে, যাকে ডাকা হতো 'কিবোর্ড ওয়ারিয়র' নামে। অদ্ভুত এক রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা শরীরের মধ্যে শুধুমাত্র একটি আঙুলকেই নাড়াতে পারতো সে। অথচ এই একটি আঙুল নাড়িয়েই সে লিখে ফেলেছিলো তিনটি বই! যেগুলো হয়েছে বেস্টসেলারও! সারা পৃথিবী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এরকম ইরফানের উদাহরণ আছে হয়তো ভালো পরিমানেই। হয়তো সবার গল্প জানি না বলে, সবার কথা বলতে পারছি না। তবে সম্প্রতি দেখলাম আরেকজনকে, যিনি শারিরীকভাবে ইরফানের চেয়ে ঢের ভালো অবস্থানে আছেন, তবুও তার গল্পটা একটু অন্যরকম। উৎসাহের, অনুপ্রেরণার, তীব্র মনোবলের। মানুষটির নাম চেতা নিলওয়াতি৷ যিনি ইন্দোনেশিয়ার একটি বিখ্যাত ম্যাগাজিনের নারী সাংবাদিক।
চেতা যখন সাংবাদিকতা পেশায় আসেন, বেশ মনোযোগ দিয়েই কাজ করছিলেন নিয়মিত৷ দেখতে দেখতে দশ বছর হয়ে যায় সাংবাদিকতা পেশায়। ২০১৬ সাল তখন। তখনই এলো জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ। ক্রমশ দৃষ্টিশক্তি কমে আসতে লাগলো চেতা নিলওয়াতির। ডাক্তার জানালেন, চেতা'র চোখের রেটিনাতে সমস্যা হয়েছে। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথির কারণে চোখের বল থেকে রেটিনা সরে যাচ্ছিলো ক্রমশ। সে বছরেরই শেষদিকে গিয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান চেতা। যিনি এতবছর ধরে চুটিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন, সমাজের অসঙ্গতিকে নিজের চোখ দিয়ে দেখে, সেটা তুলে এনেছেন মানুষের চোখের সামনে, সেই মানুষটিই দৃষ্টিহীন হয়ে গেলেন পুরোপুরি। পুরো জগৎটাই কালিগোলা আঁধারে পালটে গেলো তার।
সাংবাদিকতা আর করতে পারবেন কী না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়। এসময়ে চেতার পাশে দাঁড়ায় একটি সংস্থা; 'মিত্র নেত্র ফাউন্ডেশন।' এই ফাউন্ডেশন কাজ করে দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষদের জন্যে। এদের সহায়তায় কাজকর্ম কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে এগোচ্ছিলেন চেতা৷ কিন্তু এরমধ্যেই আবার চলে আসে মহামারী করোনা। সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায় আবার। তবুও চেতা নিলওয়াতি থেমে যান নি। কাজ করে গিয়েছেন নিজের মত করেই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্যে একটি ওয়েবসাইট ডেভেলপ করার কাজে যুক্ত আছেন তিনি। সাংবাদিকতাও করছেন নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টার্স পড়তে যাবারও কথা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ান এই সাংবাদিকের।
চেতা'র গল্পটা অস্বাভাবিক কিছু না। এরকম অবস্থায় থাকলে অনেক মানুষই হতাশ হয়ে যেতেন হয়তো। হয়তো সরে যেতেন সবকিছু থেকেই। ঠিক সেখানেই চেতা একটু ভিন্ন। তিনি জানেন, পুরো পৃথিবীই একটা স্টেজ। যেখানে পারফর্ম তাকে করতেই হবে। কারন তো ঐ একটিই, দ্য শো মাস্ট গো অন। চেতা ঠিক সেটিই করেছেন। হয়তো আগে চোখে দেখতেন, এখন দেখছেন না। কিন্তু যেটা নেই, সেটা নিয়ে হাহাকার করলে সেই ঘাটতি পূরণ হয়েছেও বা কবে? সেজন্যে পিছিয়ে পড়লে আর কোনোদিন যে সামনে আসা হবে না, সেটা তিনিও জানেন। এ কারনেই এভাবে অদম্য হয়ে ছুটে চলা।
শ্রীলঙ্কান ইরফান হাফিজ অথবা ইন্দোনেশিয়ার চেতা নিলওয়াতি'র মত মানুষেরা আমাদের একটি বিষয়ই শেখায় বরাবর, মানুষ অমিত সম্ভাবনাময়। শুধুমাত্র মনের জোর থাকলেই করা সম্ভব সব। একেবারে সব। শুধু মনটাকে একটু শক্তিশালী করতে হয়। বাকিটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়ে যায়। ঠিক এই শক্তপোক্ত মানসিকতার কারণেই এই মানুষগুলো আমাদের প্রেরণার বাতিঘর।
শ্রদ্ধা রইলো।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন