প্রথমে হাত পা বাঁধা হলো, তারপর স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকিয়ে খুন্তি গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়িয়ে দেয়া হলো। এরপর দগ্ধ স্থানে ডলে দেয়া হলো মরিচ। রক্ত বের হওয়া শুরু হলে বলা হলো, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন উত্তর দেয়া হয় ‘ফোঁড়া হইছে’।
প্রথমে হাত পা বাঁধা হলো, তারপর স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকিয়ে খুন্তি গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়িয়ে দেয়া হলো। এরপর দগ্ধ স্থানে ডলে দেয়া হলো মরিচ। রক্ত বের হওয়া শুরু হলে বলা হলো, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন উত্তর দেয়া হয় ‘ফোঁড়া হইছে’। পোড়া শরীরের সাথে জামা এমনভাবে লেগে গিয়েছিলো, চিকিৎসার জন্য সে জামা খোলাও যাচ্ছিলো না। শরীরের চামড়া উঠে আসছিলো জামার সাথে।
যেখানে পান থেকে চুন খসলেই শরীর পুড়িয়ে ডলে দেয়া হয় মরিচ; সেখানে চড় থাপ্পড়, লাথি দেয়া, জুতা কিংবা লাঠি দিয়ে পেটানো তো খুবই সাধারণ দৈনিক ঘটনা। যার সাথে এমন ঘটনা ঘটে সে একজন দশ বছরের শিশু, তার নাম মালা। যে ঘটায় তিনি একজন নার্স, নাম দিলারা। নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস, মালা এখন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর সেই ইউনিটেরই নার্স দিলারা, যিনি এখন পলাতক আছেন। এদিকে, মালার শরীরের ৫% পুড়ে গেছে নির্যাতনে।
২ বছর আগে ২ হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্তী দিলারার যাত্রাবাড়ীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন পটুয়াখালী থেকে আসা মালা। দিলারার ছোট দুটি ছেলের দেখাশোনা করার পাশাপাশি, বাসার যাবতীয় কাজ করানো হতো মালাকে দিয়ে। কাজে একটু ভুল হলেই শুরু হতো নির্মম নির্যাতন। নির্যাতন শেষে কোনো রকম চিকিৎসা ছাড়াই ফেলে রাখা হতো তাকে। সে অবস্থাতেই করতে হতো কাজ।
নির্যাতনের কথা যেন কাউকে না বলা হয় তার জন্যেও করা হতো বাড়তি নির্যাতন। হাসপাতালের চিকিৎসা করার সামগ্রী ব্যবহার করে নির্যাতন করতেন নার্স দিলারা। দিলারার এই আচরণে রীতিমত আতঙ্কে দিন পার হতো অসহায় শিশু মালার। টানা ২ বছর সহ্য করার পর, নিজের জীবন বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে আসা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না শিশুটির। গত শুক্রবার সেখান থেকে পালিয়ে এসে পুলিশের শরণাপন্ন হয় মালা। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য মালাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
আফ্রিকানদের যখন ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো, সেসময়ের নির্যাতন ছিলো এমন। তার প্রায় ২০০ বছর পরে এসেও আমরা বর্বর রয়ে গেছি। গৃহকর্মীর প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে এখন। টর্চারের প্যাটার্নে এই মানুষরুপী গৃহকর্তীদের সাইকো কিলারের থেকেও ভয়ংকর মনে হয়। গল্প কিংবা সিনেমা থেকে উঠে আসা মানসিক বিকারগ্রস্থদেরও হার মানায় এরা। নিজের কাজ নিজে করতে পারে না, অন্যের কাজও পছন্দ হয় না, তারপর এমনভাবে নির্যাতন করে যেন এটা তাদের জন্মগত অধিকার। পৈশাচিক নির্যাতন করবার টাইম অ্যান্ড এনার্জি আছে, শুধু নিজের কাজ করবার সময় ও শক্তি নেই। তাই না?
কাজ পছন্দ না হলে ভালোভাবে বিদায়ও তো করে দেয়া যায়। একটা শিশুর শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করার কী দরকার? কে দিয়েছে এই অধিকার? এমন ট্রমাটিক সিচুয়েশন থেকে বেরিয়ে এসে ভুক্তভোগী শিশুরা কিভাবে বেড়ে উঠবে? কখনো এসব শিশুদের মানসিক ভারসাম্যের কথা ভেবে দেখেছেন কি? একটি শিশুর প্রতি এ কেমন নির্মম আচরণ? কাজ দেয়া মানেই কি কিনে নেয়া? আপনার নিজের শিশু হলে কেমন লাগতো? মেনে নিতে পারতেন নিজ সন্তানের উপর এমন বর্বর আচরণ?