এই ফটকাবাজির দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো নাকি বেঁচে থাকে না। কী কারণে বাঁচে না তা নিয়ে আমাদের কিন্তু কোনো প্রশ্ন নেই, আমরা শুধু অভিযোগ করেই ক্ষান্ত। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে অনিয়ম দূর্নীতির ভিড়ে, একজন দরিদ্র অসহায় পিতা তার সৎ উপার্জন দিয়ে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। অথচ আমরা কেউ তাকে সাহায্য করবো না। আমরা কিছু মুখস্থ অভিযোগ করেই যাবো...

এক হাতে জুতার কালি, সুঁইসুতা, সরঞ্জাম। অন্য হাতে ছেলেকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে পড়েন প্রতিদিন।  সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে জীবন সংগ্রাম। তবুও দমে যাননি, থেমে থাকেননি। এক হাতে জুতার কালি থাকলেও, চোখে তার শিক্ষার আলো। তাইতো ছেলের নাম রেখেছেন নক্ষত্র, ভর্তি করিয়েছেন স্কুলে। অন্যের জুতার পাশাপাশি নিজ সন্তানের ভবিষ্যতও উজ্জ্বল করতে চান তিনি।

বলছিলাম প্রানেশ চন্দ্র  ঋষির কথা। পেশায় একজন মুচি। জুতা সেলাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার বাড়ি ফরিদপুরে। জীবিকার তাগিদে বহু বছর আগে ঢাকা চলে এসেছেন। থাকেন ঢাকার মিরপুরে, সেখান থেকে এসে সেগুনবাগিচা এলাকার ফুটপাতে বসে কাজ করেন। নিজে পড়েছিলেন পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত। তাই দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়া ছেলেকে পড়ালেখা দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন কাজ করতে করতে। ছেলেকে ভর্তি করিয়েছেন সেগুনবাগিচা প্রাইমারী স্কুলে। স্বল্প আয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানের লেখাপড়াও চালিয়ে যাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি ব্যাপার। জুতা সেলাইয়ের পাশাপাশি নিজের সাধ্যমত ছেলের পড়াশুনায় সাহায্য করে প্রতিদিনই সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এই দরিদ্র পিতা।  

প্রানেশ চন্দ্র ঋষি ও তার ছেলে নক্ষত্র। মুচির কাজ করার পাশাপাশি ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। 

ছেলের জীবন যেন তার মতোই কষ্টের না হয় সেজন্যই এই কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন প্রানেশ। স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তার সংসার। ছেলেমেয়ে সুশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তার সন্তানেরা যেন নিজের এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে সেই আশায় বুক বেঁধেছেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই পিতা। শিক্ষার প্রতি অদম্য আগ্রহী এই মানুষটি আর কতোদিন কারো সাহায্য ছাড়া এই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারবেন সেটা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

এই ফটকাবাজির দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো নাকি বেঁচে থাকে না। কী কারণে বাঁচে না তা নিয়ে আমাদের কিন্তু কোনো প্রশ্ন নেই, আমরা শুধু অভিযোগ করেই ক্ষান্ত। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে অনিয়ম দূর্নীতির ভিড়ে, একজন দরিদ্র অসহায় পিতা তার সৎ উপার্জন দিয়ে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। অথচ আমরা কেউ তাকে সাহায্য করবো না। আমরা কিছু মুখস্থ অভিযোগ করেই যাবো...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা