কফি উইথ করণ: 'বিতর্কিত টকশো', নাকি ড্রয়িংরুমের আড্ডা?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
অনেকেই আমাকে বলতো যে এই শো'র মাধ্যমে আমি নিজের ইমেজ নষ্ট করছি। কিন্তু যখন হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা পাই, তখন এইসব তুচ্ছ মনে হয়। মানুষের ভালোবাসার উপর এইসব ইমেজ-টিমেজ আসলে কিছুই না...
'কফি উইথ করণ' এর শুরু হয় ২০০৪ সালে। এরকম একটি টেলিভিশন শো করার ইচ্ছা আমার অনেকদিন থেকেই ছিল। তখন সুনীল দোশী নামে একজনের সাথে আমি এই ব্যাপারে প্রথম কথা বলি। সে তখন টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করতো। এর কিছুদিন পর বাবা মারা যান। মাস তিনেক আর এ সম্পর্কিত কোন কথা হয়নি। ৩ মাস পর সুনীল পুনরায় আমার কাছে এই ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে এলে আনুষ্ঠানিকভাবে কফি উইথ কারানের যাত্রা শুরু হয়।
তখনকার সময় তারকাদের নিয়ে টক শো হলেও এইরকম একই সাথে ২ জন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর টক শোতে আসার প্রচলন ছিলনা। ভাবলাম, ১ জন তারকা আসলে সেটা টকশো কম ইন্টারভিউ বেশি মনে হবে। আমি চাচ্ছিলাম ২ জন তারকাকে একসাথে হাজির করে বৈচিত্র্যময় কনভারসেশন তৈরি করতে। যেন দেখে কোন 'ড্রয়িংরুমের আড্ডা' বলে মনে হয়। আর দর্শকরাও অন্যের গোপন কথা শোনার মতো আনন্দ পায়।
কফি উইথ কারানের ১ম এপিসোডের শ্যুটিং এ ছিল সাইফ আলি খান ও প্রীতি জিনতা। সেদিন আবার ছিল সাইফের জন্মদিন। সেই সময় সাইফ আর অমৃতার ডিভোর্স প্রায় হবে হবে অবস্থা। পারিবারিক ভাবে অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকলেও সাইফ শোতে আসতে রাজি হয়। এমনকি সে স্ত্রীর সম্পর্কেও কথা বলে। যাতে দর্শকদের মনে হয় তাদের সম্পর্ক এখনো ঠিকঠাক অবস্থায় আছে। ১ম এপিসোডের শ্যুটিং সম্পূর্ণ করতে লেগেছিল প্রায় ৬ ঘন্টা।
১ম সিজনে আমন্ত্রিত তারকারা কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই কথা বলেছিলো। শুরুতে কিছুটা অপ্রস্তুত ভাব থাকলেও কিছুক্ষণ পর তারা এমনভাবে আলাপ করতে শুরু করল যেন আশেপাশে কোন ক্যামেরাই নেই। কারন তখন পর্যন্ত এই শো এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কারোই কোন ধারনা ছিলনা। কেউ ভাবতেই পারেনি তাদের এই কথাবার্তা বাইরে এত প্রভাব ফেলতে পারে। ২য় সিজনে সবাই মোটামুটি সচেতন হয়ে গেলো। তাদের কথাবার্তায় কিছুটা সংযম এলো। তারা হয়তো বুঝতে পেরেছিল এখানে যা তা বলে পার পাওয়া যাবে না।
'কফি উইথ কারান' এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হল র্যাপিড ফায়ার রাউন্ড। কারণ এই রাউন্ডে তারকাদের অল্প সময়ের মধ্যে এমনকিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়- একই সাথে ফানি ও কখনো কখনো বিস্ময়কর। অনেকের ধারণা আমি তারকাদের শো এর আগেই র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডের প্রশ্ন দিয়ে দেই। তারাও সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসে। তবে এ ধারণা একেবারেই সত্য নয়। 'কফি উইথ কারান' শোতে শুধুমাত্র একবারই প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল। সেটা সঞ্জয় দত্তকে। কারণ তখন সে বেশ খারাপ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। বাড়তি কোন বিতর্কে সে জড়িয়ে পড়ুক, সেটা আমরা চাইনি।
এর পাশাপাশি অনেকের ধারণাআমি তারকাদের ব্যক্তিগত জিনিসকে ইচ্ছা করেই শো'তে তুলে ধরি যাতে কন্ট্রোভার্সি তৈরি হয়। ব্যাপারটা পুরোপুরি সত্য নয়। কেউ যদি আমাকে বিশ্বাস করে তার ব্যক্তিগত কোন কথা আমাকে জানায় তাহলে সেটা আমি কখনোই শোতে মেনশন করি না। আমি শুধুমাত্র সেইসব কথাগুলোই তুলি যেগুলো নিয়ে তাদের সম্পর্কে মিডিয়ায় আলোচনা হয়। সেই ব্যাপারে উত্তর দেয়াটাও সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
অন্যান্য টকশোর সাথে কফি উইথ কারানের পার্থক্য আছে। যদি কোন তারকা একটা প্রশ্নের মিথ্যা উত্তর দেয় তাহলে আমি সরাসরি তাকে বলতে পারি যে, তুমি মিথ্যা কথা বলছো। কিন্তু কোন সাংবাদিক যদি একই কথা কোন তারকাকে বলে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে মনে হয়। এই যে উভয় পক্ষের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা হয়, সেটা কোন সাংবাদিকের ইন্টারভিউতে সম্ভব নয়। তাই এই ধরনের ক্যান্ডিড কনভারসেশনের জন্যই কফি উইথ কারান মানুষের মধ্যে এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তবে এইরকম ক্যান্ডিড আলাপ- আলোচনা যে সবসময় ভাল কিছু ডেকে আনে, তা কিন্তু নয়। মাঝেমাঝে কেউ এমন কিছু অপ্রীতিকর কথা বলে ফেলে যা পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। ঠিক এইরকম একটা ব্যাপার ঘটেছিল 'সোনম-দীপিকা' এপিসোডে। সেই এপিসোডে তারা যেভাবে বেফাঁস কথাবার্তা বলেছিল তাতে কন্ট্রোভার্সি তৈরি হওয়ার একটা সম্ভাবনা মনে হয়েছিল আমার!
এবং সত্যি সত্যি সেটাই হলো। সেই এপিসোডে তারা রনবীর কাপুরকে নিয়ে অপ্রীতিকর কিছু মন্তব্য করে। রনবীর এই ব্যাপারে তেমন কিছুই মনে করেনি। কিন্তু তার বাবা-মা চরমভাবে ক্ষিপ্ত হলেন। ঋষি কাপুর তো বলেই ফেললেন যে তিনি আর কোনদিন ধর্ম প্রোডাকশনের সাথে কাজ করবেন না। নীতু কাপুরও যথারীতি আপসেট ছিল। তবে আমি তাদেরকে বোঝালাম যে, এই শো এর ভাইবটাই এমন। এখানে কেউ কাউকে আঘাত করার জন্য কিছু বলেনা। পুরোটাই জাস্ট একটা ফান কনভারসেশন। এরপর অবশ্য তারা শান্ত হলেন। ঋষি কাপুরও তার প্রতিজ্ঞা থেকে সরে এসে 'ধর্ম প্রোডাকশনের' ব্যানারে কাজ করলেন।
তবে সবসময় যে এমন সিরিয়াস প্রতিক্রিয়া হয় তা কিন্তু নয়। মাঝেমধ্যে অবাক করা কিছু ঘটনাও ঘটে। আলিয়া ভাট যখন ভারতের প্রেসিডেন্টের নাম বলতে পারলো না, তখন তাকে নিয়ে মোটামুটি হাসির রোল পড়ে গেল। 'স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার' সিনেমায় অভিনয় করেও অতটা আলোচনায় আসেনি যতটা আসলো এই শোতে একটা ভুল উত্তর দিয়ে।
তবে আলিয়া পুরো ব্যাপারটা স্পোর্টিংলি নিলো। এরপরই সে AIB এর সাথে 'কফি উইথ কারান' এর একটি স্পুফ ভিডিও বানালো যা তাকে মোটামুটি তারকা খ্যাতি এনে দিলো। নিজেকে নিয়ে এই ধরনের ফান করে সে মোটামুটি সাড়া ফেলে দিলো। মানুষের কাছে সে পরিচিতি পেলো। নেগেটিভিটিকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজের সুবিধামত ব্যবহার করাটা খুব কম মানুষই পারে। তাই আমি মনে করি আলিয়া মোটেই বোকা নয়, সে খুবই স্মার্ট।
এইধরনের ছোট-বড় জিনিসগুলোই কফি উইথ কারানকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। কোন শো এর রেটিং সিস্টেম আমি তেমন একটা জানি না। তবে বুঝতে পারি প্রতিটা সিজনেই মনে হয় যেন এই শো প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শুরুতে অনেকেই আমাকে বলতো যে এই শোর মাধ্যমে আমি নিজের ইমেজ নষ্ট করছি। আমারও খানিকটা তাই মনে হয়। কিন্তু যখন এর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা পাই, তখন এইসব তুচ্ছ মনে হয়। মানুষের ভালোবাসার উপর এইসব ইমেজ-টিমেজ আসলে কিছুইনা।
[ An Unsuitable Boy - থেকে অনুবাদিত ও পরিমার্জিত ]