কপিরাইটিংয়ের সায়েন্স! কিছু উদাহরণ, টিপস এবং ট্রিকস!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ডিজিটাল কন্টেন্ট, কপিরাইটিং, এডভারটাইজিং নিয়ে আগ্রহ বোধ করেন আপনি? দেরী না করে লেখাটি পড়ুন তাহলে!
আমি তখন ক্লাশ নাইনে পড়ি। আমাকে পড়াতেন বুয়েটের এক ভাইয়া। মিলন ভাই। তিনি একটু অদ্ভুত ছিলেন। পড়ানোর চেয়ে গান, সিনেমা, বই নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন। একদিন তিনি আমাকে একটি বই পড়তে দিলেন। নাম হলো, “বাংলা গদ্য, স্টাইলিসটিকস”। লেখকের নামটা ভুলে গেছি।
বইটাতে নানা গ্রাফ, চার্ট, পরিসংখ্যান দিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখার বিশ্লেষণ করা হয়েছিলো। এই যেমন রবীন্দ্রনাথের ক্ষুধিত পাষাণ গল্পে সর্বনাম পদ অথবা তৎসম শব্দের প্রয়োগ কতটুকু, কতক্ষণ পরপর হয়েছে, ইত্যাদি, নানারকম ডাটা! বইটি পড়তে গিয়ে খুব বিরক্ত লাগছিলো। কিন্তু তখন কী জানতাম, সামনে এমন দিন আসবে, যে এই অনলাইন মার্কেটিংয়ের যুগে লেখার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্যে রীতিমত গবেষণা করে ভালো লেখা বা কপি নিয়ে রীতিমত মোটা মোটা বই লেখা হবে!
হ্যাঁ, আজ বলবো কপিরাইটিং সংক্রান্ত কিছু নিয়ম-নীতি এবং উদাহরণ সম্পর্কে, যেগুলো হাজার হাজার ই-মেইল, ব্লগ এবং অনলাইন-অফলাইন কন্টেন্টের ডাটা এ্যানালিসিস করে পাওয়া গেছে।
(১) “আমার সাইটে ব্রেজিস্ট্রেশনের জন্যে এখানে ক্লিক করুন”, এর বদলে লিখুন “আপনার রেজিস্ট্রেশনের জন্যে ক্লিক করুন এখানে”, ভিজিটর কিছুটা হলেও বেশি ক্লিক করবে!
(২) পণ্যের বিবরণ শেষে তাকে সরাসরি কিনতে না বলে যদি তার ওপর ডিসাইড করার ভার দেন, এই ভঙ্গিমাটি তাকে বেশি মোটিভেট করবেই!
(৩) ডোন্ট মেক হিম থিংক! উদাহরণ- আমরা দ্রুত ডেলিভারি দেই, এটার চেয়ে আমরা ২৪ ঘন্টার ভেতরেই ডেলিভারি দেই- অনেক বেশি কার্যকর!
(৪) সবাই জানেন, তারপরেও আবার বলি। শিরোনামের ক্ষেত্রে সংখ্যা ব্যবহার করুন বেশি বেশি। রাউন্ড ফিগার ব্যবহার না করে মৌলিক সংখ্যা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। (যেমন ১৩টি উপায়)। ৩ মিলিয়ন হেডলাইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এমন হেডলাইন ক্লিকরেট ৩৮% বাড়ায়।
(৫) আপনি জানেন আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ, বা প্রোডাক্ট বেশি ভালো। কিন্তু এই আত্মতুষ্টিতে ভুগে কোন লাভ নেই। ভাবুন আপনার ভিজিটরের মতো করে। বলতে হবে তার ভাষায়, আপনার ভাষায় নয়।
ভাবুন ভিজিটরের ভাষায়, নিজ ভাষায় নয়
(৬) গল্প দিয়ে শুরু করুন। খুব সহজ, সরল, স্বাভাবিক জীবনের গল, এক্সট্রার্ডিনারি কিছু না। এই লেখাটাও কিন্তু আমি গল্প দিয়ে শুরু করেছি। আপনি কি প্রথম লাইনটা পড়েই বাদ দিয়ে দিয়েছেন? বাজী ধরে বলতে পারি, না!
(৭) মানুষ নেতিবাচকতায় বিশ্বাসী। নেতিবাচক শিরোনাম ব্যবহার করুন, ওপেন রেট বেড়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো হয়,যদি আপনি পজিটিভ কথাকে নেগেটিভভাবে লেখার কৌশল রপ্ত করতে পারেন! এটার নেতিবাচক এক্সপ্রেশন কেমন হতে পারে, অন্য চানাচুর এই চানাচুরের চেয়ে খারাপ? নট আ স্মার্ট ওয়ে! লিখুন, এই চানাচুরের স্বাদ না নিয়ে আপনার উপায়ই নেই! এ জাতীয় ডাটা নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে ওপেন রেট বাড়ে ৬৩%!
(৮) একটি মাত্র অক্ষর যোগ করে ডেনমার্কের একটি থিয়েটার একবার তাদের রেভিনিউ ২০% বৃদ্ধি করেছিলো। কী সেটা, জানেন? ‘s’. Buy ticket এর বদলে তারা লিখেছিলো Buy tickets এই একটিমাত্র অক্ষরের সংযুক্তিতে কেন রেভিনিউ বাড়লো? ভাবুন। ভেবে এরকম একটা অক্ষর আপনিও বের করে ফেলতে পারেন!
(৯) আপনার প্রোডাক্ট/সাইট/ব্লগের ইউজারদের কাছ থেকেই কপি লিখিয়ে নিন! কীভাবে? লয়্যাল কাস্টমারদের বের করতে অডিয়েন্সের কাছে জিজ্ঞেস করুন একটি প্রশ্ন, “আমার সার্ভিসটি যদি বন্ধ করে দেই, আপনার কেমন লাগবে?” অপশন দিন ৩টি- (১) খুব খারাপ (২) খারাপ (৩) কিছুই এসে যাবে না। এবার বেছে নিন তাদের, যারা প্রথম অপশনটি বেছে নিয়েছিলো। এবার তাদের জিজ্ঞেস করুন ৩টি প্রশ্ন। (১) আপনি সার্ভিসটি থেকে কীভাবে উপকৃত হয়েছেন? (২) এটা কাউকে রিকমেন্ড করেছেন? (৩) রিকমেন্ড করলে তাকে কী বলেছেন? ব্যাস, অনেক রসদ পেয়ে গেলেন। এবার কীভাবে এটা ইউটিলাইজ করবেন, সেটা আপনার ক্রিয়েটিভিটি!
(১০) অনলাইনে পার্সোনাল জিনিস বিক্রি করতে চান? ইহা বিক্রয় হইবে, ইহা এত ভালো এসবের বদলে একটা ইমোশনাল গল্প জুড়ে দিয়ে দেখুন তো কী হয়! (বেচার ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু দায়ে পড়ে… বা এই জাতীয় কিছু)। ডাটা তো বলছে কাজ হয়!
(১১) লেখাকে Scanable করুন। এটা কী জিনিস? ব্যাখ্যা করি। Copyblogger.com এর জরিপে দেখা গেছে ৮০% মানুষ শুধু শিরোনাম, শুরু, এবং শেষটা পড়ে। সঠিক কথাটি হলো, ‘পড়ে’ না। চোখ বুলিয়ে যায়। তাই আপনার কপি হওয়া উচিৎ এমন, যেন চোখ বুলিয়েই মোটামুটি ধারণা পেয়ে যায় মূল বিষয়টা কী! আরো অনেকভাবে স্ক্যানেবল করা যায়। এটা চর্চার বিষয়। ইংরেজি কন্টেন্টের জন্যে লেখা স্ক্যানেবল কি না সেটা যাচাই করার জন্যে Tool ও আছে! যেমন- READABILITY TEST TOOL
আমার লেখাটি কি স্ক্যানেবল ছিল? পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয়। এইসব তথ্য, উপাত্ত, নির্দেশনা কোনোটাই ধ্রুব সত্য নয়। মানুষের মন পরিবর্তনশীল। তাই অন্যের ডাটার ওপর ১০০% ভরসা না রেখে, নিজেই তৈরি করুন ডাটা! ক্রমাগত a/b test করে দেখে নিন কোন শব্দ, কোন রং, কোন ধরনের লেখা কোন শ্রেণির পাঠককে বেশি টানছে। কন্টেন্ট এবং ডাটার মেলবন্ধন জয়ী হোক!
তথ্যসুত্র- Growth Hacking Plans: How I create Growth Hacking Plans for startups By Alddin Happy
আরও পড়ুন-