ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তান করোনা মোকাবেলা করতে পারলে, আমরা কেন পারছি না?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমরা কীভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছি জানেন? আমাদের করোনা টেস্ট করার সেন্টার মাত্র ১ টা, ওদের ১৪ টা। মারাখোর ছাগলরা যদি ১৪ টা বানায়, আমরা কেন একটাই বানালাম?
আসেন আমাদের চোখে চরমতম ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তান কীভাবে করোনার সাথে যুদ্ধ করছে তার কিছু ধারাবিবরণ দিই। গত মার্চের ১৬ তারিখ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ স্বাস্থ্য সহকারি ডাঃ জাফর মির্জা এক প্রেস ব্রিফিং এ বলেন, আমাদের সক্ষমতা কম। আমাদের টেস্টিং কিটের স্বল্পতা আছে। রোগের লক্ষণ ব্যতীত অযথা স্যাটিসফেকশনের জন্য আপনারা কিট নষ্ট করবেন না।
তখন পাকিস্তানের সক্ষমতা কত জানেন? তাদের তখন ১৪টা করোনা টেস্টিং ল্যাব কাজ করছে। নিজেদের হাতে জমা আছে ১২০০০ এর অধিক কিট। ততদিনে তারা যোগাযোগ করেছে চীনের সাথে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথেও। চীন নিশ্চিত করেছে, লাখ খানেক কিট পাকিস্তানে পাঠাচ্ছে তারা। খুব সম্ভবত চলেও এসেছে এতদিনে। দুই দেশের জনসংখ্যা প্রায় সমান৷ আমাদের কয়টা ল্যাব জানি কাজ করছে? কতটা কিট জানি হাতে আছে? তারচেয়ে বড় কথা, কেউ স্বীকার করেছেন এখন পর্যন্ত যে আমাদের সক্ষমতা কম?
মার্চের ১৩ তারিখ ইমরান খানের নির্দেশে পাকিস্তানের সকল স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা বন্ধ করি ১৮ তারিখ। ব্যবধান ৫ দিন। এই ৫ দিন কতটা বিশাল পার্থক্য তৈরি করতে পারে বলছি একটু পরেই। ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস। বিশাল সমারোহে এই দিন পালন করে পাকিস্তান। ১৪ তারিখ ঘোষণা করা হয়, পাকিস্তান দিবসের সকল আয়োজন স্থগিত। এমনকি বন্ধ করা হয় মিলিটারি প্যারেড।
১৭ তারিখ ঢাকার রাস্তায় আতশবাজি দেখতে কত হাজার মানুষ জানি হয়েছিল? পাকিস্তান আফগানিস্তানের বর্ডার লক ডাউন করে মার্চের ২ তারিখ। ইরানের সাথে লক ডাউন করে ৭ তারিখ এবং সবশেষে তাদের পরম মিত্র চীনের সাথে বর্ডার বন্ধ করে ১৬ তারিখ। ভারতের সাথে আমরা কবে জানি বন্ধ করছি? মার্চের ২১ তারিখ পাকিস্তান সকল ধরণের ফ্লাইট ও ট্রেন বন্ধ করে দেয়। আমাদের ঝকঝকাঝক এখনো চলছে।
পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী এলাকা হচ্ছে সিন্ধু প্রদেশ। সরকার ইতোমধ্যে সিন্ধের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য সহায়তা পাঠিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হেইকো মেস এর সাথে ফোনে কথা বলে জরুরি ঋণ সহায়তা চেয়েছেন৷ তিনি ফোনে আর্তি জানিয়ে বলেন, বৈশ্বিক এই বিপদে জার্মানী যদি তার দেশকে সাহায্য করে, পাকিস্তান আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।
আর আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী? করোনা আহামরি কোনো রোগ না। জ্বর কাশির মতো সাধারণ রোগ! পাঞ্জাব সরকার মার্চের ১২ তারিখ নিজেদের প্রদেশে হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে। সিন্ধু প্রদেশ সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। মার্চের ১ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সিন্ধু সরকার। এখন এই ছুটি মে মাস পর্যন্ত প্রলম্বিত করা হয়েছে।
বেলুচিস্তানে রেস্পন্স করেছে তারও আগে। জানুয়ারির ২৭ তারিখ বেলুচ সরকারের ১৪ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেয়। বেলুচ মন্ত্রী সরদার ইয়ার মোহাম্মদ স্পষ্টভাবে বলে দেন, কেউ এই নিয়ম অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। (প্রসঙ্গত, এই ঘোষণার এক মাস পর পাকিস্তানে প্রথম করোনা কেস ধরা পড়ে)
গতকাল ২২ তারিখে একটা ডেথ রিপোর্টের পর থেকে টোটাল লকডাউনে আছে গিল্টিত-বালটিস্তান প্রদেশ। ইমরান খান পুরো দেশ লক ডাউন করতে চাননি কারণ দেশের ২৫% দরিদ্র মানুষ তখন খেতে পাবে না। প্রদেশিক সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে বেইল দেয়নি।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আজাদ কাশ্মির মেডিকেল ইমারজেন্সি ঘোষণা করে ১৪ তারিখে। ১১ টা পয়েন্টে করোনা স্ক্রিনিং করছে কাশ্মির এবং ১০ টা দেশে করে কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্প। ২১ তারিখ থেকে লকডাউনে আছে আজাদ কাশ্মির। মার্চের ২১ তারিখ থেকে নিয়ে ১৪৪ ধারায় আছে রাজধানী ইসলামাবাদ। স্থবির রাজধানী শহর।
তো বাঙালস, কেমন দিল পাকিস্তান? একটু জ্বলছে তো? উহু, কাই কুই করার চেষ্টা করে লাভ নাই। সব খবর ভালো মতো ভেরিফাই করে আমি লিখছি। নিচে লিংক দিচ্ছি প্রায় সব খবরের। তাও কোনোটা মিস হলে আমি তথ্যসূত্র পাঠিয়ে দেব। উপরে বলেছিলাম ৫ দিনের অনেক গুরুত্ব। হ্যাঁ, এই পাকিস্তান দিয়েই উদাহরণ দিই তার।
পাকিস্থানে অফিশিয়ালি প্রথম করোনা ধরা পড়ে ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ। তারপর থেকে প্রতিদিন করোনা পজেটিভ রোগীর মোট সংখ্যা যথাক্রমে ২, ২, ৪, ৪, ৫, ৬, ৬, ৭, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২৮, ৩১, ৫৩, ১৮৭, ২৪২, ৩০২, ৪৬১, ৪৯৫, ৬৪৬, ৭৮৪ এবং আজকে সম্ভবত হাজারে চলে গেছে।
শুরুর দিকে মাত্র একজন দুজন করে বাড়ছিল। মার্চের ১৪ তারিখ যে সংখ্যাটা ছিল ৩১। ১৮ তারিখে সেটা হয়ে গেছে ৪৬১। মনে রাখতে হবে, তখন সব স্কুল কলেজ বন্ধ ছিল। এই জ্যামিতিক হিসাব রোখার সাধ্য নাই। এটা বাড়বে বাড়তে এবং বাড়তেই থাকবে। যাই হোক, পাকিস্থান নিয়ে এত এত কিছু গবেষণা করছি বলে আমাকে গালি দিতে পারেন। নিজেরে চোর হই, বাটপার হই তাতে সমস্যা নেই; ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানরে গালি দেয়া তো আমাদের আধুনিক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ঈমানের অংশ, গালি দিন আমাকেও। আমি জবাবে কিছুই বলব না।
বাস্তবতা জানা উচিত। সত্যের সামনে মুখোমুখি হওয়া দরকার। জানা উচিত আমরা যাদেরকে প্রসঙ্গ পেলেও ব্যর্থ বলি, না পেলেও বলি তারা এই ইস্যুতে আমাদের চেয়ে বেশি আন্তরিক ও সফল। দুইটা জায়গায় অবশ্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এখনো ভাই ভাই সমান। প্রথমত পাকিস্তান বাংলাদেশের মতো এখনো মসজিদ বন্ধ করেনি। বিস্মিত হয়ে একটা রিপোর্ট এসেছে বিশ্ব মিডিয়ায় "পুরো মুসলিম বিশ্ব, কেনিয়া থেকে সৌদি আরব, ব্রিটেন থেকে কুয়েত... জামাতে নামাজ বন্ধ করলেও ব্যতিক্রম কেবল পাকিস্তান। দেশটিতে শেষ জুম্মাবারেও উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মুসল্লি জামাতে নামাজ পড়েছেন।" (লেখার শেষে তথ্যসূত্র দেয়া আছে)
এখানে ইন্টারেস্টিং একটা ফ্যাক্ট বের হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অনেকেই নাকি আমাদেরকে মুসলিম দেশ হিসেবে মানতেই চায়নি৷ ৫০ বছর পরও আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে হয়তো কেউ গোণায় ধরে না। দ্বিতীয় মিলের জায়গা, পাকিস্তানও এখনো সব ডাক্তারদের জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন নিশ্চিত করতে পারেনি। কিছু কিছু জায়গায় ডাক্তাররা ঘোষণা দিয়েছে, আগামী কালকের পর থেকে তারা গণ-ইস্তেফা দেবে। কাজে ফেরাতে হলে তাদেরকে পিপিই তো দিতেই হবে, পাশাপাশি ঘোষণা করতে হবে রিস্ক স্কিম। সন্তানদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত জেনেই তারা মরার মুখে পা বাড়াবে৷ (এই খবরের লিংকও নিচে আছে। এটা অবশ্য বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। ওদের ডাক্তারদের এত বড় মেরুদণ্ড কই থেকে আসল তদন্ত করে বের করা উচিত)
যাই হোক, আমার লেখায় কেউ আহত হলেও কিছু করার নাই। এস্পার ওস্পার সময় কাছাকাছি। এই লেখাটা যদি উপরের লেভেলের কারো চোখে পড়ে, ভাববেন না আমি আপনাদেরকে বকা দিচ্ছি। আপনারা কত সরল, কত কিউট, কত নিষ্পাপ! শিশুর মতো একদম। আপনাদের ওপর রাগ করতে পারি? দেখেন পাকিস্তানের মতো ব্যাক বেঞ্চার এত কিছু করে ফেলছে। আপনারা তো ফার্ট বয় (বা গার্ল) ইগোতে লাগছে না? জ্বলছে না? শিশুর জেদ নিয়ে জেগে উঠুন। দেখিয়ে দিন দুনিয়াকে। দেরি যা হবার হয়েই গেছে, এবার অন্তত ঠিকটা হোক।
সবশেষে দুইটা কথা। আমি পাকিস্তান লাভার না। কোনোকালেই ছিলাম না। ক্রিকেটে ফিকেটে কিছুতেই না। এক সময় কুখ্যাত মাত্রায় হেইট করতাম পাকিস্তানকে। এখনো করি। তবে নিজের গুয়ের গন্ধ শুকতে শুকতে তাদের গুয়ের গন্ধ প্রায়ই নাকে লাগে না আর। দুই, পাকিস্তানে করোনা রোগী প্রায় হাজার। আমাদের তিন একে তিন, চার ছয় চব্বিশ... এখন মনে হয় ২৮ বা ৩০।
আমরা কীভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছি জানেন? আমাদের করোনা টেস্ট করার সেন্টার মাত্র ১ টা, ওদের ১৪ টা। মারাখোর ছাগলরা যদি ১৪ টা বানায়, রোগী বাড়বে না কমবে? ওরা বুদ্ধি করে মাত্র ১ টা কেন করল না? কাশ্মিরের মতো ভাঙা প্রদেশ আবার ১১ টা এন্ট্রি পয়েন্টে থার্মাল মেশিন বসায়! আচ্ছা বলেন তো, এই যুগে করোনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটু বুদ্ধি না থাকলে চলে? এই বুদ্ধি নিয়া চললে পাকিস্তান জীবনেও সফল রাষ্ট্র হইতে পারবে?
সব খবরের লিংক দিয়ে দেয়া হলো। সন্দেহ দূর করতে পড়ে নিন-
https://en.m.wikipedia.org/wiki/2020_coronavirus_pandemic_in_pakistan
https://gulfnews.com/world/asia/pakistan/pakistan-doctors-in-the-frontline-of-battle-against-coronavirus-1.70524078
https://www.dw.com/en/coronavirus-is-pakistan-taking-covid-19-too-lightly/
https://arynews.tv/en/coronavirus-screening-tests-laboratories-covid-19-pakistan/
https://www.geo.tv/latest/277756-does-pakistan-have-enough-coronavirus-test-kits