শুরুতেই সিংগাপুর কঠোরভাবে কনটাক্ট ট্র্যাসিং এর ভেতর দিয়ে গেছে, এরপর যতগুলো সাসপেক্ট পেয়েছে, তাদের সব কটাকে অত্যন্ত কঠোরভাবে ১৪ দিন হোম কোয়ারেনটিন রেখেছে।

সিংগাপুরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উভয়ই উল্লেখযোগ্যরকম কম। তারা কিভাবে এটা করতে পেরেছে জানেন? 

বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার! গোয়েন্দারা যেভাবে সূত্র খুজে! এক বৃটিশ স্বাস্থ্যকর্মীকে মাঝরাতে ফোন করে জিগেস করা হলো, সে গতকাল রাতে ট্যাক্সিতে করে বাসায় ফিরেছিলো কিনা। 

ভদ্রমহিলা হ্যাঁবোধক উত্তর দিলেন। এরপর তাকে বলা হলো, তিনি করোনা সাসপেক্ট। আগামী ১৪ দিন যেন ঘর থেকে বের না হয়। পরদিন সকালেই পুলিশ এসে তাকে আইনী নোটিশ দিয়ে গেলো। তার স্বাক্ষরও নিয়ে গেলো। এভাবেই শুরুতেই সিংগাপুর কঠোরভাবে কনটাক্ট ট্র্যাসিং এর ভেতর দিয়ে গেছে, এরপর যতগুলো সাসপেক্ট পেয়েছে, তাদের সব কটাকে অত্যন্ত কঠোরভাবে ১৪ দিন হোম কোয়ারেনটিন রেখেছে। সিংগাপুরে কনটাক্ট ট্রেস করে পুলিশ এসে সোজা উকিল নোটিশ ধরায় দিয়ে গেসে। বাড়ী থেকে বের হলে ১০ হাজার ডলার জরিমানা। আর সেই সাথে জেল। 

কনটাক্ট ট্রেসিং হল, আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে কারা কারা এসেছে, কতখন ধরে এসেছে, কিভাবে এসেছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষন করে সাসপেকটেড রোগীদের একটা তালিকা তৈরী করার চেষ্টা করা। এবং সে তালিকা ধরে ধরে কোয়ারেনটিন করা। প্রাথমিকভাবে, কোন দেশে বা কোন এলাকায় ভাইরাসের সংক্রমন রোধ করতে এই কাজটা করা হয়। ঠিকঠাকভাবে করতে পারলে, এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। এবং এই পদ্ধতিই সিংগাপুর অনুসরণ করে সুফল পেয়েছে।

গতকাল তাদের একটা কেইস স্টাডি পড়লাম। ওদের গোয়েন্দা বাহিনীর হেল্প নিতে হয়েছিলো কনটাক্ট ট্র্যাসিং এর জন্য। গোয়েন্দা বাহিনীরও কালঘাম ছুটে গেসিলো। আমাদের দেশেও কনটাক্ট ট্র্যাসিং ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। অনেক সময় সাপেক্ষ একটা প্রক্রিয়া এটা। যদিও ৪ জনের ট্র্যাসিং সম্পন্ন হয়েছে বলে সম্প্রতি মিডিয়াকে জানানো হয়েছে। তবে আমি যতদূর জানি, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেলে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে লাভ হবে বলে মনে হয় না খুব একটা। এটা করাই হয় যাতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু না হয়।

শুরু থেকেই কন্ট্র‍্যাক্ট ট্রেসিং চালিয়েছে সিঙ্গাপুর

অথচ “সীমিত আকারে” কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে, সেটা ICDDER ই কিছুদিন আগে জানিয়েছিলো। সুতরাং, কনটাক্ট ট্র্যাসিং এই মূহুর্তে কতখানি কার্যকর হবে, আমি সন্দিহান। তাছাড়া, সিংগাপুরে ইনফেকশাস ডিসিজ এ্যাক্ট টাইপের কিছু আছে, যার অধীনে কোন ইনফেকটেড লোক কনটাক্ট ট্রেসিংয়ের সময় মিথ্যা তথ্য দিলে তাকে সরাসরি আইনের আওতায় আনা যায়। 

আইন আমাদের দেশেও আছে, কিন্তু এনফোর্সমেন্ট নাই। কেউ যদি ভুলে কিংবা ভয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়, বা তথ্য গোপন করে, সেক্ষেত্রে তার জেল-জরিমানা হবে। কিন্তু কাজির গরু স্রেফ খাতা কলমেই আছে। শুনলাম, ইনফেকশনের ফেইজ ৩ এ তাও ট্র্যাক করা হয় কিন্তু ৪ এ সেটা আর করা হয় না। অফিসিয়ালি ডিজি ফেইজ ২ এর ঘোষণা দিলেও অনেকে ধারনা করছেন আমরা আদতে আছি ৩ এ।

যা হোক, আরো ঝামেলা আছে। ধরেন ট্রেস করে যতজন পাওয়া গেলো, তাদের কে কোয়ারেন্টাইনের প্রসিডিউর কি ঠিকমত নেয়া হয়েছে? আমাদের মত ঘন বসতিপূর্ণ দেশে কনটাক্ট ট্রেসিং করে সাসপেক্টকে সিংগাপুরের মত কঠোরভাবে কোয়ারেনটিন করা না গেলে কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। পুরো বিষয়টা একটা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছু হবে না। 

শুনলাম, দেশের একটা টেলিকম কোম্পানি সরাসরি এই কাজে যুক্ত। কিন্তু টেলিকমের হেল্প নিয়ে আপনি রোগীর রিয়েল টাইম জিপিএস লোকেশনের হিস্টরি ট্র্যাক করতে পারবেন, কিন্তু আক্ষরিক অর্থে কনটাক্ট ট্রেসিং করা যাবে না, বড়জোর নাম্বারটা অনুমান করা যেতে পারে। এখানে আরো কিছু ছোট খাটো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, আমি জানি না এগুলা কিভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে।

সত্যি বলতে কি, বড় বড় বিভাগীয় শহরগুলোতে মুটামুটি প্রকৃত লক ডাউন চলছে। কিন্তু, আমি তৃণমূলের কথা জানি। গ্রামের দিককার লকডাউন যেটা চলতেছে ওটা না চলার মতই। থাকা না থাকা সমান কথা। এবং এটাই স্বাভাবিক। আমি আশাও করি নাই যে সরকার লকডাউনের ঘোষনা দেওয়ামাত্র সব ঘরে ঢুকে বসে থাকবে। যেটা ইউরোপের মত সভ্য ও শিক্ষিত দেশেই হয় নাই।

আমার মনে হয়, কনটাক্ট ট্রেসিংয়ের চাইতে এখন বেশী জরুরী ম্যাসিভ লেভেলে টেস্টিং শুরু করা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে দায়িত্ব দিতে পারে এ কাজে, প্রতিদিন একটা টার্গেট দিয়ে দিবে। আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়াতে সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতালেও সমান তালে টেস্টিং চলেছে, নাহলে এত অল্প সময়ে এত বিপুল পরিমান টেস্টিং সম্ভবপর হতো না।

প্রতিদিন কমপক্ষে ১ হাজার টেস্ট না করা পর্যন্ত এই দেশের প্রকৃত চিত্রটা বোঝা যাবে না। আপাতত, অপেক্ষা করি ও দেখি কি হয়। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা