একদিন অবশ্যই মহাপ্রলয় শেষ হবে। ধ্বংসস্তুপ থেকে হাত পা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ানোই মানুষের বৈশিষ্ট্য। করোনা পরবর্তী সেই সময়ের জন্য ভালোবাসার এই গল্পগুলো জমা রইলো।
উহানের চেয়েও বড় হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে, বানাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে, যে কোন মুহুর্তে কাজ শুরু হবে। পনেরো কোটি টাকার মেডিক্যাল সরঞ্জাম আর পিপিই দিচ্ছে বেক্সিমকো। নিজেদের জমিতে আকিজ গ্রুপ গড়ে তুলছে তিনশ শয্যার স্পেশাল হাসপাতাল, সহযোগিতায় আছে গণস্বাস্থ্য (এছাড়াও গণস্বাস্থ্য স্বল্পমূল্যে টেস্টিং কিট তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে )
বিদ্যানন্দ, এক টাকার আহার সারাদেশ ব্যাপী প্রায় দশ লক্ষ মানুষের খাবারের আয়োজনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, ডোনেশন ফান্ডে প্রতি মুহুর্তে অর্থ সাহায্য জমা হচ্ছে, পাঠাচ্ছে দেশের ও দেশের বাইরের অসংখ্য বাংলাদেশী। বেতনের অর্ধেক টাকা করোনা তহবিলে দান করেছে জাতীয় দলের ক্রিকেটারা। সেবা, ডেইলি স্টার, সমকাল 'মিশন সেইভ বাংলাদেশ' ব্যানারে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সাহায্য করতে ক্নাজে মেছে, তাদের সাথে যোগ দিয়েছে সাকিবের ফাউন্ডেশনল। নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় বারশো দরিদ্র পরিবারকে খাদ্যের যোগান দিচ্ছে মাশরাফি।
করোনা চিকিৎসায় মিরপুর স্টেডিয়াম ছেড়ে দিতে প্রস্তুত বিসিবি। মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বুয়েট আলমনাই, M&S গার্মেন্টসের সম্মিলিত চেষ্টায় চিকিৎসকদের জন্য ইতিমধ্যে নিজেদের বানানো পিপিই বিতরন শুরু করেছে সেনাবাহিনী নৌ বিমান বাহিনী, বিজিবি আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি পথে নেমেছে। নোয়াখালির এমপি ইকরাম ৫০ লক্ষ টাকা অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে। ব্যারিস্টার সুমন নিজের গাড়ি এলাকার হাসপাতালে কাজে ব্যবহারের জন্য দিয়েছে।
বস্তায় বসে হিরো আলম নিজ এলাকায় ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তারগন নিজেরা গ্রুপ তৈরি করে ফোনের মাধ্যমে চব্বিশ ঘণ্টা সেবা প্রদানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আরও দেখেছি, বেড়িবাঁধের এক বাড়িওয়ালা ভারায় থাকা নিম্ন আয়ের মানুষদের বাসা ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছে। একজন ফ্ল্যাটের চাবি দিয়েছিল যেন করোনা চিকিৎসায় তার নতুন কেনা ফ্ল্যাট ব্যবহার করা হয়, রাজধানীর প্রধান সড়কে তিন অচেনা যুবক নিজে থেকে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটিয়ে দিচ্ছে গাড়িতে রিক্সায়, ভ্যানে।
সাত মসজিদ রোডের এক ছোট্ট মুদির দোকানদার তার দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া রিক্সাওয়ালাদের রিক্সায় তুলে দিচ্ছে খাবার, বৃদ্ধ বাবা চোখে চশমা এঁটে ডাক্তার ছেলের পোশাক বানিয়ে দিচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত কেউ মারা গেলে মৃতের গোসলের দায়িত্ব নিচ্ছে একজন মুসুল্লী।
একদিন অবশ্যই মহাপ্রলয় শেষ হবে। ধ্বংসস্তুপ থেকে হাত পা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ানোই মানুষের বৈশিষ্ট্য। তখন করোনার আগের আর করোনার পরবর্তী বিশ্ব এক থাকবে না।
আমূল বদলে যাবে গোটা বিশ্ব। নয়া বিশ্বে একদিন আমরা সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিবো, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং নিকুচি করে আনন্দে চিৎকার করে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে আমরা হাসবো, কাঁদবো।
বাবা তার ছোট মেয়েকে কাঁধে ছড়িয়ে ঘর ছেড়ে ভোঁ দৌড়ে পথে নেমে আসবে, তাকে যদি তখন জিজ্ঞেস করা হয়, 'ভাই আপনি যান কই?' বাবা তখন পাগলের মতো হাসতে হাসতে বলবে, 'আমি জানি না আমি কই যাই, আমার মেয়েটা বহুদিন পৃথিবী দেখে না'। দুই পাশে হাত ছড়িয়ে বাবা আবার ভোঁ দৌঁড় দিবে। কাঁধে চড়া ছোট্ট শিশুটি ফোকলা দাঁতে খলখলিয়ে হাসবে। নয়া সেই দুনিয়ার জন্য ভালোবাসার গল্পগুলো জমা রইলো।