আমাদের এই অবহেলার কার কারণে? যদি করোনা মহামারিতে এদেশের মানুষের গণমৃত্যু হয় তবে তার দায় কে নেবে?

আল-ফারুক শুভঃ আজ বিআরটিএ-তে যেতে হয়েছিল, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেবার জন্য। যেতে চাইনি, বাধ্য হয়েছি। কারণ, যত দিন যাবে, তত বেশি নাকি জরিমাণা গুণতে হবে। সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ, তিল ধারনের যায়গা নেই। দেখে আমার গা শিউরে উঠেছে। সেখানে যদি একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষও থাকেন, একদিনেই সেখানে হাজারখানেক মানুষ আক্রান্ত হবেন। জানিনা, আমি নিজেও সেই আক্রান্তদের মাঝে একজন হয়ে গেছি কিনা!

এক বয়স্ক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, করোনাভাইরাস সম্পর্কে উনি কিছু শুনেছেন কিনা। উনি বললেন, শুনেছেন! কিন্তু মুসলমানদের কিছু হবে না, উনি নিশ্চিত। আসার সময় দেখলাম বাসগুলোতে উপচে পড়া যাত্রী। 

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির রিসার্চ এর ফলাফল হচ্ছে শুধু মে মাসের ভেতরেই ৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যাবে শুধু বাংলাদেশে,  যদি করোনাভাইরাস সঠিকভাবে কন্ট্রোল করা না হয়। 

আমাদের এখানে এই ভাইরাস সঠিকভাবে কন্ট্রোল করার কোন উপায় কি আছে? এককথার উত্তর, "নেই"। বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীর সবচে ঘনবসতি দেশের একটি আমাদের দেশ। ঘরের বাইরে বের না হলে আমাদের দেশের ৭০% মানুষের পেটে কিছু পড়বে না। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র। এদিকে আমাদের ৮০% মানুষেরই গভীর বিশ্বাস এই ভাইরাসে মুসলমানদের কিছু হবেনা, কাজেই চিন্তার কিছু নেই। 

কাজেই, আমাদের কপালে গণমৃত্যুই আছে। এটাকে এড়ানোর কোন উপায় সম্ভবত নেই।

হ্যাঁ, এটা এড়ানো যেতো একটা উপায়েই। যদি এই ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকিয়ে দেয়া যেতো। যেহেতু একবার করোনাভাইরাস দেশে ঢুকে গেলে আমাদের এটি থেকে মুক্তির কোন সাধ্য নেই, আমাদের উচিত ছিল যেকোন মূল্যে এটিকে ঠেকিয়ে দেয়া, কিংবা এটির প্রবেশ যত বেশি সম্ভব দীর্ঘায়িত করা (ততদিনে এটির চিকিৎসা বের হয়ে যাবে এই আশায়)। 

কিন্তু নির্মম সত্যি কথা হচ্ছে, আমাদের কর্তাব্যক্তিরা ব্যস্ত ছিলেন জন্মশতবাির্ষিকীর অনুষ্ঠান নিয়ে। অজস্র মানুষের, মিডিয়ার শত কাকুতি মিনতির পরেও তাঁদের সময় আর মনযোগ ছিলনা ছিলনা করোনা ভাইরাস ঠেকানোর দিকে, এই ফাঁকে ঢুকে পড়েছে করোনা, আর যা হবার তাই শুরু হয়ে গেছে। হ্যাঁ, অনুষ্ঠান চলে যাবার পর বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে (যতটুকুই হোক) কিন্তু, দেরি হয়ে গেছে যথেষ্ট। করোনাভাইরাস এর ভেতরেই ঢুকে গেছে, এবং পারমানবিক বোমার চেইন রিঅ্যাকশনের মত এর বিস্তার শুরু হয়ে গেছে সারা দেশে। 

বঙ্গবন্ধু শুধু আমার নন, বাঙ্গালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। বাংলাদেশের মানুষকে তাঁর মত করে কেউ কখনও ভালবাসেনি, কোনদিন ভালবাসতে পারবেওনা। তিনি বেঁচে থাকলে কখনও এমনটা হতে দিতেন না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। শুধু তাঁর নামে অনুষ্ঠান পালনের জন্য পুরো জাতির এত বড় একটা সর্বনাশ করতে দেয়া হয়েছে, এটা যদি তিনি উপর থেকে দেখে থাকেন, আমি নিশ্চিত, তিনি অঝোর নয়নে কেঁদে যাচ্ছেন। আফসোস, সেই কান্নার আওয়াজ আমাদের আর কখনও স্পর্শ করবেনা।

I was literally crying while writing this status. We are so doomed. What have we done!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা