করোনার লক্ষণ দেখা দিলে যে ১০টি কাজ করতেই হবে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ধরুন, আপনার পরিবারের একজন সদস্যর করোনার লক্ষণ (জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা ও শ্বাস কষ্ট) দেখা দিয়েছে। তাকে কোয়ারেন্টাইন কিভাবে করবেন? নিচের লেখাটার প্রতিটা বাক্য মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। একটাও যেন মিস না হয়। কারণ প্রতিটা বাক্যের সাথে সিরিয়াস পাবলিথ হেলথ ইস্যু জড়িত।
১) তাকে যত দ্রুত সম্ভব একটা ঘরের ভেতর আটকে ফেলুন। মানে ঐ ঘর থেকে সে যেন টয়লেট বাদে আর কোন কারণে না বের হতে পারে। সবচে ভালো হয়, এটাচড টয়লেট থাকলে।
২) এরপর IEDCR কে ফোন করে জানান। তারা প্রতিদিন হাজার হাজার কল সামলাচ্ছে, আমার এক বন্ধু তাদের লাইন পেয়েছে আড়াই ঘন্টা পর। এই ডিউরেশনটা প্রতিদিনই বাড়বে। সুতরাং, ৩-৪ ঘন্টার আগে তাদের লাইন পাবেন না, এইটা জেনেই কল করতে থাকবেন।
৩) দিনে তিন বেলা রোগীর ঘরের দরজার সামনে খাবারের ট্রে রেখে চলে যাবেন। সেখানে তার জন্য আলাদা প্লেট, গ্লাস আর চামচ থাকবে। তাকে খাওয়া-দাওয়া দেওয়ার জন্য আলাদা একজন ব্যাক্তি নিযুক্ত করে দিন। ডেডিকেটেডলি সেই এই কাজ করবে। এবং তার সাথে যেন রোগীর মুখোমুখি দেখা না হয়। খাবারের সাথে নাপা ও এন্টিহিস্টামিন টাইপ ওষুধু দিন ও দিনে প্রতিদিন দু বেলা জ্বর মাপুন।
৪) খাওয়ার পর তার প্লেট-গ্লাসগুলো ভিনেগার মেশানো গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যে ধুবে, সে যেন অবশ্যই মাস্ক আর গ্লাভস পড়ে নেয়। ধোবার পরে একটা প্লাষ্টিকের ব্যাগের ভেতর রোগীর ব্যবহৃত বাসনগুলো রেখে দিবেন। চাইলে প্রতিবার খাবার পর ব্যাগ পাল্টাতে পারেন। (সবচে ভালো হয়, আলাদা একটা বিন ব্যাগ রোগীর জন্য বরাদ্দ করতে পারলে।) এরপর গ্লাভস আর মাস্ক খুলে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে ফেলুন। সবচে ভালো হয় রোগী নিজেই এসব ধুয়ে রাখতে পারলে।
৫) রোগী যে ঘরে থাকবে সে ঘরের দরজা-জানালা কিছু খোলার দরকার নাই। দরজা খুলবে, দিনে মাত্র ৩ বার, খাবার নেবার জন্য। এবং সে সময়ে তার আশে পাশে কোন সুস্থ্য লোক (বিশেষ করে বয়স্ক লোক, ডায়াবিটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগী, গর্ভবতী ও শিশুরা) থাকতে পারবে না। তাকে দেখতে হলে ভিডিও কল করুন। এখন প্রায় প্রতিটি চ্যাটিং এপেই ভিডিও কলের সুবিধা আছে। তাকে যদি একান্তই ঘর হতে বের হতে হয়, তবে তাকে মাস্ক আর হাতে গ্লাভস পরিয়ে বের করেন। এর ভেতর টয়লেটে গেলে মাস্ক আর গ্লাভস বদলে ফেলুন। তার আগে হাত ও মুখ হ্যান্ডরাব বা সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে বলুন। পুরনোগুলো একটা প্লাষ্টিকের কাপড়ে না মুড়িয়ে বিনে ফেলবেন না। সবচে ভাল হয় পুড়িয়ে ফেলতে পারলে।
৬) এর ভেতর যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাহলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিভাবে নিতে হবে সেটা IEDCR ই বলে দিবে। এই নেবার সময়টা খুব ক্রুসিয়াল। কারণ নেবার সময়ে যাদের সংস্পর্শে সে আসবে, তারাও আক্রান্ত হতে পারে। এরপর বাসার সবাই আগামী ১৪ দিন বাসার বাইরে যাবেন না। এবং বাসার সকল সদস্যকে কোভিড–১৯ টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করুন। নিজেরসহ প্রতিটা সদস্যের উপর নজর রাখুন, দেখুন যে কারো লক্ষন প্রকাশ হয় কিনা। হলে তাকেও একই ভাবে রুমের ভেতর বন্দী করে ফেলুন।
৭) তাকে হাসপাতালে নেবার পর সে যে রুমে এতদিন ছিলো, সে রুমের প্রতিটি ইন্চি স্যানিটাইজ করুন, ডিসইনফেকটেন্ট স্প্রে করুন। দরজার হাতলসহ। আই রিপিট, প্রতিটি ইন্চি। মানে যতটুকু আপনার পক্ষে সম্ভব আর কি। তার ব্যবহৃত কাপড় চোপড়গুলোর একটা অংশ তো তার সাথে হাসপাতালেই গেছে। বাকী অংশগুলো ব্লিচিং মেশানো গরম পানি দিয়ে সিদ্ধ করে ফেলুন। তারপর রোদে শুকিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাখুন। ধোয়ার আগে কাপড় ঝাড়া দিবেন না। ধোবার সময় গ্লাভস, আর মাস্ক মাস্ট। এরপর গ্লাভস আর মাস্ক খুলে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৮) তার ব্যবহৃত টয়লেটও একই ভাবে গ্লাভস, আর মাস্ক পরে ভালো করে ডেটল/স্যাভলন মেশানো গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টয়লেটের লাইটের সুইচ ও দরজার হাতলসহ। এরপর গ্লাভস আর মাস্ক খুলে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে ফেলুন। গ্লাভস আর মাস্কগুলো যেন ওয়ান-টাইম-ইউজ হয়। মানে সেগুলা একবারের বেশী ব্যবহার করা যাবে না। এরপর সেগুলো পুড়িয়ে ফেলুন বা গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলুন। কারণ Used mask should be considered as potentially infected.
৯) তার ব্যবহৃত ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাউস – সব স্যানিটাইজ করুন। ভাবুন সে কোথায় কোথায় তার হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে, সে জায়গাগুলোতে স্প্রে করুন ভালো করে। ১০ মিনিট পরে টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। ডাক্তারের কাছে ফোন করে পরামর্শ নিন।
১০) করোনা প্রতিরোধে সব জাগায় একই পরামর্শ কিন্তু দেয়া হচ্ছে, খেয়াল করে দেখেছেন? WHO এর মতে, প্রপার হ্যান্ড হাইজিন প্র্যাকটিস করতে বলা হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। হ্যান্ড হাইজিন মানে হলো, হাচিঁ কাশি ও নাক ঝাড়ার পরে হাত সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে ধুয়ে ফেলা, এবং হাত দিয়ে মুখ মন্ডল স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা। যদি করতেই হয়, হাত ধোবার পর করুন। কিছুক্ষন পর পর এইভাবে হাত ধোবার অভ্যেস গড়ে তুলুন। যেন লোকে দেখলেই ভাবে আপনার শুচিবাই আছে। আসলে এই শুচিবাইটাই করোনার হাত থেকে আপনাকে বাচাঁনোর চাবি-কাঠি।
আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাচিঁ বা কাশি দেয়, তবে তার ড্রপলেট তার ৬ ফুট রেডিয়াসের ভেতর কিছুক্ষন উড়ে বেড়ায়, এবং তারপর তা মেঝেতে পড়ে। যেভাবে ডিসইনফেকটেন্ট বানাবেন- ইউটিউবে বেশ কয়েকটা ভালো ভালো টিউটোরিয়াল আছে। মাত্র দেড়-দুই মিনিটের।
আমি সবচেয়ে সহজ যেটা পেয়েছি: ৫ টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার ১ গ্যালন পানির সাথে ভালো করে মেশাবেন। তারপর তা স্প্রে বোতলে ভরে বিভিন্ন সারফেসে স্প্রে করবেন, ৫-১০ মিনিট পর টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। ব্লিচের গন্ধ অনেক কড়া, তাই এটি ব্যবহারের আগে ঘরে পর্যাপ্ত ভ্যানটিলেশন আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। এটি আমেরিকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রনীত নীতিমালা, যেখানে কিভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীতে স্যানিটাইজ করা যাবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে দিক নির্দেশনা দেয়া আছে।