ধুমায় শেয়ার দিচ্ছেন যারা তারা কি বুঝে শুনে শেয়ার দিচ্ছেন? খোলা মাঠের মধ্যে দুই ফুটোওয়ালা একটা গ্লাস বসিয়ে দিলেই করোনাভাইরাসের স্যাম্পল কালেকশন বুথ হয়ে যায়?

জেকেজি হেলথকেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুরু করেছে বুথ বসিয়ে স্যাম্পল কালেকশন। তারা বলেছে তারা কোরিয়ান পদ্ধতিতে টেষ্ট করবে।

যে প্রতিষ্ঠান দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে তাদের কখনো এধরনের অভিজ্ঞতা ছিল না। এর কাজ ছিল , প্রতিষ্ঠাতার নিজের বাড়ীর আশে পাশে / নির্বাচনী এলাকায় রোগী দেখার জন্য এক ডাক্তার বিশিষ্ট হেলথ ক্যাম্প করা। কখনো ভাইরাল স্যাম্পলতো দুরের কথা , মলমুত্র স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষাগারে দেয়ার কোন প্রকল্প এরা করেন নাই। যিনি এই কাজ করবেন তিনি কার্ডিয়াক সার্জন। দেশে এত এত এপিডেমিওলজিস্ট/ ভাইরোলজিস্ট থাকতে তাদের এই কাজে কাউকে সম্পৃক্ত করা হয় নাই।

শুধু তাই না. ডিজি নাকি সেখানে ঝটিকা সফর করেছেন। ১২ এপ্রিলে। তাদের প্রশিক্ষন ক্যাম্প কোথায়? তীতুমীর কলেজে। যাতে ডিজি সাহেব ঝটিকা রাস্তা পার হয়ে সেখানে যেতে পারেন। লকডাউনের মধ্যে তারা কিভাবে কাদের প্রশিক্ষন দিলেন? অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি না দিয়ে এদের অনুমতি কেন দেয়া হলো? যেসব জায়গায় আরটিপিসিআর মেশিন আছে সেখানেও অনুমতি না দিয়ে এদের অনুমতি দেয়ার মানে কি?

এরা এখন ইউটিউবে ভিডিও দিয়ে ভলান্টিয়ার খুঁজছে। তারা স্যাম্পল কালেকশন করবে। কয়েকদিন আগে মীরজাদি ফ্লোরা আপা ব্যাখ্যা করেছেন কেন তারা আরটিপিসিআর ছাড়া কোন টেস্ট করতে দিচ্ছেন না। তিনি এটাও বলেছেন যে বেসরকারী পর্যায়ে কিট আমদানী করে টেস্ট করলে ফলস নেগেটিভ হবে। তাহলে এই কোরিয়ান মডেলে ওয়াক ইন টেস্ট কিভাবে হবে? কোন পদ্ধতিতে?

কোরিয়ান মডেল, বনাম বাংলাদেশী মডেল

ভাইরাল স্যাম্পল কালেকশন কি এত সোজা? যাদের অভিজ্ঞতা নেই তারাও পারবে? ভাইরাল স্যাম্পল কালেকশনের যে গাইডলাইন সেটা মেনে কি তারা স্যাম্পল পরিবহন করবে। কোন যানবাহনে করবে? সেটfর সেফটি গাইডলাইন কি? কোরিয়াতে যে বুথ আর কেরালায় যে বুথ, সেটার সাথে এই ডেকোরটর দিয়ে সামিয়ানা খাটিয়ে বানানো বুথের কোন মিল আছে?

ফেসবুকে এদের ফলোয়ার ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে এখন ২৮৫ জন। করোনাভাইরাস নিয়ে এখনো ডিজি অফিসের রহস্যময় কাজকর্ম বন্ধ হচ্ছে না। মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে তারা ডাক্তারদের সাময়িক বরখাস্তের নাটক বানিয়েছে। মানুষকে ব্যস্ত রেখেছে একদিকে আর অন্যদিকে বিনামূল্যে টেস্ট নাম দিয়ে ভাইরাস ভালো করে ছড়ানোর ব্যবস্থা করেছে।

হলিউড বা বলিউডের কপি করে ঢালিউড সিনেমা বানাতে পারে। কিন্তু কোন দেশের স্বাস্থ্যখাতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্যানডেমিক নিয়ে এরকম ফাজলামো করতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে তারা কোন সাহসে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বরাদ্ধ সরকারি টাকাগুলো এভাবে নষ্ট করে? একদিন ডাক্তার সংগঠন ভূমিষ্ঠ হয়, আরেকদিন এনজিও ভূমিষ্ঠ হয়। প্রথম সারির পত্রিকায় রিপোর্ট করালেই যে আর আজকাল সব হজম করে ফেলা যায় না, এটা কি উনারা এখনো বুঝতে পারছেন না? Walk in sample kiosk কি জিনিস জানতে এই লিংকে ঘুরে আসুন। তারপর কোরিয়া আর কেরালার মডেলের সাথে এই মডেল মিলিয়ে দেখুন। ধুমায় শেয়ার দিচ্ছেন যারা তারা কি বুঝে শুনে শেয়ার দিচ্ছেন? খোলা মাঠের মধ্যে দুই ফুটোওয়ালা একটা গ্লাস বসিয়ে দিলেই করোনাভাইরাসের স্যাম্পল কালেকশন বুথ হয়ে যায়?

আসলে শুধু এই বিষয় না, গত কয়েকমাসে করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট সবকিছুই তারা এরকম ফাজলামো হিসেবে নিয়েছেন। উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে এদের আর আলোর পথে আনা যাবে না। চেয়ার থেকে টেনে হিঁচড়ে নামাতে হবে। এদের চেয়ারে রেখে দেশে করোনাভাইরাসের মহামারি কোনভাবেই ঠেকানো যাবে না।

ডা. আবদুন নূর তুষার এর লেখার সাথে সমন্বয় করে প্রকাশিত। 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা