একজন মানুষ হাসি ফোটাচ্ছেন মিলিয়ন আতংকগ্রস্থ মানুষের মুখে। আমরা হেসে উড়িয়ে দিই এমন গল্পের নায়কদের। জানা হয় না গল্পের আড়ালে থাকা এসব মানুষদের সম্পর্কে।

দেখতে অনেকটা মিস্টার বিনের মতোই তিনি, যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা নাইজেল নিক্সন। বয়স ৫৩ ছুঁয়েছে, তবে শিশুসুলভ আচরনে মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন চীন। জানুয়ারিতে গিয়েছলেন চীনের উহানে নববর্ষ উদযাপন করতে, সেসময় পড়লেন করোনাভাইরাসের মুখে। তখন সিদ্ধান্ত নিলেন আপাতত সেখান থেকে ফিরবেন না। করোনা আতঙ্কে ভয়ার্ত চীনাবাসীর মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব নিলেন। শুরু করলেন মিস্টার বিনের আদলে ‘মিস্টার পি’ নামের একটি মিনি ওয়েব সিরিজ।  

নিজেই ভিডিও করে তৈরি করেন কনটেন্ট। সেখানে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমায় জনসচেতনতা তৈরি চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে চীনে তৈরি হয়েছে তার মিলিয়ন ফলোয়ার। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের চাইনিজ কমেডি শো ‘টপ ফানি কমেডিয়ান’ এর মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। এয়ারলিফট করে ব্রিটিশ নাগরিকদের চীন থেকে ফেরত নিয়ে গেছে সেদেশের সরকার, সেখানে তার সুযোগ ছিলো ফিরে যাওয়ার। ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে রয়ে গেলেন চীনে। এই দূরাবস্থায় মানুষকে স্বস্তি দেয়ার যে গুরুদায়িত্ব তিনি নিলেন, সেটা খুব সাদরেই গ্রহণ করেছেন চীনের বাসিন্দারা।

কাইশু শর্ট ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন তিনি। সেখানে তার রয়েছে সাড়ে ৫ মিলিয়ন ফলোয়ার। তিনি একটি টেডি বিয়ারের সাহায্যে কনটেন্ট তৈরি করে থাকেন, ঠিক তেমনটা মিস্টার বিন করতেন সেভাবেই। এক এপিসোডে দেখা যায়, পুরো বদ্ধ একটি শহরে তার টেডি বিয়ার সময় কাটানোর অন্য গিটার বাজিয়ে গান করছে ‘ইউ আর মাই সানশাইন’, আরেক এপিসোডে দেখানো হয়েছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টেডি বিয়ার কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে। মূলত, হাস্যরসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ এটি।

মিস্টার পি মিনি সিরিজের একটি দৃশ্যে নাইজেল নিক্সন 

এছাড়া চীনের উহানের জন্য চ্যারিটেবল কনটেন্ট তৈরি করেছেন তিনি, যার মাধ্যমে আহবান জানিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। ভয় এর পরিবর্তে স্বস্তি ছড়ানোর মানসিকতার পক্ষপাতী তিনি। ভয়ের পরেই জয়, তাই নয় কি! আমরা দেখেছিলাম কিভাবে বহুতল ভবনের বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে গান গেয়ে নিজেদের মনোবল বৃদ্ধি করেছেন। চাইলে কতভাবেই না নিজেদের উজ্জীবিত করা যায়। আর সেটাই মানুষকে সঙ্কটাবস্থায় এগিয়ে চলতে সাহায্য করে।

এই শুধু একটা ভাইরাসের কারণেই বিশ্ব অর্থনীতি মুখে থুবড়ে পড়বে। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সামনে আরো কঠিন দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এরই মাঝে নাইজেল নিক্সনের মতো মানুষেরা আমাদের আনন্দের খোরাক জুগিয়ে যাচ্ছেন। এটাই বা কম কিসে। একজন মিস্টার বিন, হাসি ফুটিয়ে চলেছেন মিলিয়ন মানুষের মুখে। এভাবেই এগিয়ে চলুক এই দেবদূতেরা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা