‘করোনাভাইরাস’ যুদ্ধে বিজয়ী এক যোদ্ধার গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলাম। এবং এটা আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় আমার অভিজ্ঞতাটি পাবলিকলি শেয়ার করছি। আশা করবো এতে আপনারা তথ্যগুলো জানবেন যা আপনাকে প্রশান্ত করবে।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি, খুব সহজেই আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। আমার ধারণা, নিজ বাসার ঘরোয়া অনুষ্ঠানেই আমি আক্রান্ত হয়েছি যেখানে কেউ হাঁচি-কাশি দিচ্ছিলো না। কাউকে দেখেই মনে হচ্ছিলো না ইতিমধ্যেই কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। গণমাধ্যমগুলো বলছিলো ভালোভাবে হাত ধুতে, পরিস্কার থাকতে, আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না আসতে। আমি সেটাই করেছিলাম। কিন্তু এ ভাইরাস থেকে পুরোপুরি নিরাপদ থাকতে হলে যেকোনো প্রকার মানুষের সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে। এ অনুষ্ঠানে যারা এসেছিলো তন্মোধ্যে ‘৪০%’ তার তিন দিন এর মধ্যেই করোনাভাইরাসের লক্ষণসমূহ নিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।
দ্বিতীয়ত, লক্ষণসমূহ গঠন বা বয়সভেদে ভিন্নভাবে দেখা দিচ্ছিলো। আমার অধিকাংশ বন্ধুদের বয়স ৪০ থেকে ৫০ এর মধ্যেই। আমি নিজে মধ্য ৩০ পার করছি। আমাদের মধ্যে প্রথমে যে লক্ষণ দেখা দিলো সেটা হচ্ছে জ্বর, মাথা এবং পুরো শরীর আর সংযোগস্থলসমূহে ব্যথা। খুব অবসাদ লাগতো। টানা ৩ দিন মাথাব্যথা ছিলো। তারপর থেকে বিরতি দিয়ে ব্যথা হতো। প্রথমে জ্বর ছিলো ১০৩ ডিগ্রী, সেটা কমে ১০০তে আসতো। সর্বনিম্ন ৯৯.৫ ডিগ্রীতে নেমেছিলো। আমাদের মধ্যে কারো কারো ডায়রিয়া হয়েছিলো।
খুব বিশ্রী এক অনুভূতি। জ্বর চলে যাওয়ার পর কারো আবার নাকে রক্তজমাট, গলায় ব্যথা। সবচেয়ে অল্প যেটা ছিলো সেটা হচ্ছে হাঁচি-কাশি। শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাটাও ছিলো হাচি-কাশির জন্যেই। ১০-১৬ দিন স্থায়ী ছিলো এ অসুস্থতা। সমস্যাটা হচ্ছে, হাঁচি-কাশির লক্ষণ ছাড়া কেউ করোনাভাইরাসের টেস্ট করাতে রাজি ছিলো না। সিয়াটেল ফ্লু স্টাডি এর মাধ্যমে টেস্ট করিয়েছিলাম আমি। এটা একটা রিসার্চ সেন্টার যেখানে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্তদের ভলেন্টিয়ার হিসেবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় উক্ত কমিউনিটির জন্য। সপ্তাহ খানেক আগেই তারা কোভিড-১৯ ইনফেকশনের র্যান্ডম টেস্ট চালু করেছে। আমার ইনফেকশন টেস্ট স্যাম্পলটি তারা কিং কাউন্টি পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছিলো পরীক্ষার জন্য। তারা আমাকে জানিয়েছে, যতগুলো ভাইরাস টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে সবগুলোই পাবলিক হেলথ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
মার্চ এর ৯ তারিখের কথা, আমার আক্রান্ত হবার লক্ষণসমূহের ১৩তম দিন, ইতিমধ্যেই জ্বর কমে গিয়েছে ৭২ ঘন্টা হলো। কিং কাউন্টি পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট পরামর্শ দিয়েছে আক্রান্ত বা জ্বর কমে যাবার পর ৭ দিন পর্যন্ত কারো সংস্পর্শে না যাওয়ার। আমি সেটা পার করে আসার পরেও, চেষ্টা করছি জনসমাগম কিংবা কারো সংস্পর্শ এড়িয়ে যাবার। যদি নিজেকে এখন আর গৃহবন্দী করে রাখছি না, তবে পাবলিক প্লেসে সাবধানে চলাফেরা করছি।
যদিও এই ভাইরাসের জন্য আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। তবুও আমি কারো সামনাসামনি সংস্পর্শে যাচ্ছি না। আমার মতো কোভিড-১৯ এর আক্রান্ত সবাইকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে না। আমাকে আলাদা করে ডাক্তারের কাছেও যেতে হয়নি। অন্য সাধারণ সর্দি জ্বরের মতোই এই অসুখ একা একাই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন শরীরটা খারাপ লেগেছে অন্য সাধারণ অসুখের মতোই। আমি বিশ্বাস করি, এই টেস্ট না করানোর প্রবণতা থেকেই মানুষ সাধারণ ভাইরাসের মতোই এটা ছড়াচ্ছে।
আর যাদের মধ্যে কোনো লক্ষণসমূহ নেই তারাই জনসমাগমের মাধ্যমে বেশি ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস। আমি কিছু মানুষকে চিনি যারা মনে করে এই ভাইরাসটি তাদের আক্রমণ করবে না। আশা করছি তারা এমনটা ভাববে না। তবে এই উদাসীনতার জন্য ভাইরাসটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। এমনিতেই সিয়াটেলে এই ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। তবে আমি এখন সুস্থ আছি। এবং চাইবো বাকীরাও যেন সুস্থ সবল থাকে।
একটা ব্যাপারে আমার অটল বিশ্বাস আছে যার কারণে আমার শ্বাসতন্ত্রের কোনো সমস্যা হয়নি, বরং আমি বেঁচে গেছি। সেটা হলো- আমি এফরিন ন্যাজাল স্প্রে ব্যবহার করেছিলাম। প্রতিদিন তিন স্প্রে করে প্রতি নাসারন্ধ্রে, তারপর তিন দিন বিরতি দিয়ে আবার। সাথে নেটি পট ব্যবহার করেছি বিশুদ্ধ পানি দিয়ে। এটা খুব সম্ভবত আমার শ্বাসতন্ত্র পরিস্কার রেখেছে যার কারণে আমার ফুসফুস আক্রান্ত হয়নি। এটা কোনো চিকিৎসার উপদেশ নয়। আমি সহজভাবে আমার অভিজ্ঞতা বর্ননা করছি এবং চেষ্টা করছি কীভাবে আমি বেঁচে আছি সেটা খুঁজে বের করার। এর সাথে হয়তো চিকিৎসার কোনো সম্পর্ক নেই।
আশা করবো আমার এই অভিজ্ঞতা আপনাদের কাজে লাগবে। এই ভাইরাসের প্রতি উদাসীন না হয়ে, একটু সতর্ক থাকবেন আপনারা সবাই। আবার টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত না হয়ে আতঙ্ক ছড়াবেন না। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ভয়ঙ্কর কিছু হবার সম্ভাবনা নেই যদি খুব বেশি দেরী না করে ফেলেন। লক্ষণসমূহ দেখা দিলে নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে যত্ন নিন। শুধু হাত ধুলেই যে এই ভাইরাস আক্রমণ করবে না এমনটা ভাবা ঠিক না। যাদের ভেতরে কোনো লক্ষণ নেই তাদের মাধ্যমেই আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। হতে পারে আপনার আশেপাশের কোনো মানুষ দ্বারাই। আপনি হয়তো মরবেন না, তবে একজন ষাটোর্ধ ব্যক্তি বা যে কেউ যার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরকে কেন ঝুঁকিতে ফেলবেন? সুস্থ থাকুন।
(করোনাভাইরাস সার্ভাইভার এলিজাবেথ স্নাইডার এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সরাসরি অনুবাদকৃত)