রিজেন্টের ঘটনায় কেন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিবের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নেয়া হচ্ছে না?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ইচ্ছেয় হোক কিংবা বাধ্য হয়ে, অসৎ-দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এই দেশে প্রায় সব সরকারই কম-বেশি ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু অসৎ ও দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
এই যে রিজেন্ট আর শাহেদ করিমের বিরুদ্ধে আমরা চিল্লাচ্ছি, এই ঘটনায় জড়িত আমলাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? আচ্ছা এই দেশে কী সৎ সরকারি কর্মকর্তাদের পুরুষ্কৃত করা ও অসৎদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়? নাকি অসৎদের দাপটে সৎ কর্মকর্তারা আরও অসহায় হয়ে থাকেন?
কথাগুলো বলছি কারণ, প্রথম আলোর আজকের খবর বলছে, রিজেন্ট হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন সেখানে নিযুক্ত সরকারের দুই চিকিৎসক। কিন্তু সচিব সাহেব কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এই দুই চিকিৎসকের একজনকে অন্য হাসপাতালে বদলি করে দেন।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়ার আরও দেড় মাস আগে গত ১৫ মে রিজেন্টের অব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবকে চিঠি পাঠান সরকার থেকে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক শরীফ সাম্মিরুল আলম। পরদিনই তাঁকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়। ওই দিনই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) চিকিৎসক আশরাফুল আলম। ২৩ মে তিনিও অব্যবস্থাপনার কথা জানিয়ে সচিবকে চিঠি পাঠান। কিন্তু সচিব সাহেব কোন ব্যবস্থা নেননি!
আপনারা নিশ্চয়ই গত কয়েকদিন গণমাধ্যমে দেখেছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হয়েছে এমন বক্তব্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তার কাছে শোকজ চাইলে তিনি এর ব্যাখায় বলেছেন, সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশেই রিজেন্টকে বাছাই করা হয়।
কয়েকদিন আগে বাংলা ট্রিবিউন তাদের খবরে জানায়, সচিবের নির্দেশেই যে এটা হয়েছে সে সংক্রান্ত সব কাগজপত্রও তারা পেয়েছে। শুধু তাই নয়, কোটি কোটি টাকার দামী জিনিষপত্র দেয়া হয়েছিল রিজেন্টকে। এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
রাষ্ট্রের কাছে জানতে চাই, এদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে সেই দুর্নীতির দায় কী ডাক্তারদের নাকি আমলাতন্ত্রের? কী করে স্বাস্থ্য দপ্তরের কেরানিদের হাজার হাজার কোটি টাকা থাকে? যদি কেরানীদের কোটি কোটি টাকা থাকে তাহলে উপরে যারা বসে আছেন তাদের কতো কোটি টাকা? এই অসৎ আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? সব সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চয়ই অসৎ নন। অনেক ভালো মানুষও আছেন। এখন যদি অসৎ আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে সৎ সরকারি কর্মকর্তারা কোন সাহসে কাজ করবেন? আর এই দেশের প্রশাসনযন্ত্রে সৎ যোগ্য কর্মকর্তাটি কী তার মতো লড়াই করতে পারেন নাকি অসৎদের দাপটে তাকে সবসময় তটস্থ থাকতে হয়।
রিজেন্ট হাসপাতালের ঘটনায় তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিবের বক্তব্য জানতে চাই। রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নিল সেটাও জানতে চাই। শুধু বদলি করা মানে তো দুর্ণীতি থেকে রেহাই দেয়া। অথচ অসৎ রাজনীতিবিদের পাশাপাশি অসৎ ব্যবসায়ী ও অসৎ আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কোনদিনও দুর্নীতি দূর হবে না। কাজেই প্রশাসনযন্ত্রে সৎ কর্মকর্তাদের পুরুস্কারের পাশাপাশি অসৎদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চাই।