আর নেই ভয়, গোমূত্র আর গরুর গোবরে হবে করোনাভাইরাস জয়!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
‘গরুর মূত্র ও গোবর গ্রহণ করলে করোনাভাইরাসের প্রভাব বন্ধ হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি 'ওঁম নমঃ শিবা' বলবে এবং গরুর গোবর গায়ে মাখবে সে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবেন।'
কিছুদিন আগে ভারতে বিজেপির সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর দাবী করেছিলেন, গরুর মুত্র পান করে নাকি তার ক্যান্সার সেরে গিয়েছিল। আরও বলেছিলেন, গরুর পিঠের ওপর লম্বালম্বি হাত বোলালে নাকি হাই-প্রেশার কমে যায়, তিনি নিজে এই চিকিৎসায় ফল পেয়েছেন! ভারতে কিছু মানুষের কাছে এখন গরুর মুত্র হচ্ছে সর্বরোগের ঔষধ, মানুষের চেয়ে সেখানে গরুর দাম বেশি। কাজেই প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কারেও গরুর অবদান থাকবে, তাতে আর অবাক হবার কী আছে!
ভারতের হিন্দু মহাসভার প্রধান স্বামী চক্রপাণি মহারাজ বলেছেন, ‘গরুর মূত্র ও গোবর গ্রহণ করলে করোনাভাইরাসের প্রভাব বন্ধ হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি 'ওঁম নমঃ শিবা' বলবে এবং গরুর গোবর গায়ে মাখবে সে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবেন। করোনা ভাইরাস মারতে শিগগিরই বিশেষ যজ্ঞ করা হবে।’
খবরটা শুনে বিজেপির পেইড সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর মতো করে বলতে ইচ্ছে হলো- মতলব কুছ ভি? 'ওঁম নমঃ শিবা' বলে গায়ে গোবর মেখে গরুর মুত খেয়ে ফেললে করোনাভাইরাস সেরে যাবে? ছাগলামির তো একটা লিমিট থাকে। ধর্মের নাম করে এসব পাগুলে প্রলাপ বকে যাচ্ছে কিছু গণ্ডমুর্খের দল, ছাগলা টাইপের জনগন সেসব শুনছে দেদারসে, কেউ কেউ তো মেনেও চলছে।
আজ থেকেই দেখবেন উত্তরপ্রদেশ, বেনারসের মতো জায়গাগুলোতে গায়ে গোবর মেখে গোমূত্র পান করার হিড়িক পড়ে যাবে। হিন্দু মহাসভার প্রধান যেহেতু বলেছেন, সেহেতু এই কাজ তো করতেই হবে! করোনাভাইরাস যদি মানুষ হতো, আর জানতে পারতো যে তাকে মোকাবেলার জন্যে গরুর গোবর আর গোমূত্র দিয়ে প্রতিষেধক বানানো হচ্ছে, তাহলে লজ্জায়, ক্ষোভে, অপমানে ভাইরাসগুলো নিজেরাই দলে দলে আত্মহত্যা করতো বোধহয়!
চীনে এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াইশো মানুষ মারা গেছেন এই ভাইরাসের আক্রমণে, বিশ্বজুড়ে দশ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের বাইরেও ইউরোপ, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে, চীন মাত্র এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার জন্যে বিশেষ একটা হাসপাতালই বানিয়ে ফেলেছে। চীনে বিভিন্ন দেশের আটকে পড়া ছাত্র বা পর্যটকদের নেয়ার জন্যে বিমান পাঠানো হচ্ছে, চারপাশে আতঙ্কিত একটা অবস্থা।
আর এরইমধ্যে হিন্দু মহাসভার প্রধান স্বামী চক্রপাণি মহারাজ ফাজলামি শুরু করেছেন। কট্টর হিন্দুত্ববাদের নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এমনিতেই সুনাম আছে এই প্রতিষ্ঠানের। এরা এখন তাদের ব্রক্ষ্মাস্ত্র গরুর গোবর আর গোমুত্রকে নিয়ে ভাইরাসের পেছনে লেগেছে। গরুর গোবরের যদি এতই মাহাত্ম্য থাকে, তাহলে এই মুর্খটার সারা গায়ে গোবর মাখিয়ে পাঁচ লিটারের একটা বোতলে গোমূত্র ভর্তি করে তাকে চীনের উহান শহরে ফেলে আসা হোক। তারপর দেখা যাবে কত গোমুত্রে কত এন্টিবায়োটিক।
দেশে এন্টার্কটিক হুজুর, আর ভারতে এই হিন্দু মহাসভা- এদের দেয়া বিনোদনের কারণে আজকাল স্ট্যান্ডআপ কমেডিতেও হাসি আসে না একদম...